Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪,

সাগরের উসাইন বোল্ট আরিফুর রহমান

ডিসেম্বর ১, ২০২০, ১০:০০ এএম


সাগরের উসাইন বোল্ট আরিফুর রহমান

বঙ্গোপসাগরের বাংলা চ্যানেল সাঁতরে পাড়ি দেয়া সব সাতারুর কাছেই স্বপ্নের মত। অনেক বার বার চেষ্টা করেও হতে পারেননি সফল। সাগরের মাঝপথে থামিয়ে দিতে হয়েছে সাতার। আবার লবনাক্ত পানির সাথে যুক্ত করে টিকে থাকতে না পেরে সাগরের মাঝেই বমি করে ক্লান্ত হয়েছেন এই সংখ্যাও কম নয়। কিন্তু সবার ব্যতিক্রম আরিফুর রহমান বেলাল। প্রথম বার অংশগ্রহণ করেই বাংলাদেশে সবচেয়ে অ্যাডভেঞ্চার বাংলা চ্যানেলের ১৬.১ কিলোমিটার পারি দিয়েছেন ৪ ঘণ্টা ৭মিনিটে। দেশ ও দেশের বাইরে থেকে আসার ৪৪ জন সাতারুর মধ্যে হয়েছে হয়েছেন ষষ্ঠ। অদম্য অ্যাডভেঞ্চার আরিফুর রহমান বেলালকে নিয়ে লিখেছেন ক্রীড়া প্রতিবেদক রাজিবুল ইসলাম

বঙ্গোপসাগরে অনুষ্ঠিত ১৫তম বাংলা চ্যানেল সাঁতারের প্রতিযোগিতায় টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন পর্যন্ত ১৬.১ কিলোমিটার পারি দিতে হয়। আর এখানে শুধু তারাই অংশগ্রহণ করতে পারে যারা টানা ৫ ঘন্টা সাঁতরাতে পারে। কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার শাহ্ পরীর দ্বীপ জেটি থেকে শুরু হয় ফরচুন বাংলা চ্যানেল সাঁতার-২০২০। আরিফুর রহমান বেলালের শুরুটা হয়েছিলো শখের বশে। একজন ব্যাংকার থেকে বাংলা চ্যানেল পারি দিয়ে বাংলাদেশের সকল অ্যাথলেটের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন তিনি। যে চাইলেই অসাদ্ধ জিনিসকে জয় করা সম্ভব। আরিফুর রহমার বেড়ে উঠেছেন শরীয়তপুর জেলার গোসাইরহাট উপজেলার নাগেরপাড়া ইউনিয়নে। 

অদম্য এই অ্যাথলেট আমার সংবাদকে জানান, ২০১৯ সালে পার্কে দৌড়াতে গিয়ে আমার একজনের সাথে পরিচয় হয়। তখন সেই লোকটি বললো আপনিতো প্রতিদিন দৌড়ান তাহলে আমার গ্রুপে যোগ দেন। আমাদের একজন কোচ আছে সে আপনাকে সবকিছুু শেখাবে। তারপর ২০১৯ সালের নভেম্বরে আমি প্রথম শুরু করি। শুরুতে ঢাকায় পার্কে প্রতিদিন দুই কিলো করেন দৌড়ে প্রাথমিকভাবে শুরু করি। কয়দিন পর দলে যোগ দেয়া কোচ আয়রনম্যান মো. সামসুজ্জামান আরাফাত স্যার বললো সামনে আমাদের ২১ কিলোমিটার একটা ম্যারাথন আছে সেখানে আপনি আসেন। তখন আমি বললাম ভাই এটা কিভাবে সম্ভব যেখানে আমি মাত্র দুই কিলো দৌড়াই সেখানে আমি ২১ কিলোমিটার কিভাবে দৌড়াবো।

[media type="image" fid="99563" layout="normal" caption="1" infograph="0" parallax="0" popup="1"][/media]

তখন সে বললো আপনার দৌড়াতে হবেনা আপনি আমাদের সাথে সিলেট চলে শুধু। নভেম্বরের ২২ তারিখে ম্যারাথনটা ছিলো। তখন আমি ভাবলাম যাবোই যখন তখন এই ২২ দিনে নিজেকে প্রস্তুতত করি। সেখান থেকেই আমার শুরু। তখন থেকেই আমি নিয়মিত ব্যায়াম করি ও সাতার শিখি। আয়রন ম্যানে অংশগ্রহণ করতে হলে চার কিলো সাতরাতে হয়, ১৮০ কিলো সাইকেল চালাতে হয় এবং ৪২ কিলো দৌড়াতে হয়। তারপর সে বললো ভাই প্রতি বছর একটা প্রোগ্রাম হয়। 

টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন একটা সাতার প্রতিযোগিতা। ওটাতে আপনি অংশ গ্রহণ করেন। তখন আমি বললাম ভাই সমুদ্রে সাতরিয়ে পার হবো এটা কিভাবে সম্ভব। আমি বললাম ভাই এটা আমার পক্ষে সম্ভব হবেনা এগুলো আমাকে বইলেননা। তখন সে বললো আরে ভাই না সাতরান আমার সাথে অন্তত চলেন দেখে আসেন। তারপর বাংলা চ্যানেলে যারা সুইমিং করে সেখানে আমাকে নিয়ে গেলো এবং সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো। যারপর ভাবলাম তারা যদি বাংলা চ্যানেল পারি দেয় তাহলে আমি কেন পারবোনা। তারপর আমি এই বছরের জানুয়ারি মাস থেকে প্রাকটিস শুরু করি। এ বছরের মার্চ মাসে সিলেটের পাহাড়ে ৪২ কিলোর একটা ম্যারাথনে যোগ দেই। সময় সাত ঘন্টা।

 ২৫ কিলো পার হওয়ার পরে অনেকেই পারেনা থেমে যেতে হয়। ওখানে প্রথম ২০ কিলো আমি আস্তে আস্তে দৌড়ালাম। পরে দেখি আমার কোন সমস্যা হচ্ছেনা আমি পারছি। ৩ ঘন্টা ৫৯ মিনিটে শেষ করি ৪২ কিলো। সেখানে আমি ষষ্ঠ পজিশনে ছিলাম। তারপর ইনানি থেকে টেকনাফের রাস্তায় মেরিন ড্রাইভে ৫০ কিলো ম্যারাথন ছিলো। তখন কোচ বললো আপানার শরীর ঠিক হতে আরো সময় লাগবে আপনার এটা দেয়ার দরকার নেই। তখন আমি বললা কোচ আমি শুধু যাবো কিন্তু অংশগ্রহন করবোনা। তবে ওখানে গিয়ে ঠিকি দৌড়ালাম।

প্রথম ৩০ কিলো আমি স্লো দৌড়ালাম। সেখানে সারা দেশ থেকে ১০০ জন রানার অংশ নিয়েছিলো এবং ভারত, শ্রীলঙ্কা থেকেও অ্যাথলেট আসছিলো। পরে সেখানে আমি সেকেন্ড হই। শেষ করার পর সবাই তাকিয়ে রয়েছে আমার দিকে। কেউ বিশ্বাস করতে পারছেনা আমি আসলে এভাবে পারবো। সেখান থেকেই আমার আত্মবিশ্বাস ছিলো যে, সমুদ্রের পারে দৌড়িয়েছি যখন তখন আমি সমুদ্রের মাঝেও সাতরাতে পারবো। সেখান থেকেই আমি প্রতিজ্ঞা করি সমুদ্র পাড়ি দেবোই। তখন অনেকেই বলেছে যারা পাঁচ ঘন্টা সাতার দিতে পারবে তারাই সমুদ্র পাড়ি দিতে পারবে। 

তখন আমি চিন্তা করলাম আমি যদি পাঁচ ঘন্টা দৌড়াতে পারি তাহলে পাঁচ ঘন্টা সাতারতে পারবো। সেখাই থেকেই আমার মনে জেদ চাপলো আমি সমুদ্র পাড়ি দেবোই। তারপরেরটা ইতিহাস। ২০০৬ সালে প্রথম শুরু হয় এই বাংলা চ্যানেল পারি দেয়ার প্রতিযোগিতা ১৬.১ কিলোমিটার দূরত্বের এই বাংলা চ্যানেলে ৪৪ জনের মধ্যে তিনজন সাঁতার শেষ করতে পারেননি।

আমারসংবাদ/এমআর