Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪,

নিষ্প্রাণ ড্রয়ে শেষ চট্টগ্রাম টেস্ট

ক্রীড়া প্রতিবেদক 

ক্রীড়া প্রতিবেদক 

মে ২০, ২০২২, ০৬:৫৫ এএম


নিষ্প্রাণ ড্রয়ে শেষ চট্টগ্রাম টেস্ট

চট্টগ্রাম টেস্টের শেষ দিনে একটি নাটকের অপেক্ষায় ছিলেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। তবে সব নাটকের অবসান ঘটিয়ে শেষ পর্যন্ত ড্র দিয়েই শেষ হলো বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা মধ্যকার প্রথম টেস্ট। মাত্র তিনটি সেশন, এর মধ্যেই লঙ্কানদের আটটি উইকেট ফেলতে হবে।

তার মধ্যে আবার ব্যাটিংও করতে হবে বাংলাদেশকে। তাহলেই হয়তো আরও একটি ইতিহাস লিখা হতো সাগরিকায়। এই টেস্টের ফলাফল হয়তো টাইগারদের পক্ষেই আসতে পারতো; যদি তাইজুল, নাঈম ও সাকিবরা প্রথম সেশনেই গুটিয়ে দিতে পারতেন লঙ্কানদের। ক্যাচগুলো মিস না করলে হয়তো লঙ্কানদের গুটিয়ে ফেলা অসম্ভব ছিল না। 

কিন্তু সে আর হলো কোথায়, শেষ পর্যন্ত ড্র-য়ের স্বাদ নিয়েই মাঠ ছাড়তে হয় দুই দলকে। পঞ্চম ও শেষ দিনে উইকেটে শার্প টার্ন আর বাড়তি বাউন্স পেলেও শ্রীলঙ্কা দলকে অলআউট করতে পারেনি টাইগাররা। অবশ্য আক্ষেপ বাড়িয়েছে একাধিক ক্যাচ মিসের ঘটনা। ক্যাচগুলো ঠিকঠাক মতো ধরতে পারলে হয়তো সুবিধাজনক অবস্থানে থেকেই দ্বিতীয় সেশনের বিরতিতে যেতে পারত স্বাগতিকরা। 

চা-পানের বিরতিতে যাওয়ার আগে ৬ উইকেট হারিয়ে লঙ্কানদের সংগ্রহ ছিল ২০৫ রান। শেষ সেশনে আর কোনো উইকেট তুলতে পারেনি বাংলাদেশের বোলাররা। চতুর্থ দিন পর্যন্তও পুরো ম্যাচের নিয়ন্ত্রণে ছিলেন মমিনুল বাহিনী। তামিম ও মুশফিকের সেঞ্চুরিতে ৪৬৫ রানেই শেষ হয় বাংলাদেশের প্রথম     
ইনিংস। তাতে ৬৮ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করে শ্রীলঙ্কা। নতুন বলে স্পিন ধরায় প্রতিপক্ষের ওপর সহজেই চাপ সৃষ্টি করতে পারে বাংলাদেশ। ওপেনার ওশাদা ফার্নান্দোকে রানআউট করার পর নাইটওয়াচম্যান এম্বুলদেনিয়াকে বোল্ড আউট করেন তাইজুল। 

শেষদিকে আলো কমে যাওয়ায় দ্রুত খেলা শেষ হয়। তাতে দুই উইকেট হারিয়ে ৩৯ রানে চতুর্থ দিন শেষ করে শ্রীলঙ্কা। শেষ দিনে মধ্যাহ্নভোজের বিরতি থেকে ফিরে ইনিংসের ৫০তম ওভারে একবার জীবন পান ধনঞ্জয়া ডি সিলভা। লেগ সাইডে খেলতে গিয়ে বল মাটিতে রাখতে পারেননি, সেটি মিড উইকেটে মুশফিকুর রহিমের সামান্য সামনে পড়ে। বল হাতে পড়লেও আগেই তা মাটি স্পর্শ করায় হয়নি ক্যাচ। 

এরপর ৬৩তম ওভারের শেষ বলটি ব্যাটসম্যানের পায়ের ওপর করেন সাকিব। লেগ সাইডে খেলেন ডিকওয়েলা। তার ব্যাট থেকে বল যায় লেগ গালিতে। কিন্তু একটুর জন্য হয়নি ক্যাচ। সামনে নুইয়ে বল হাতে জমান মাহমুদুল হাসান জয়। কিন্তু তার একটু সামনে মাটিতে লেগে যায় বল। তাইজুল ইসলামও ছেড়েছেন সহজ একটি ক্যাচ। এর বাইরেও আরও কয়েকবার এসেছিল সুযোগ। এই সেশনে দুই উইকেট তুলে নেয় বাংলাদেশ। মধ্যহ্নভোজের বিরতি কাটিয়ে ফিরে করুনারত্নে তার ক্যারিয়ারের ২৮তম টেস্ট ফিফটি তুলে নেন। ৪৪ রানে অপরাজিত থেকে প্রথম সেশন শেষ করা লঙ্কান অধিনায়ক দ্বিতীয় সেশনের প্রথম ওভারের শেষ বলে তিন রান নিয়ে পঞ্চাশ রানের কোটা পূর্ণ করেন। 

ব্যক্তিগত ৫২ রানে যখন ব্যাট করছিলেন এই বাঁহাতি, তখন তাকে আউট করেন তাইজুল। ধনঞ্জয়াকে প্যাভিলিয়নের পথ দেখান সাকিব। ৩৩ রানে তাকে মুশফিকুর রহিমের ক্যাচ বানান বাঁহাতি এই স্পিনার। পুল করতে গিয়ে মিডউইকেটে সহজ ক্যাচ হন ধনঞ্জয়া। তার ৬০ বলের ইনিংসে ছিল ৩ চার ও ১ ছয়। পরের বলেই নতুন ব্যাটসম্যান ডিকওয়েলা উইকেট হারাতে বসেছিলেন। তার নেয়া জোরে শট বেরিয়ে যায় তাইজুল ইসলামের হাত ফসকে। আর তারই মাসুল দিতে হলো বাংলাদেশকে। ম্যাথুস যখন আউট হন, তখন শ্রীলঙ্কার লিড ছিল ৬০ রানের। তখনও প্রায় আড়াই সেশন সময় ছিল। 

তাই এখান থেকে যেকোনো কিছুই ঘটতে পারত। দ্বিতীয় সেশনের ১৩ ওভারের মধ্যে শ্রীলঙ্কার আরও দুটি উইকেট ফেলে দিয়ে তেমনই কিছুর সম্ভাবনা জাগিয়েছিলেন তাইজুল ও সাকিব আল হাসান। দ্বিতীয় সেশনের পানি পানের বিরতির আগেই শ্রীলঙ্কার স্কোর হয়ে যায় ৬ উইকেটে ১৬১ রান। এরপরই প্রতিরোধ গড়ে তোলেন চান্ডিমাল ও ডিকভেলা। দ্বিতীয় ইনিংসে ২০৪ বলে ৯৯ রানের জুটি গড়ে অপরাজিত ছিলেন চান্ডিমাল ও ডিকভেলা। ৪ চার ও ১ ছয়ে চান্ডিমাল ১৩৫ বলে ৩৯ রান ও ডিকভেলা ৯৬ বলে ৬১ রানে অপরাজিত থাকেন। এদিকে ৩৪ ওভার হাত ঘুরিয়ে ৮২ রান দিয়ে ৪ উইকেট নিয়েছেন তাইজুল। 

ম্যাচসেরার পুরস্কার জিতেছেন প্রথম ইনিংসে ১৯৯ রান করে আউট হওয়া ম্যাথুস। অন্যদিকে ডিকভেলা ও চান্ডিমালের ওপর ভর করে ৫ম দিন শেষ করে শ্রীলঙ্কা। তাদের প্রতিরোধের দেয়ালে আর ফাটল ধরাতে পারেননি বাংলাদেশের স্পিনাররা। শেষ দিনে ১ ঘণ্টা বাকি থাকতেই ড্র মেনে নেয় দুই দল। 

এদিকে চতুর্থ দিনের শুরুটাও ভালো করেছিল বাংলাদেশ। মুশফিকুর রহিম ও লিটন কুমার দাস অপরাজিত থাকেন প্রথম সেশনে। সকালের বৃষ্টির কারণে মাঠ কিছুটা ভেজা থাকলেও বোলারদের পাত্তা দেননি টাইগার ব্যাটাররা। তৃতীয় দিনের ৩১৮ রানের সঙ্গে চতুর্থ দিনের প্রথম সেশনে বিনা উইকেটে যোগ হয় ৬৭ রান। তবে মধ্যাহ্ন বিরতির পরই ঘটে বিপত্তি। প্রথম বলেই প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন লিটন কুমার দাস। ১২ রানের আক্ষেপ যে থেকেই গেল লিটনের। 

সাড়ে চার ঘণ্টা ব্যাট করেছের এই ব্যাটার। ১৮৯ বল খেলে করেন ৮৮ রান। মুশফিক-লিটনের জুটি ১৬৫ রানের। তামিম-জয়ের ১৬২ রানের ওপেনিং জুটিকে ছাপিয়ে মুশফিক-লিটনের ১৬৫ রানের জুটিটা বেশ জ্বলজ্বল করছিল। লিটনকে আউটের পরের বলেই তামিমকে বোল্ড করেন কাসুন রাজিথা। মমিনুল যে ডেলিভারিতে আউট হয়েছিলেন, তামিমও ঠিক সেরকমই একটি ডেলিভারিতে আউট হয়েছেন। সাকিব আল হাসান বোলিংয়ের মতো ব্যাটিংয়ে তেমন একটা স্বাচ্ছন্দ্যে ছিলেন না। আউট হতে হতেও বেঁচে গেলেন একবার। জীবন পেলেও মুশফিকের সঙ্গে জুটিটা বেশি লম্বা করতে পারেননি।

 ৪৪ বলে ৪৬ রান করে কট বিহাইন্ড হয়ে সাজঘরে ফিরেন এই অলরাউন্ডার। এরপর নাঈমকে নিয়েই ক্যারিয়ারের অষ্টম সেঞ্চুরি তুলে নেন মুশফিক। ২৮২ বলে ১০৫ রানে এম্বুলদেনিয়ার বলে সুইফ করতে গিয়ে বোল্ড হন মুশফিক। বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ৪৫ বলে করেন ২০ রান। শরিফুল ইসলামের হাতে চোট লাগায় দুই পেসারের মধ্যে জুটি গড়ে ওঠেনি। শরিফুল রিটায়ার্ড হার্ট হলে বাংলাদেশকে অলআউট ঘোষণা করা হয়।
 

Link copied!