Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র হচ্ছে কচ্ছপগতিতে

প্রিন্ট সংস্করণ॥মো. হাসান আরিফ

ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০১৯, ০৫:৫৪ এএম


কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র হচ্ছে কচ্ছপগতিতে

সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত তালিকায় রয়েছে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন। এজন্য আগ্রহী কোম্পানিগুলোকে বিশেষ সুবিধা দেয়া হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারের টানা দুই মেয়াদ শেষে তৃতীয় মেয়াদ শুরু হলেও উৎপাদনে আসেনি কোনো কেন্দ্র। নতুন মেয়াদে তাই কয়লাভিত্তিক বৃহৎ প্রকল্পগুলোর গতি বাড়াতে চায় বিদ্যুৎ বিভাগ। বর্তমানে নির্মাণাধীন কয়লাভিত্তিক তিন বৃহৎ কেন্দ্রের মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে থাকা পায়রার প্রথম ইউনিট চলতি বছরের আগস্টে চালুর কথা। তুলনামূলক পিছিয়ে আছে আলোচিত রামপাল ও মাতারবাড়ির কাজ। তবে বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, সরকারের নতুন মেয়াদে গতি আসবে সব প্রকল্পেই। পাশাপাশি পায়রা, মাতারবাড়ি ও মহেশখালী হাবে আরও কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ শুরু হবে।বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানিয়েছেন, সরকারের চলতি মেয়াদেই জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে পায়রা, রামপাল ও মাতারবাড়ির বিদ্যুৎ। তার মতে, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে যত দ্রুত আমরা বড় প্রকল্পে যেতে পারবো, বিদুুতের ক্ষেত্রে তত সুবিধাজনক অবস্থায় আমরা পৌঁছাতে পারবো। ২০২২ সালের মধ্যে বড় কিছু প্রকল্প চলে আসবে। সাশ্রয়ী মূল্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিতে গত ১০ বছরে বৃহৎ বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে অনেক আশা জাগানিয়া পরিকল্পনা থাকলেও বাস্তব চিত্র ভিন্ন। বাস্তবতা হচ্ছে, এখন পর্যন্ত উৎপাদনে আসেনি কয়লাভিত্তিক বড় কোনো বিদ্যুৎকেন্দ্র। যে কারণে চাহিদা মেটাতে দিন দিন ঝুঁকতে হয়েছে বেশি উৎপাদন ব্যয়ের তেলভিত্তিক কুইক রেন্টাল আর রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রে। তুলনামূলক কম খরচে টেকসই বিদ্যুৎ উৎপাদনে সরকারের মহাপরিকল্পনায় প্রাথমিক জ্বালানি হিসেবে গুরুত্ব দেয়া হয় কয়লার ওপর। সে অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারির মধ্যে ঢাকা, চট্টগ্রাম, বরিশাল, খুলনা ও মুন্সিগঞ্জে প্রায় পাঁচ হাজার মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা নেয়া হয় বর্তমান সরকারের প্রথম মেয়াদেই। পরিকল্পনা মতো এগোতে পারলে এতদিনে ৩০ শতাংশের মতো বিদ্যুৎ আসতো সাশ্রয়ী এ জ্বালানি থেকে। কিন্তু সেসব পরিকল্পনা কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ থাকায় বর্তমানে কয়লা থেকে বিদ্যুৎ আসছে মাত্র ৩ শতাংশ। যার জোগান দিচ্ছে এক যুগেরও বেশি সময় আগে নির্মিত বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র।সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারের তৃতীয় মেয়াদের চলতি বছর থেকে কয়লাভিত্তিক বড় বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো উৎপাদনে যাওয়া শুরু করলে তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ওপর থেকে নির্ভরতা কমে আসবে। আর কাজের গতি বাড়ানোর পাশাপাশি কয়লা আমদানির অবকাঠামোর দিকেও বিশেষ গুরুত্ব দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। একই সঙ্গে দেখতে হবে কয়লা কোথা থেকে কিনতে হবে। সেটাকে নিয়ে আসা এবং এখানে নিরাপদভাবে মজুদ রাখা। এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি তা হলো কয়লা এখানে মজুদ রাখার বিষয়টি। পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, পায়রায় বড় হাব হবে ৫ থেকে ৬ হাজার মেগাওয়াটের। মাতারবাড়িতে হবে ৪ থেকে ৫ হাজার মেগাওয়াটের। আর মহেশখালীতে ১০ হাজার মেগাওয়াটের হাব হবে। গত বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদ ভবনে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে উত্থাপিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র ছাড়া বেশির ভাগ প্রকল্পের বাস্তবায়ন অগ্রগতি হতাশাজনক। রামপাল প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এটি চলতি বছর উৎপাদনে আসার কথা রয়েছে। এছাড়া বরগুনার প্রকল্পটির বাস্তবায়ন অগ্রগতি ২২ শতাংশ। এটি উৎপাদনে যাবে ২০২২ সালে। আর মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্রের অগ্রগতি ১৮ শতাংশ। সে সময়ের সংসদীয় কমিটির সভাপতি তাজুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, কমিটির বৈঠকে কয়লাভিত্তিক প্রকল্পগুলোর কাজ দ্রুত শেষ করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছিল। প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন কাজে মনিটরিং জোরদার করতেও বলা হয়েছিল। তিনি বলেন, বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে কয়লা উত্তোলন বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলনের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কথা বলা হয়। কমিটি এ বিষয়ে কোনো মতামত দেয়নি। এ ক্ষেত্রে জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশগত প্রভাবের বিষয়টি বিবেচনায় সিদ্ধান্ত গ্রহণের পরামর্শ দেয়া হয়েছিল। কমিটির বৈঠকে উত্থাপিত প্রতিবেদনে কয়লা উত্তোলন বাড়ানোর পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে বলা হয়, বড়পুকুরিয়া কয়লাখনিতে ৩৯০ মিলিয়ন টন কয়লা মজুদ রয়েছে। প্রচলিত পদ্ধতিতে ১০ মিলিয়ন টন কয়লা তোলা যাবে। এর মধ্যে খনির সেন্ট্রাল মাইনিং এলাকা থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ৩ দশমিক ২০৫ মিলিয়ন টন কয়লা তোলা যাবে। তবে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে খনন করা হলে ওই খনি থেকে ২৩৬ মিলিয়ন টন কয়লা তোলা সম্ভব। এ জন্য কয়লাখনির সেন্ট্রাল মাইনিং এলাকাবহির্ভূত উত্তরাংশে দেড় বর্গকিলোমিটার এবং দক্ষিণাংশে তিন বর্গকিলোমিটার মজুদ এলাকা থেকে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলনের মাধ্যমে চাহিদা পূরণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।