Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪,

নতুন পরিকল্পনায় বদলে যাবে পুরান ঢাকা

প্রিন্ট সংস্করণ॥এনায়েত উল্লাহ

ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০১৯, ০৬:০১ এএম


নতুন পরিকল্পনায় বদলে যাবে পুরান ঢাকা

পুরান ঢাকার ঘিঞ্জি এলাকাকে আধুনিকায়ন করতে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে। ঘিঞ্জি এলাকাকে কেন্দ্র করে কিছুদিন পরপরই ঘটছে ছোট বড় অনেক ঘটনা। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে আগুন লাগার মতো মর্মান্তিক ঘটনা। আর সে ঘটনায় ক্ষতি হচ্ছে কোটি কোটি টাকা। সাথে ঝরছে তরতাজা প্রাণ। এসব দুর্ঘটনা থেকে পুরান ঢাকাকে বাঁচাতে পুনঃপরিকল্পনার উদ্যোগ নিয়েছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া চকবাজার ট্র্যাজেডিতে বহুপ্রাণ ঝরেছে। এর পূর্বেও ২০১০ সালে নিমতলীতে ঘটে যাওয়া ট্র্যাজেডিতে প্রাণ হারিয়েছিল ১২৪ জনের মতো। পুরান ঢাকায় দুর্ঘটনায় যেন আর কোনো মানুষের প্রাণ না ঝরে সেদিকে লক্ষ্য রেখেই এ পুনঃপরিকল্পনা করা হচ্ছে। পরিকল্পনাটি তৈরি করতে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (রাজউক)। গতকাল গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের নিজ দপ্তরে বসে আমার সংবাদকে এসব পরিকল্পনার কথা বলেন গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী শ.ম. রেজাউল করিম এমপি। তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যেই রাজউককে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে পরিকল্পনা তৈরি করতে। মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রীও এ পরিকল্পনার উদ্যোগ নিয়েছিলেন এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি মেয়রকে নিয়ে পুরান ঢাকার মালিকদের সাথে বৈঠকও করেছিলেন। তিনি সেই প্রকল্পটাকেই পুনরায় নতুন করে সাজানোর নির্দেশনা দিয়েছেন রাজউককে। নতুন এই পরিকল্পনায় এক কাঠা, দুই কাঠার মতো ছোট ছোট জমি যাদের রয়েছে তাদের সাথে কথা বলে সে জায়গাগুলোকে একত্রিত করে একটি বড় জায়গা করে বহুতল ভবন তৈরি করা হবে। সেখানে বড় রাস্তাসহ আধুনিক সব ব্যবস্থা থাকবে। সেখানে গড়ে উঠবে আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসংবলিত বহুতল ভবন। সরু গলি, অপরিকল্পিত ও জরাজীর্ণ সব অবকাঠামো ভেঙে সেখানে গড়ে তোলা হবে প্রশস্ত রাস্তা, উন্মুক্ত স্থানযুক্ত বাসস্থান। জমির মালিকদের অধিকার অক্ষুণ্ন রেখে তাদের মতামতের ভিত্তিতেই এ পরিকল্পনা করা হবে বলেও মন্ত্রী জানান। রাজউক সূত্রে জানা যায়, সিঙ্গাপুর, চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও মালয়েশিয়ার অনেক ঘিঞ্জি এলাকা এখন উন্নত শহরে পরিণত হয়েছে। সেই একই পদ্ধতিতে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) তত্ত্বাবধানে ও সহযোগিতায় বিধিমালা তৈরি করা হচ্ছে। ল্যান্ড-রি-ডেভেলপমেন্ট বা ভূমির পুনঃউন্নয়ন বিধিমালা নামে আগামী তিন মাসের মধ্যেই তা মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়ার কথা রয়েছে। এ পদ্ধতিতে বিশ্বের অনেক ঘিঞ্জি শহর আধুনিকায়ন হয়েছে। সুতরাং আমাদের দেশেও আর পিছিয়ে থাকবে না। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ল্যান্ড-রি-ডেভেলপমেন্টের মাধ্যমে সিঙ্গাপুরের অনেক ঘিঞ্জি বা ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা এখন চেনাই যায় না। সেই পদ্ধতি বা কাছাকাছি মডেল অনুসরণ করে বদলে গেছে বিশ্বের অনেক ঘিঞ্জি শহর। সে বিষয়টি মাথায় রেখে রাজধানীর পুরান ঢাকাসহ অনেক অপরিকল্পিত অংশের চিত্র বদলে দিতে চায় সরকার। রাজউক এ সংক্রান্ত বিধিমালাও প্রণয়ন করবে বলে জানা গেছে। পুরান ঢাকায় পরীক্ষামূলক প্রকল্প বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু করতে চায় রাজউক। এরই মধ্যে পুরান ঢাকাবাসীর সঙ্গে একাধিকবার মতবিনিময় করে রাজউক একটি ধারণাপত্রও তৈরি করেছিল গত সরকারের আমলে। সে পরিকল্পনাকেই ঢেলে সাজাতে নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রণালয়। ল্যান্ড রি-ডেভেলপমেন্টের খসড়া বিধিমালায় অ্যাডভাইজার প্যানেল, ব্যবস্থাপনা কমিটি, জমির মূল্যায়ন কমিটি, ভূমির পুনঃউন্নয়ন বা রি-ডেভেলপমেন্টের ধাপসমূহ সম্পর্কে উল্লেখ থাকার কথা রয়েছে। এছাড়া জমি মালিকদের সঙ্গে চুক্তিপত্র এবং প্রকল্প সম্পন্নের পর ব্যবস্থাপনাসহ সবই বিস্তারিত থাকবে। কমিটিগুলোতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, বিশেষজ্ঞ ও দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাসমূহের প্রতিনিধিদের রাখার কথা বলা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন এ পদ্ধতির মাধ্যমে পৃথিবীর অনেক ঘিঞ্জি শহরকে আধুনিক ও বাসযোগ্য শহরে রূপান্তরিত করা সম্ভব হয়েছে। পুরান ঢাকার ঘিঞ্জি পরিবেশ দূর করতে এ ফর্মুলা বাস্তবায়নে রাজউককে জনগণের আস্থা অর্জন করতে হবে। ল্যান্ড রি-ডেভেলপমেন্ট বিধিমালা প্রণয়ন বিষয়ে রাজউক চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান আমার সংবাদকে বলেন, মন্ত্রী আমাদের নির্দেশনা দিয়েছেন পরিকল্পনা করতে। আমরা সেটা আগামী এক মাসের মধ্যেই মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়ার চেষ্টা করব। যদি সম্ভব না হয় তাহলে সর্বোচ্চ তিন মাসের মধ্যেই এটা জমা দেব। রাজউক সূত্রে জানা যায়, ল্যান্ড রি-ডেভেলপমেন্টের ধারণা বাংলাদেশের জন্য নতুন। এ ধারণা বাস্তবায়ন করে সিঙ্গাপুর, জাপানসহ পৃথিবীর অনেক দেশ সুফল পেয়েছে। এ ফর্মুলার সবচেয়ে বড় সুবিধা হল, এজন্য জমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন হয় না। আর পরিকল্পনা প্রণয়ন থেকে বাস্তবায়ন পর্যন্ত প্রতিটি পর্যায়ে ভূমির মালিক ও স্থানীয় ব্যক্তিদের মতামতের ভিত্তিতে কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। রাজউক বলছে, সংশোধিত ড্যাপেও (২০১৬-২০৩৫) ল্যান্ড রি-ডেভেলপমেন্টের ধারণা বাস্তবায়নের গাইড লাইন থাকছে। সেখানে বলা হয়েছে, বড় এলাকায় এ ফর্মুলা বাস্তবায়ন করলে নাগরিক সুবিধা বেশি পাওয়া যাবে। তবে সর্বনিম্ন এক একর জায়গার ওপরও এ ফর্মুলা বাস্তবায়ন করা সম্ভব। সেক্ষত্রে নির্মাণ বিধিমালা অনুসরণ করার পরও পর্যাপ্ত উন্মুক্ত জায়গা বের হবে। সুউচ্চ ভবন তৈরি করে জমির মালিকদের সুবিধা নিশ্চিত করা হবে।