Amar Sangbad
ঢাকা মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪,

পুঁজিবাজারে আসছেই না বহুজাতিক কোম্পানিগুলো

প্রিন্ট সংস্করণ॥আসাদুজ্জামান আজম

মার্চ ৯, ২০১৯, ০৭:৩৭ পিএম


পুঁজিবাজারে আসছেই না বহুজাতিক কোম্পানিগুলো

সময়ে সময়ে উদ্যোগ নেওয়া হলেও কার্যত বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে আনতে পারেনি সরকার। অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআর আর বিএসইসির মধ্যে চিঠি চালাচালিতেই সীমাবদ্ধ উদ্যোগ। কার্যকরের দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই। তথ্য মতে, বর্তমানে বহুজাতিক ও জয়েন্ট ভেঞ্চার মিলে প্রায় ১৭টি কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত। এগুলোর মধ্যে- বাটা সু, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো (বিএটি), বার্জার পেইন্টস, ফুয়াং ফুড, ফুয়াং সিরামিক, গ্লাক্সোস্মিথক্লাইন, গ্রামীণফোন, হাইডেলবার্গ সিমেন্ট, লাফার্জ সুরমা সিমেন্ট, লিন্ডে বিডি, ম্যারিকো বাংলাদেশ, রেকিট বেনকিজার। কোম্পানিগুলো তালিকাভুক্ত হয়ে ১০ শতাংশ কর অবকাশ সুবিধা পায়। সর্বশেষ ২০০৯ সালে মোবাইল ফোন অপারেটর কোম্পানি গ্রামীণফোন তালিকাভুক্ত হওয়ার পর দেশের পুঁজিবাজারে আর কোনো বহুজাতিক কোম্পানি তালিকাভুক্ত হয়নি। দীর্ঘ সময় ধরে বহুজাতিক কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে একচেটিয়া ব্যবসা করছে। কিন্তু বারবার উদ্যোগ নিলেও কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করা যায়নি। অথচ ঐসব কোম্পানি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, থাইল্যান্ড ও অন্যান্য দেশে তালিকাভুক্ত। পুঁজিবাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, দীর্ঘ সময় ধরে বাংলাদেশের পুঁজিবাজার নানা সমস্যার মধ্যে রয়েছে। অর্থনৈতিক খাতের অন্যতম জোগানদাতা হওয়ার সুযোগ থাকলেও কার্যকর উদ্যোগের কারণে বাজারটি ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না। বর্তমানে বিদেশি কোম্পানির বাজার মূলধন ৩০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। কোম্পানিগুলো বাজারে আনা হলে বাজারটা অনেক আগেই ঘুরে দাঁড়াতো।সূত্র মতে, বিদেশি কোম্পানিকে পুিঁজবাজারে আনতে সরকারের চিন্তাভাবনা চলছে অনেকদিন ধরেই। অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে চেষ্টা করা হলেও কোম্পানি, ইস্যু ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি ও রেগুলেটর প্রতিষ্ঠানগুলোর কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না। মূলত বাংলাদেশি বাজারে ব্যবসা করে অর্জিত লভ্যাংশের অর্থ বাংলাদেশি ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের দিতে অনীহা কোম্পানিগুলোর। লভ্যাংশের বড় অংশই নিজ দেশে নিয়ে যাচ্ছে। দেশের সাধারণ মানুষ এসব মুনাফার কোনো ভাগই পাচ্ছে না। রেগুলেটর প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি সিন্ডিকেটের যোগসাজশে বছরের পর বছর পার করছে। বিশ্লেষকরা মনে করেন- পুঁজিবাজার অমিত সম্ভাবনাময় খাত। কিছু সংস্কারের মাধ্যমে সরকার এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ক্ষেত্রে পুঁজিবাজারকে কাজে লাগাতে পারে। বহুজাতিক কোম্পানিগুলো আনা গেলে এখানে বড় ভূমিকা রাখবে। কিন্তু এক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো ও ইস্যু ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সদিচ্ছা জরুরি।অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র মতে, ২০১৬ সালের ২০ নভেম্বর বহুজাতিক কোম্পানিকে কীভাবে বাজারে তালিকাভুক্ত করা যায়, সে জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে বিস্তারিত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। দুই মাসেও প্রতিবেদন না আসায় ২০১৭ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি আরও একদফা অগ্রগতি জানতে চাওয়া হয়। কিন্তু তারপরও কোনো জবাব আসেনি। এরপর একই বছরের ১ আগস্ট বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে আনতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, কেন্দ্রীয় ব্যাংক, নিয়ন্ত্রক সংস্থা, কোম্পানি, এনবিআর, বাংলাদেশ ব্যাংক, ডিএসই ও সিএসইকে আবারো সুস্পষ্ট সুপারিশসহ বিস্তারিত প্রতিবেদন দিতে নির্দেশনা দেয়া হয়। একইসঙ্গে আগামী ৭ দিনের মধ্যে এ বিষয়ে মতামত দিতে বলা হয়েছে। কিন্তু ১৯ মাস পেরিয়ে গেলেও অধিকাংশ প্রতিবেদন আসেনি অর্থ মন্ত্রণালয়ে। মন্ত্রণালয়ে পুঁজিবাজারসংশ্লিষ্ট বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, বহুজাতিক কোম্পানি বাজারে আনার কোনো উদ্যোগই কাজে আসেনি। বিগত সময়ে মন্ত্রীর তাগাদায় কয়েক দফা চিঠি চালাচালি হলেও আর এগোয়নি। বছর দেড়েক ধরে এ বিষয়ে কোনো নতুন নির্দেশনাও আসেনি।বাংলাদেশ সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সাইফুর রহমান দৈনিক আমার সংবাদকে বলেন, বহুজাতিক কোম্পানিকে বাজারে আনতে রেগুলেটর হিসেবে সব ধরনের পলিসি সাপোর্ট আমরা দিতে প্রস্তুত। সব ধরনের বাধা দূর করে রেখেছি। এখন তারা আসতে না চাইলে আমরা কিছু করতে পারি না। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. নাসির উদ্দিন দৈনিক আমার সংবাদকে বলেন, বহুজাতিক কোম্পানি বাজারে আনার উদ্যোগের সর্বশেষ অবস্থাটা এ মুহূর্তে বলা মুশকিল, ফাইলপত্র দেখতে হবে। দু-একটি প্রতিষ্ঠান প্রতিবেদন দিয়েছিল। কিন্তু অধিকাংশই দেয়নি। যে কারণে বিষয়টি আর এগোয়নি বলেই আমি জানি।