Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

কার্গোবহরকে শক্তিশালী করার উদ্যোগ বিআইডব্লিউটিসির

নিজস্ব প্রতিবেদক

সেপ্টেম্বর ১২, ২০২১, ০৫:২০ পিএম


কার্গোবহরকে শক্তিশালী করার উদ্যোগ বিআইডব্লিউটিসির

স্বায়ত্তশাসিত সেবাধর্মী বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্পোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি)। স্বাধীনতা যুদ্ধের পর দেশের সড়ক ও রেল যোগাযোগ বিধ্বস্ত হয়ে পড়ায় নৌপথের মাধ্যমে দেশের সার্বিক যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থা অক্ষুণ্ন রাখতে তৎকালীন শিপিং কর্পোরেশনসহ অন্য ৯টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে একীভূত করার মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠা লাভ করে বিআইডব্লিউটিসি।

প্রতিষ্ঠার পর থেকেই অভ্যন্তরীণ ও উপকূলীয় নৌরুটে নিরাপদ, পরিবেশবান্ধব, সাশ্রয়ী যাত্রী ও পণ্য পরিবহন এবং যানবাহন পারাপারের রূপকল্প আর নৌপথে যাত্রীবাহী জাহাজ ও পণ্যবাহী জলযান পরিচালনার মাধ্যমে দেশের মূল ভূখণ্ড ও দীপাঞ্চলের মধ্যে নিরাপদ যাত্রী ও মালামাল পরিবহন এবং নিরবচ্ছিন্ন সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা রক্ষায় দক্ষ ফেরি সার্ভিস পরিচালনায় নিরলস কাজ করে যাচ্ছে বিআইডব্লিউটিসি।

এরই ধারাবাহিকতায় গত জুলাই মাসেও শিমুলিয়া-বাংলাবাজার-শিমুলিয়া রুটে দুটি নতুন ফেরি যুক্ত হয়। এর আগে সেখানে চলাচল করতো ১৫টি ফেরি। বর্তমানে ১৭টি ফেরির মাধ্যমে ওই রুটে যানবাহন ও যাত্রী পারাপার আরও সহজ হবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

ফেরি দুটির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ বলেন, গত ১২ বছরে নৌপথের অর্জন অবিস্মরণীয়। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এ অর্জন সম্ভব হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর আজন্ম স্বপ্ন সোনার বাংলা বিনির্মাণে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সবাই ঐক্যবদ্ধ। ওইদিনই বিআইডব্লিউটিসি ফেরি দুটি সংগ্রহ করে, প্রতিটি ফেরির নির্মাণ মূল্য ১০ কোটি ৭১ লাখ ২১ হাজার ৬০০ টাকা। প্রতিটি ফেরির দৈর্ঘ্য ৪২.৭০ মিটার, প্রস্থ ১২.২০ মিটার, ড্রাফটস ১.৪০ মিটার, সার্ভিস স্পিড ঘণ্টায় ১০ নটিক্যাল মাইল। প্রতিটি ফেরি ২৫ টন ওজনের ১২টি ট্রাক এবং ১০০ জন যাত্রী বহন করতে পারবে বলে জানায় সংশ্লিষ্টরা।

নতুন দুটিসহ বর্তমানে বিআইডব্লিউটিসির ১৪টি রো রো, ২১টি মিডিয়াম, ছয়টি ডাম্ব, ১১টি ইউটিলিটি ও একটি ছোট ফেরিসহ মোট ৫৩টি ফেরি রয়েছে। এছাড়া ১৯টি পন্টুন ও ১০টি টাগ রয়েছে।নতুন যুক্ত হওয়া ফেরিগুলো পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া, আরিচা-কাজিরহাট-আরিচা, শিমুলিয়া-বাংলাবাজার-শিমুলিয়া, চাঁদপুর-শরীয়তপুর-চাঁদপুর, ভোলা-লক্ষ্মীপুর-ভোলা, লাহারহাট-ভেদুরিয়া-লাহারহাট রুটে চলাচল করে।

পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া রুটে ১০টি রো রো, ছয়টি  ইউটিলিটি ও দুটি মিডিয়াম ফেরি চলাচল করে। চাঁদপুর-শরীয়তপুর রুটে ছয়টি মিডিয়াম, ভোলা-লক্ষ্মীপুর রুটে চারটি মিডিয়াম, আরিচা-কাজিরহাট রুটে তিনটি মিডিয়াম এবং লাহারহাট-ভেদুরিয়া রুটে পাঁচটি ইউটিলিটি ফেরি চলাচল করে।   

সংশ্লিষ্টরা জানান, সড়ক ও রেল পরিবহন ব্যবস্থার তুলনায় দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিস্তৃত নৌপথ। নদীমাতৃক দেশ হওয়ায় যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে বাংলাদেশের জনসাধারণের কাছে নদীপথ সবচেয়ে সহজ, জনপ্রিয় ও গ্রহণযোগ্য মাধ্যম। ১৯৭২ সালে রাষ্ট্রপতির ২৮নং অধ্যাদেশ বলে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্পোরেশন এবং ৯টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ মোট ১০টি প্রতিষ্ঠানের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি ও নৌযান একীভূত করে গঠন করা হয় বিআইডব্লিউটিসি। প্রতিষ্ঠালগ্নে বিআইডব্লিউটিসির মোট জলযানের সংখ্যা ছিলো ৬০৮টি। এ সবই ছিলো উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া।

অধিকাংশ জলযানই বয়সের ভারে ছিলো ন্যূব্জ। ফলে ৬০৮টি জলযান বহরে থাকলেও বিআইডব্লিউটিসি সে সময় জলযান সার্ভিস পরিচালনায় নিয়োজিত করতে পারেনি। এ অবস্থায় বিআইডব্লিউটিসি জলযান বহরের উন্নয়নে পুরান জলযান পুনর্বাসন এবং নতুন জলযান সংগ্রহে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়।

এরমধ্যে আটটি সি ট্রাক, দুটি অয়েল ট্যাংকার, তিনটি ক্রুজ ভেসেলে, তিনটি আধুনিক অভ্যন্তরীণ যাত্রীবাহী জাহাজ, চারটি আধুনিক উপকূলীয় যাত্রীবাহী জাহাজ, দুটি ফায়ার ফাইটিং কাম-স্যালভেজ টাগ এবং আটটি পন্টুনসহ মোট ৩০টি নৌযান নির্মাণের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে।

এসব নৌযানের নির্মাণকাজ ২০২৩ সালের জুন নাগাদ সম্পন্ন হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া নতুন ফ্লোটিং ডক সংগ্রহ এবং বন্ধ থাকা ডকইয়ার্ড নং-৪ চালুকরণের পরিকল্পনাও রয়েছে। নতুন ফেরি রুটের জন্য রেকার ও ওয়েব্রিজ সংগ্রহ ও স্থাপন, অন্যান্য ফেরিঘাটে যানবাহন পারাপারে অটোমেশন পদ্ধতির প্রবর্তন ইত্যাদিও বিআইডব্লিউটিসির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

এছাড়াও কোস্টার, ট্যাংকার, টাগ, এলপিজি-এলএনজি পরিবহন উপযোগী নৌযান এবং কন্টেইনারবাহী নৌযান নির্মাণপূর্বক কার্গো বহরকে শক্তিশালী করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। জাহাজ মেরামত ও পুনর্বাসন কার্যক্রমে সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ডকইয়ার্ড-১ ও ২ এ দুটি স্লিপওয়ে নির্মাণের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

পাশাপাশি রাজস্ব আয় বৃদ্ধিকল্পে চট্টগ্রাম-১ ও ২নং টার্মিনালে জেটি ও অবকাঠামো উন্নয়নের প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং খুলনা অঞ্চলে আয়বর্ধক কার্যক্রম সম্প্রসারণের পরিকল্পনাও রয়েছে। অভ্যন্তরীণ ও উপকূলীয় রুটে যাত্রী পরিবহনে হোভার ক্রাফট নিয়োজিত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে বলেও জানা গেছে। সংস্থাটির স্থাবর সম্পত্তির উন্নয়নসহ নারায়ণগঞ্জ ও খুলনায় তিনটি লাইটারিং জেটি নির্মাণ ও ফ্লোটিং ডকে অফিস বিল্ডিং, ডকইয়ার্ড-১ এ ডরমিটরি এবং লক্ষ্মীপুরে ওয়ার্কশপ তৈরির পরিকল্পনাও রয়েছে বলে জানা গেছে।