Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অমান্য

প্রিন্ট সংস্করণ॥নুর মোহাম্মদ মিঠু

মার্চ ৯, ২০১৯, ০৭:৪৫ পিএম


মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অমান্য

দেশের প্রথম মহিলা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সেন্ট্রাল উইমেন্স কলেজ। ২০১৭ সালের শেষের দিকে কলেজটিতে লিয়েনে অধ্যক্ষ পদে ঢাকা কলেজের শিক্ষক ইফতেকার আলীকে নিয়োগ দেওয়া হয়। অথচ লিয়েনে নিয়োগের বিধি উপেক্ষা করেই অবৈধভাবে তৎকালীন গভর্নিং বডির সঙ্গে আঁতাত করে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে এ অধ্যক্ষ। অস্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষে দায়িত্ব বুঝে পাওয়ার পরপরই কলেজটির গভর্নিং বডির সদস্যদের সঙ্গে আঁতাত করে সিন্ডিকেট তৈরি করে গড়ে তোলে অনিয়ম-দুর্নীতির দুর্গ। এমন অভিযোগ তদন্তে নেমে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) কর্মকর্তারাও অনিয়ম দুর্নীতির একাধিক অভিযোগের সত্যতা পায়। নানা কৌশলে সে তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণের আগেই তা মাউশির বন্দি ফাইলের আওতায় আনতেও সক্ষম হয় ইফতেকার। ইফতেকারের তদবিরে এ সংক্রান্তে দীর্ঘদিন নীরব ভূমিকাও পালন করে মাউশিসহ শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কিন্তু গত ১৯ ফেব্রুয়ারি কলেজটিতে ছাত্রীদের কমনরুম ও শহীদ মিনারের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে গিয়ে সরেজমিন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ শুনতে পান বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী ডা. দিপু মনি।ওই অনুষ্ঠানেই শিক্ষামন্ত্রী অধ্যক্ষ ইফতেকার আলীর ওপর ক্ষিপ্ত হন বলে জানা গেছে এবং পরবর্তীতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশও দিয়েছেন।শিক্ষামন্ত্রীর এমন নির্দেশে মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিভাগ ইফতেকার আলীর লিয়েন বাতিল করে সেন্ট্রাল উইমেন্স কলেজ থেকে বদলিপূর্বক মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পদে পদায়ন করে। অথচ মন্ত্রণালয়ের এমন সিদ্ধান্তে তুষ্ট হতে না পেরে ইফতেকার সিন্ডিকেটের অন্য সদস্যরা (গভর্নিং বডি) ক্ষিপ্ত হয়ে ছাত্রীদের দিয়ে কলেজটিতে ঘোলাটে পরিবশে সৃষ্টি করে ইফতেকারকে ফিরিয়ে আনার পাঁয়তারা করে। গুটিকয়েক ছাত্রী দিয়ে রাজধানীর বিভিন্নস্থানে ইফতেকার আলীকে স্বপদে বহালের দাবিতে মিছিলও করায়। শুধুতাই নয়- এও শোনা গেছে ছাত্রীদের ফেল করানোসহ বিভিন্ন ধরনের হুমকির মুখে রেখেই আন্দোলন করাতে বাধ্য করে। এসব নিয়ে ছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তারা হুমকির ভয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হয়নি। তবে মীমু খান নামে মিছিলের নেতৃত্বে থাকা এক ছাত্রীর সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হলেও মিছিল নামক নাটকীয়তা ও হুমকির বিষয়েও কথা বলতে রাজি হননি তিনি।এদিকে অধ্যক্ষ ইফতেকারকে পুনরায় অধ্যক্ষ হিসেবে পেতে এবং অনিয়মের চাকা চালু রাখতে থেমে নেই ইফতেকার সিন্ডিকেটের সদস্যরা। ছাত্রীদের দিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপি প্রদান করিয়ে তাদের অধ্যক্ষকে ফিরিয়ে এনে কলেজ ও সংশ্লিষ্ট ফান্ড লুটেপুটে খাওয়ার পাঁয়তারা করছে বলেও প্রতিষ্ঠান ও প্রতিষ্ঠানের বাইরের আলোচনায় শোনা যাচ্ছে। এদিকে, ইফতেকারকে বদলির ঘটনায় কলেজের পরিবেশ এতাটাই ঘোলাটে করে তুলেছে সিন্ডিকেটের সদস্যরা- যেখানে শিক্ষক ও ছাত্রীর মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় থাকবে সেখানে ছাত্রীদের দিয়েই কলেজের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট থানায় জিডি করাচ্ছে। ওয়ারী থানার ওসি আজিজুর রহমানও এ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে বলেন, এটা তিনি সমাধান করে দেবেন। তবে ইফতেকার নাটকের শেষ হলেও শেষ হয়নি গভর্নিং বডি নিয়ে সৃষ্ট জটিলতার। ইফতেকারের বিরুদ্ধে দাপ্তরিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলেও মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করেই কলেজটির অনিয়ম-দুর্নীতির রাঘব বোয়ালদের এখনো রাখা হয়েছে বহাল তবিয়তে। শিক্ষামন্ত্রীর নির্দেশের পর ইফতেকারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলেও কেন গভর্নিং বডির বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের (মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিভাগের বেসরকারি কলেজ-৬ শাখা) সিদ্ধান্ত মানা হচ্ছে না- এ নিয়ে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্নের। কলেজটিতে বর্তমান গভর্নিং বডি ভেঙে দিয়ে নতুন গভর্নিং বডি গঠনের নির্দেশ দিলেও মন্ত্রণালয়ের এ নির্দেশ উপেক্ষা করেই এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছে সভাপতি ও বিদ্যোৎসাহী ব্যতীত বাকি সদস্যরা। যদিও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ইস্যুকৃত গভর্নিং বডি বাতিলের চিঠির প্রেক্ষিতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শক মনিরুজ্জামান গভর্নিং বডির সভাপতি ও বিদ্যোৎসাহী সদস্য পরিবর্তন করে ঘাপটি মেরে বসে আছেন রহস্যজনক কারণে। মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করার বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শক (ভারপ্রাপ্ত) মনিরুজ্জামান শাহীন বলেন, সংশোধন সংবিধি-২০১৫-র ১০ নং ধারার প্রদত্ত ক্ষমতাবলে গভর্নিং বডির বর্তমান সভাপতি অধ্যাপক ড. এম নুরুল ইসলাম এবং বিদ্যোৎসাহী সদস্য অধ্যাপক ড. পারভীন হাসানকে পরিবর্তন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস বিভাগের অধ্যাপক খন্দকার বজলুল হককে সভাপতি ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কাজী সাইফুদ্দীনকে বিদ্যোৎসাহী সদস্য হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ ছিল পুরো গভর্নিং বডি ভেঙে নতুন করে গঠন করার। সেই সিদ্ধান্ত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কেন উপেক্ষা করছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ধারা অনুযায়ী সভাপতি ও বিদ্যোৎসাহী সদস্য পরিবর্তনের ক্ষমতা থাকলেও গভর্নিং বডির অন্য সদস্যদের পরিবর্তন করতে কিছু আইনি জটিলতা রয়েছে। যে কারণে তাদের সদস্যপদ বাতিলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কিছুই করতে পারছে না। তবে ওইসব সদস্যের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে সদস্যপদ বাতিল করা যেতে পারে বলেও জানান তিনি। এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দিপু মনির বক্তব্য জানতে বারবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।