Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪,

মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে চলাচল

প্রিন্ট সংস্করণ॥বেলাল হোসেন

ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০১৯, ০৬:২২ পিএম


মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে চলাচল

*মানহীন ও মেয়াদোত্তীর্ণ সিলিন্ডারে গ্যাস ভরে ছুটছে গাড়ি
*পুনঃপরীক্ষা হয়েছে মাত্র ২০ শতাংশ যানবাহনের

রাজধানীতে স্বল্পআয়ের খেটে খাওয়া মানুষদের প্রতিদিন যাতায়াতের একমাত্র অবলম্বন গণপরিবহন। বিশেষ করে ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকায় সিএনজিচালিত লেগুনাই একমাত্র ভরসা। তবে এসব যানবাহনের অবস্থা এখন ভয়ঙ্কর। প্রতিনিয়ত যেন মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন নগরবাসী। সিএনজিচালিত বেশির ভাগ গণপরিবহনেরই সিলিন্ডার ঝুঁকিপূর্ণ বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত। সারাদেশে সিএনজিচালিত যানবাহন দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে। তবে পুরনো সিলিন্ডারেই চলছে এসব পরিবহন। এক সমীক্ষায় উঠে এসেছে ঢাকার বেশির ভাগ গাড়িই এখন সিএনজিচালিত। মানহীন ও মেয়াদোত্তীর্ণ সিলিন্ডারে গ্যাস ভরে ছুটছে এসব গাড়ি। নিম্নমানের সিলিন্ডার ও কিটস ব্যবহার, পাঁচ বছর পরপর পুনঃপরীক্ষা না করাসহ বিভিন্ন কারণে সিলিন্ডার এখন ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করেছে। সিএনজি সিলিন্ডারে প্রতি বর্গইঞ্চিতে ৩২ শ’ পাউন্ড চাপে গ্যাস ভরা হয়, ওই সময় গাড়ি ভয়াবহ বোমা হয়ে বিস্ফোরণের মতো বিপদ সৃষ্টি করতে পারে। এ আশঙ্কা রোধে গ্যাস সিলিন্ডারের সঠিক মান রক্ষা করা জরুরি। বাধ্যবাধকতা থাকলেও ৮০ শতাংশ সিএনজিচালিত গাড়ির পাঁচ বছরের বেশি পুরনো সিলিন্ডার পুনঃপরীক্ষায় কেউ উদ্যোগ হচ্ছেন না। এ প্রতিবেদকের সাথে কথা হয় গুলিস্থান থেকে নিউমার্কেটের দিকে ছেড়ে যাওয়া লেগুনাচালক রুবেলের সাথে। তাকে সিলিন্ডার রিটেস্টের কথা বললে সে প্রথমে বুঝে ওঠেনি। পরে পুনঃপরীক্ষার কথা ভালোভাবে বুঝিয়ে দিলে সে বলে, ‘তিন বছর হলো এই গাড়ি চালইতেছি, কোনো সমস্যা মনে হয়নি। তবে সিলিন্ডার দেখে মনে হলো অনেক পুরনো’ সে নিজেও শিকার করে। কথা বলার ফাঁকে সাংবাদিক পরিচয় জানার পর রুবেল বলে, ‘আজই মালিককে সিলিন্ডার পরীক্ষা করানোর কথা বলব’। এরকম রুবেলের মতো হাজারো যানবাহনের চালক আছে, যারা পাঁচ বছর পর সিলিন্ডার পুনঃপরীক্ষা করতে হয় তা জানে না। আবার অনেক চালক এবং মালিক আছেন উদাসীনতায় গণপরিবহনের সিলিন্ডার সময়মতো পরীক্ষা করান না। এর ফলে নগরবাসী এখন প্রতিনিয়ত মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন। বিস্ফোরক অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সিএনজিচালিত যানবাহনের নিরাপত্তায় আন্তর্জাতিক মান নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রতিটি গ্যাস সিলিন্ডার পাঁচ বছর পরপর পুনঃপরীক্ষার বিধান রয়েছে। তবে মাত্র ২০ শতাংশ যানবাহনের সিলিন্ডার পুনঃপরীক্ষার আওতায় রয়েছে। বাকিগুলোর পুনঃপরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়া যায় না। রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের (আরপিজিসিএল) হিসাব অনুযায়ী, সারা দেশে প্রায় পাঁচ লাখ সিএনজিচালিত যানবাহন রয়েছে। এর মধ্যে একই সিলিন্ডার পাঁচ বছরের বেশি সময় ব্যবহার করা গাড়ির সংখ্যা অর্ধেকের বেশি। যা পুনঃপরীক্ষা ছাড়াই চলছে সড়ক-মহাসড়কে। চলতি বছরের প্রথম দিকে সিএনজি (রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস) সিলিন্ডার বিস্ফোরণে যাত্রীবোঝাই দুটি গণপরিবহনে আগুন ধরে যায়। এতে করে বাস দুটি পুরোপুরি পুড়ে গেলেও ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান যাত্রীরা।সূত্র জানায়, সারা দেশে পুনঃপরীক্ষা কেন্দ্র রয়েছে মাত্র ১৩ থেকে ১৪টি। বিআরটিএ থেকে ফিটনেস নেয়ার সময় যদি রিটেস্ট বা পুনঃপরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয় তাহলে কমবে ঝুঁকি, বাঁচবে জীবন। বিআরটিএর হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত সারা দেশে নিবন্ধিত যানবাহনের সংখ্যা সাড়ে ৩৮ লাখ। এর মধ্যে ঢাকায় চলছে ১৩ লাখ ৮৪ হাজার ১৯২টি। যার বড় একটি অংশ সিএনজিচালিত। কিন্তু এর সঠিক কোনো পরিসংখ্যান তাদের কাছে নেই। ঢাকাসহ সারা দেশে যানবাহনের একটি বড় অংশই সিএনজিচালিত। কিন্তু সিলিন্ডারের ফিটনেস পাঁচ বছর পরপর পরীক্ষার নিয়ম থাকলেও তা করা হচ্ছে না। সম্প্রতি জ্বালানি বিভাগের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সারা দেশে চার লাখ গ্যাস সিলিন্ডারের মধ্যে মাত্র ৫৩ হাজার ৮০০ সিলিন্ডারের পুনঃপরীক্ষা করা হয়েছে। যা মোট সিলিন্ডারের মাত্র ১৪ ভাগ। সারা দেশে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ১৮০ সিএনজি কনভার্শন ওয়ার্কশপ রয়েছে। দেশে গত ১৫ বছর ধরে সিএনজিচালিত গাড়ির প্রচলন শুরু হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান বিস্ফোরক পরিদর্শক মো: সামসুল আলম আমার সংবাদকে বলেন, সিএনজি চালিত যানবাহনগুলোর ঝুঁকি এড়াতে ৫ বছর পর পর সিলিন্ডার রিটেস্ট করা প্রয়োজন। আমরা বিআরটিএর সাথে যানবাহনের সিলিন্ডার বিষয়ে একটা বৈঠক করেছি। এ নিয়ে দ্রুত কাজ শুরু হবে। যানবাহনের সিলিন্ডার রিটেস্ট এর বিষয়ে সামসুল আলম বলেন, এটা বিআরটিএর কাজ। ট্রাফিক সার্জেন্ট সিলিন্ডার ফিটনেসের কাজ করতে পারে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিআরটিএর সাথে আলোচনা করতে পারে এদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেভাবে গাড়ির ফিটনেস আছে কি-না দেখার জন্য ট্রাফিক সার্জেন্টরা গাড়ি দাঁড় করিয়ে বিভিন্ন কাগজপত্র দেখেন, ঠিক একইভাবে সরকারের উচিত বিশেষ আইনের মাধ্যমে প্রত্যেকটা সিএনজিচালিত গাড়ির সিলিন্ডার টেস্টের কাগজ ঠিক আছে কি-না তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার। যদি না করা হয়, তাহলে ওই গাড়ির মালিকদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। এতে করে বেঁচে যাবে হাজারো প্রাণ, হাজারো পরিবার।