স্পোর্টস ডেস্ক
ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২১, ০৩:২৫ পিএম
লিটন দাস ও মেহেদি হাসান মিরাজের জোড়া হাফ-সেঞ্চুরিতে ফলো-অন এড়ানোর পর ঢাকা টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে ২৯৬ রানে অলআউট হয় স্বাগতিক বাংলাদেশ। ফলে প্রথম ইনিংস থেকে ১১৩ রানের লিড পায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এই লিডকে সাথে নিয়ে খেলতে নেমে বাংলাদেশ স্পিনাদের তোপের মুখে পড়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ৪১ রান তুলতেই ৩ উইকেট হারিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ফলে ৭ উইকেট হাতে নিয়ে ১৫৪ রানে এগিয়ে ক্যারিবীয়রা। ব্যাট হাতে লিটন ৭১ ও মিরাজ ৫৭ রান করেন।
মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ম্যাচে দ্বিতীয় দিন শেষে গতকাল ৪ উইকেটে ১০৫ রান তোলে বাংলাদেশ। মুশফিকুর রহিম ২৭ ও মোহাম্মদ মিঠুন ৬ রানে দিন শেষ করেছিলেন।
তৃতীয় দিনের শুরু থেকে দেখেশুনেই খেলছিলেন মুশফিক-মিঠুন। ফলো-অন এড়ানোই মূল লক্ষ্য ছিলো তাদের। ৪৪তম ওভারে ৮৯তম বলে টেস্ট ক্যারিয়ারের ২২তম হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নেন মুশফিক।
মুশির হাফ-সেঞ্চুরির পরই থামেন ধৈর্য্যর পরীক্ষা দেয়া মিঠুন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্পিনার রাকিম কর্নওয়ালের করা দিনের দশম ওভারের প্রথম বলেই টাইমিংএ গড়বড় করে শর্ট মিড-উইকেটে প্রতিপক্ষের অধিনায়ক ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েটকে ক্যাচ দেন মিঠুন। ফলে ১৪০ মিনিটে ৮৭ বলে মিঠুনের ১৫ রানের লড়াকু ইনিংসের সমাপ্তি ঘটে।
মিঠুনকে হারিয়ে মনোসংযোগে ব্যাঘাত ঘটে মুশফিকের। কর্নওয়ালের করা ৫০তম ওভারের দ্বিতীয় বলে রিভার্স সুইপ করতে বড় ভুল করে ফেলেন তিনি। বল-ব্যাটের টাইমিং মিলে না যাওয়ায় শর্ট কাভারে কাইল মায়ার্সকে ক্যাচ দেন মুশফিক। ১৭০ মিনিটে ১০৫ বল খেলে ৭টি চারে ৫৪ রানে থামেন তিনি। ফলে ১৫৫ রানে ষষ্ঠ উইকেট হারিয়ে ফলো-অনের শংকায় পড়ে বাংলাদেশ।
সেই শংকাটা দূর করতে উইকেট বাঁচিয়ে খেলতে শুরু করেন লিটন দাস ও মেহেদি হাসান মিরাজ। এতে প্রথম সেশনে ৬ উইকেটে ১৮১ রান নিয়ে মধ্যাহ্ন-বিরতিতে যায় বাংলাদেশ। বিরতি থেকে ফিরে ৭০তম ওভারের শেষ বলে ফলো-অনের লজ্জা থেকে বাংলাদেশকে রক্ষা করেন লিটন-মিরাজ। এরপর সাবলীলভাবে খেলে বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডকে শক্তপোক্ত করতে থাকেন তারা।
৭৬তম ওভারের প্রথম দুই বলে দু’টি চার মেরে টেস্ট ক্যারিয়ারের সপ্তম হাফ-সেঞ্চুরির দেখা পান লিটন। ্ওরেপর হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নেন প্রথম টেস্টে সেঞ্চুরি করা মিরাজ । ১১২ বলে হাফ-সেঞ্চুরি করেন। লিটন অর্ধশত পুরন করেন ৯২তম বলে।
লিটন-মিরাজের জোড়া হাফ-সেঞ্চুরিতে দ্বিতীয় সেশনটি দুর্দান্তভাবে কাটায় বাংলাদেশ। ৬ উইকেটে ২৭২ রানে চা-বিরতিতে যায় টাইগাররা। এসময় লিটন ৬৬ ও মিরাজ ৫৩ রানে অপরাজিত ছিলেন।
বিরতির থেকে ফেরার পর চতুর্থ ওভারে জোড়া ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। ৯২তম ওভারের দ্বিতীয় বলে লিটনকে লেগ বিফোর আউট করে দলকে দারুন ব্রেক-থ্রু দেন কর্নওয়াল। রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি লিটন। ২১৪ মিনিটে ১৩৩ বল খেলে ৭টি চারে ৭১ রান করে ফিরেন লিটন। সপ্তম উইকেটে ২৫৫ বলে গুরুত্বপূর্ণ ১২৬ রান যোগ করেন লিটন-মিরাজ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সপ্তম উইকেটে এটিই সর্বোচ্চ রান বাংলাদেশের।
একই ওভারের পঞ্চম বলে নাইম হাসানকে খালি হাতে বিদায় দেন কর্নওয়াল। এতে ইনিংস পাঁচ উইকেট পূর্ণ হয় দীর্ঘদেহি এই স্পিনারের। পাঁচ ম্যাচের টেস্ট ক্যারিয়ারে দ্বিতীয়বারের পাঁচ বা ততোধিক উইকেট শিকার করলেন কর্নওয়াল।
কর্নওয়ালের সাফল্যের পর মিরাজের বিদায় নিশ্চিত করেন পেসার শ্যানন গাব্রিয়েল। ৬টি চারে ১৪০ বলে ৫৭ রান করেন মিরাজ।
২৮১ থেকে ২৮৩ রানের মধ্যে তিন ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে ৩শর নিচে গুটিয়ে যাবার মুখে পড়ে বাংলাদেশ। সেটি রুখতে শেষ উইকেটে চেষ্টা করেছিলেন তাইজুল ইসলাম ও আবু জায়েদ। কিন্তু জায়েদকে শিকার করে বাংলাদেশকে ২৯৬ রানে থামান পেসার জোসেফ। ১৩ রানে অপরাজিত থেকে যান তাইজুল।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের কর্নওয়াল ৩২ ওভারে ৭৪ রানে ৫ উইকেট নিয়েছেন। এছাড়া গাব্রিয়েল ৩টি ও জোসেফ ২টি উইকেট নেন।
বাংলাদেশের ইনিংস শেষে দ্বিতীয়বারের মত ব্যাট করতে নেমে বিপদে পড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ২০ রানে প্রতিপক্ষের ২ উইকেট তুলে নেন নাইম-মিরাজ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের অধিনায়ক ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েটকে ৬ রানে নাইম ও শায়নে মোসলেকে ৭ রানে থামান মিরাজ। আরেক স্পিনার তাইজুলও উইকেট শিকারের আনন্দে মাতেন। জন ক্যাম্পবেলকে ১৮ রানে বোল্ড করেন তিনি।
এরপর দিনের বাকী সময়ে বিপদ ছাড়া কাটিয়ে দেন এনক্রুমার বোনার ও নাইটওয়াচম্যান জোমেল ওয়ারিকান। বোনার ৮ ও ওয়ারিকান ২ রানে অপরাজিত আছেন। বাংলাদেশের তাইজুল-নাইম-মিরাজ ১টি করে উইকেট নেন।
আমারসংবাদ/জেআই