Amar Sangbad
ঢাকা মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪,

পর্যটন খাতে অশনি সংকেত

ডিসেম্বর ২৩, ২০২১, ০৬:৩৫ পিএম


পর্যটন খাতে অশনি সংকেত

কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে সপরিবারে বেড়াতে গিয়ে দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন এক নারী পর্যটক। গত বুধবার রাতে র্যাবের একটি দল কলাতলী এলাকার একটি রিসোর্ট থেকে ওই নারীকে উদ্ধারের কথা জানায়। 

এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে র‌্যাব-১৫ কক্সবাজারের সিপিসি কমান্ডার মেজর মেহেদী হাসান বলেন, ওই নারীকে উদ্ধারের পর কক্সবাজার সদর মডেল থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। 

কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি শেখ মুনীর উল গিয়াস বলেন, ওই নারীকে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি করা হয়েছে। সেখানে তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা চলছে। লিখিত অভিযোগ পেলে মামলা হবে। যদিও ইতোমধ্যে গণমাধ্যমসহ সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়েছে এ ঘটনা। 

প্রশ্ন উঠেছে— কক্সবাজারে পর্যটকদের নিরাপত্তা বিষয়ে। এ ছাড়াও দলবদ্ধ ধর্ষণের এ ঘটনায় দেশের পর্যটন খাতের ওপরও বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সংশ্লিষ্টরা এও বলছেন, এ ঘটনা দেশের পর্যটন খাতের জন্য অশনি সংকেত। 

ধর্ষণের শিকার নারীর স্বামী জানান, বুধবার সকালে ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে স্ত্রী ও আট মাসের সন্তানকে নিয়ে তিনি কক্সবাজার বেড়াতে আসেন। বিকেলে স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে সৈকতের লাবণী পয়েন্টে ঘুরতে যান। বালুচর দিয়ে হেঁটে পানির দিকে নামার সময় এক যুবকের সাথে তার ধাক্কা লাগে। 

এ নিয়ে কথা-কাটাকাটি হয়। এর জের ধরে সন্ধ্যায় তার স্ত্রীকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে তুলে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। একটি ঝুপড়ি চায়ের দোকানে নিয়ে তিনজন তার স্ত্রীকে ধর্ষণ করে। তারপর একটি রিসোর্টে নিয়ে স্ত্রীকে আটকে রেখে আবারো ধর্ষণ করা হয়। পরে দুর্বৃত্তরা কক্ষের দরজা বাইরে থেকে লক করে চলে যায়। এসব ঘটনা যেন কাউকে না জানানো হয়, সে নিয়ে ভয়ভীতিও দেখানো হয়। 

ভুক্তোভোগী নারী জানান, এক ব্যক্তির সহায়তায় তিনি দরজার লক খোলেন। তখন তিনি জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ কল দেন। সেখান থেকে বলা হয় থানায় গিয়ে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করার জন্য। তারপর এক ব্যক্তির সহযোগিতা তিনি কল দেন র‌্যাব-১৫-তে। র‌্যাব ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাকে উদ্ধার করে। 

এদিকে সংঘবদ্ধ ‘ধর্ষণের শিকার’ নারীর অভিযোগ, জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ ফোন করে সহায়তা চাইলেও তাৎক্ষণিক এগিয়ে আসেনি পুলিশ। পরে তিনি অভিযোগটি র্যাবকে জানান। 

কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) রফিকুল ইসলাম বলেন, কারও অবহেলা থাকলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মেজর মেহেদী হাসান বলেন, ‘খবর পেয়ে স্বামী-সন্তান ও গৃহবধূকে উদ্ধার করা হয়। তার পর থেকে ছায়াতদন্ত শুরু করেছি। এখন পর্যন্ত তিনজনের মধ্যে দুজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের ধরতে অভিযান চালানো হচ্ছে।’ অভিযানের অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে জিয়া গেস্ট ইন হোটেলের ম্যানেজার রিয়াজ উদ্দিন ছোটনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। 

কক্সবাজার সদর মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) বিপুল চন্দ্র দে বলেন, ‘ঘটনার খবর পেয়ে অভিযুক্তদের ধরতে মাঠে নেমেছে পুলিশের একটি দল। এরই মধ্যে ঘটনায় জড়িত দুই জনকে শনাক্ত করা হয়েছে।’ 

সৈকত ভ্রমণে আসা পর্যটকদের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, ‘একজন নারী পর্যটক ধর্ষণের শিকার হয়েছেন বলে শুনেছি। থানায় মামলা হলে তদন্ত করে অপরাধীকে ধরার চেষ্টা করব।’ 

এর আগে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে কক্সবাজারে বেড়াতে এসে এক অস্ট্রেলিয়ান তরুণীও ধর্ষণচেষ্টার শিকার হয়েছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছিল। ওই তরুণী যে রিসোর্টে উঠেছিলেন সে রিসোর্টের কক্ষেই দুই ব্যক্তি জোরপূর্বক ঢুকে তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে ওই নারী চিৎকার দিলে দুই ব্যক্তিই পালিয়ে যায়। 

পরে ওই নারী ৯৯৯-এ ফোন দিয়ে পুলিশের সহযোগিতা চাইলে তাৎক্ষণিকভাবেই পুলিশ সেখানে গিয়ে তাকে উদ্ধার করে ও পরে তার চাহিদা অনুযায়ী হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করে। এরপর বিষয়টি অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশন পর্যন্ত গড়ায়। 

এ ঘটনায় সে সময় রিসোর্টের নাইটগার্ড ও তার এক বন্ধুকে আটকের পর মামলাও হয়। ওই ঘটনার পরও কক্সবাজারে পর্যটকদের মধ্যে তেমন কোনো প্রভাব না পড়লেও এবারের ঘটনায় ঠিকই নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। 

উল্লেখ্য, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও ২০১৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে একটি এনজিওর স্বেচ্ছাসেবী হয়ে ভারতে আসা আয়ারল্যান্ডের এক নারীকে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনার পর থেকে ভারতে বিদেশি মহিলা পর্যটকদের সংখ্যা কমে যায়। ভারতীয় বণিক গোষ্ঠী অ্যাসোচ্যামের এক রিপোর্টে পরের বছর ধরা পড়েছে, বিদেশিনী পর্যটকদের ভারতে আসা প্রায় ২৫ শতাংশ কমে যায়। 

এর আগেও ভারতের রাজধানী দিল্লিতে এক বিদেশিনীকে ধর্ষণ করা হয়। সমীক্ষা বলছে, যতবার ভারতে এমন ঘটনা ঘটেছে, তার নেতিবাচক প্রভাব সরাসরি পর্যটন শিল্পে পড়েছে। ২০১৪ সালেও দিল্লিতে ৫১ বছর বয়সি ডেনমার্কের এক নারী পর্যটন ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন।