Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

মৃত্যুপুরীতে রাজনৈতিক নেতাদের ভূমিকা কী

প্রিন্ট সংস্করণ॥আবদুর রহিম

ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০১৯, ০৬:৪৭ পিএম


মৃত্যুপুরীতে রাজনৈতিক নেতাদের ভূমিকা কী

*রক্তস্রোতেও তদন্ত আর গণতন্ত্রের পুরনো রাজনৈতিক চর্চা অব্যাহত আ.লীগ-বিএনপির!
*তখনো ডাকসু নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, বাম ও অন্য ছাত্রসংগঠন
*ইসলামি দলগুলোও নীরব! রক্ত দিয়ে, পানি নিয়ে আমজনতাই এগিয়ে আসে

এটাই বাংলাদেশ! অব্যাহত অর্জন, অন্যদিকে রক্তস্রোত ও পোড়া গন্ধ। বিধ্বস্ত-বিপর্যস্ত সব মুহূর্তে যারা পাশে থাকার কথা, তারা কেউ থাকেন না, থাকেন শাসিতরা! অথচ এই বাংলাদেশের রাজনীতি ও চলন আদর্শ নিয়ে স্বপ্ন দেখে আমাদের বন্ধু দেশ ভারত, চীন, রাশিয়া, জাপান ও মিয়ানমার! নিমতলী থেকে তাজরীন ফ্যাশন, রানাপ্লাজা, ওখান থেকে চকবাজার, রক্তনদী, দেহ পোড়া গন্ধেও কেন পাশে ছিলেন না আমাদের রাজনীতিবিদরা? সঙ্ঘবদ্ধ এ দলগুলো তখন কী করে? অথচ দেখা যায়, এ দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অবরোধ-হরতালের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বের প্রভাবশালী সব গণমাধ্যমে গুরুত্বের সঙ্গে স্থান পায় বাংলাদেশ পরিস্থিতি। কিন্তু মানবিক-মানবতায় নেতারা কেন শৈল্পিক পরিচয়ের পরিবর্তে কেমিক্যালের ভূমিকায় থাকেন? তাদের গুণচিত্র কেন গণমাধ্যমে নেই? এ দেশে শতশত রাজনৈতিক দল, হাজার হাজার কর্মী, ডজন ডজন কমিটি, দেশের অলি-গলিতে, প্রত্যেক স্থানে রাজনৈতিক প্রভাব, এত কর্মী, এত নেতা, ঝড় নির্মমতায় কী করেন? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে দৈনিক আমার সংবাদ... যে বাংলাদেশের রাজনীতিতে তুষ্ট হয়ে সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজিনা বলেছিলেন, বাংলাদেশ হবে এশিয়ার পরবর্তী মালয়েশিয়া! এও বলেছিলেন, বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষই রাজনৈতিক আদর্শের অনুসরণে। কিন্তু এ দেশের মানুষ রাজনীতিতে ছক্কা হাঁকালেও মানবিক মৃত্যুপুরীতে এমন নিষ্ক্রিয় ভূমিকায় সাধারণ মানুষ ও তারুণ্যর আস্থা অর্জন করতে পারবে কি-না এটাই এখন সচেতন মহলেন প্রশ্ন ও সমালোচনা চলছে...
২০১০ সালের ৩ জুনের কথা অনেকেরই মনে আছে। সেদিন অগ্নিকা-ে জীবন থেমে গেছে ১২৪ জন মানুষের। বিভীষিকাময় ঘটনা ঘটেছে আমাদের প্রিয় রাজধানীর পুরোনো অংশে। নিমতলীর ঘটনার ৯ বছর পর ফের চকবাজারের ঘটনা! প্রাণ গেল ৬৯ জনের। এ ছাড়াও আরো একটি ঘটনা বলতে হয় সাভারের রানা প্লাজা ধসের কথা। যেখানে এক হাজার ১৩০ জনের মৃত্যু ঘটে। তাজরীন ফ্যাশনসহ রোহিঙ্গা মানবতার বিষয়টিও আনা যায়। এসব ঘটনায় মুহূর্তেই অর্থ নিয়ে , রক্ত দিয়ে, পানি নিয়ে, সশরীরে সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসতে দেখা গেছে কলেজ-ইউনিভার্সিটির সাধারণ শিক্ষার্থী, ক্ষতিগ্রস্ত স্থানের আশপাশের সাধারণ মানুষদের। কিন্তু দেশের প্রভাবশালী রাজনৈতিক ও ছাত্রসংঠনগুলোকে দেখা গেছে নীরব ভূমিকায়! আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ, বিএনপি-ছাত্রদল, বামপন্থি ও ইসলামী দলগুলোও ছিল দর্শকের ভূমিকায়। দলীয় কর্মীদের কাউকেই এ নিয়ে মানবতার মাঠে সাহায্যর হাত বাড়াতে দেখা যায়নি। দল থেকে কর্মীদের ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে থাকার জন্য নির্দেশ দিতে দেখা যায়নি। অথচ এই দলগুলোর সাংগঠনিক অবস্থানে দেশের অলি-গলিতে রয়েছে শতশত কমিটি। একটি নেতার ডাকেই কানায় কানায় ভরে যায় রাজধানীর সবচেয়ে বড় মাঠটি,নেতাকর্মীদের অবস্থানে অবরুদ্ধ হয়ে যায় মহাসড়ক! খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চকবাজারের ঘটনায় বেদনায় নিদ্রাহীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অত্যন্ত সুন্দর নির্দেশনায় ঘটনার ভয়ানক পরিস্থিতি ভালোভাবেই মোকাবিলা করছিলেন প্রশাসনের মাধ্যমে। তবুও ব্যপক প্রয়োজন ছিল স্বেচ্ছাসেবকের। দরকার ছিল রাজনৈতিক নেতার নির্দেশনা। যাতে কর্মীরা দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে থাকেন। কিন্তু এমন ভূমিকা বাংলাদেশের মানবতার মাঠে একবারো দেখা যায়নি। কি আওয়ামী লীগ, কী বিএনপি! এমন মুহূর্তেও সবাই সবার রাজনৈতিক আদর্শ প্রচার করেছেন। এবার চকবাজারের ঘটনায়ও তার ব্যতিক্রম ঘটতে দেখা যায়নি। রক্তস্রোতেও তদন্ত আর গণতন্ত্রের পুরনো রাজনৈতিকচর্চা অব্যাহত রেখেছে আওয়ামী-লীগ বিএনপি!ক্ষমতাসীন দল দায় না নিয়ে তার আদর্শ বাস্তবায়ন করেছে। তদন্তের কথা বলছে, না জেনেই বেফাঁস মন্তব্য করেছে আর বিএনপি পোড়া গন্ধেও গণতন্ত্রের বুলি ছুড়েছে! অন্যদিকে ডাকসু নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত ছিল ছাত্রলীগ, ছাত্রদল ও অন্য ছাত্রসংঠনগুলো। ইসলামী দলগুলোকে দেখা গেছে সস্তা ভূমিকায়! বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) এর প্রধান নির্বাহী, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এ নিয়ে বলেছেন, চকবাজারের ভয়াবহ অগ্নিকা-ে হতাহতের ঘটনা নির্বাক করে দিয়েছে আমাদের। এত মানুষের মৃত্যু! এ দায় কাউকে না কাউকে নিতে হবে। ব্যর্থতার জন্য পদ থেকে সরে দাঁড়াতে হবে সংশ্লিষ্টদের। আমাদের দেশে দায়িত্বে থাকাদের টনক নড়ে না কোনো কিছুতেই। এ বিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষক রুহিন হোসেন প্রিন্স দৈনিক আমার সংবাদকে বলেন, বাংলাদেশের দুটি রাজনৈতিক দল সবসময় দোষারোপের রাজনীতি করে। এটা বাংলাদেশে চলতি গণতন্ত্রের দৃষ্টান্ত। এদের কাছে মানবতা প্রধান নয়, এর জন্যই প্রভাবশালী এ দুটি রাজনৈতিক দল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে মানুষ। তবে সচেতন মানুষ আস্থা রাখতে চান। আমাদের উচিত এ সমস্ত মানবতার জায়গায় সব মানুষকে এক সঙ্গে রেখে একটা আস্থা ও সমাধানের দৃষ্টান্ত স্থাপন করা।মানবতার এমন পরিস্থিতে রাজনৈতিক নেতাদের মন্তব্য চরম নিষ্ঠুর পরিহাস বলেও মন্তব্য করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ। তিনি গতকাল আমার সংবাদকে বলেন, চকবাজারে অগ্নিগ্রাসের ঘটনায় রাজনৈতিক দলের নেতাদের মন্তব্য একটা চরম নিষ্ঠুর পরিহাস। এ ধরনের দায়িত্বজ্ঞানহীন ভাষা নষ্ট রাজনীতির অতি বড় উদাহরণ। এর ফলে রাজনীতির প্রতি মানুষ আরো বীতশ্রদ্ধ হবে।