Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪,

শৈল্পিক খেলায় মেসিদের জয়

শেষ ষোলোয় আর্জেন্টিনা

মো. মাসুম বিল্লাহ

ডিসেম্বর ১, ২০২২, ০৩:১০ এএম


শেষ ষোলোয় আর্জেন্টিনা

প্রথমার্ধে লিওনেল মেসির পেনাল্টি মিসে গোল পায়নি আর্জেন্টিনা। তবে পেয়ে গেল দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই। মহাগুরুত্বপূর্ণ গোলটা এনে দিলেন অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টার। তারপর আরেটি গোলের জন্য বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি ফুটবলের যাদুকর মেসিদের  ৬৮ মিনিটে ডি-বক্সে বল পেয়ে জড়ালো শটে জাল কাঁপান হুলিয়ান আলভারেজ। তাকে অ্যাসিস্ট করেন এনজো ফার্নান্দেজ।

(১ ডিসেম্বর) গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে পোল্যান্ডকে ২-০ গোলে হারিয়েছে আর্জেন্টিনা। আলবিসেলেস্তেদের হয়ে জয়সূচক গোল দুটি করেন অ্যালেক্সিস ম্যাক-অ্যালিস্টার ও হুলিয়ান আলভারেজ।

অন্যদিকে আক্রমণ তো দূরে থাক রক্ষণ সামলাতেই ব্যস্ত ছিল পোলিশরা। তারা এতটাই অসহায় ছিল যে, ম্যাচ শেষে যোগ করা ৬ মিনিটকে ধারাভাষ্যকাররা উল্লেখ করেছেন পোল্যান্ডের জন্য ৬ ঘণ্টার দুঃসাধ্য সময় হিসেবে।

তবে ভাগ্য সহায়ক হওয়ায় তারাও পৌঁছে গেছে পরের রাউন্ডে। গ্রুপের আরেক ম্যাচে লুসাইল স্টেডিয়ামে অতিরিক্ত মিনিটে মেক্সিকোর বিপক্ষে গোল করে পোল্যান্ডকে শেষ ষোলোর টিকিট উপহার দিয়েছে সৌদি আরব। ২-১ গোলের জয়ে পোলিশদের সমান ৪ পয়েন্ট নিয়েও গোল ব্যবধানে পিছিয়ে থাকায় বাদ পড়েছে মেক্সিকো। ৩ পয়েন্ট নিয়ে আসর থেকে ছিটকে গেছে সৌদি আরব।

এর আগে নাইন সেভেন আর্জেন্টিনার একের পর এক আক্রমণে দিশেহারা হয়েছে পোল্যান্ডের রক্ষণভাগ। আলবিসেলেস্তেদের নেওয়া ২৩ শটের ১২টিই ছিল লক্ষ্য বরাবর। তারা বল দখলে রেখেছে ম্যাচের ৭৪ শতাংশ সময়। বিপরীতে পোলিশদের নেওয়া ৪ শটের একটিও থাকেনি লক্ষ্যে। এই পরিসংখ্যানই বলে দেয়, ম্যাচে কতটা আধিপত্য করেছে মেসিরা। আর কতটা অসহায় ছিল লেভানদোভস্কিরা। অবশ্য পোলিশ গোলবারে ভয়চেখ সেষ্ণি না থাকলে আলবিসেলেস্তেদের গোলের বন্যা নিয়েই মাঠ ছাড়তো।

নাইন সেভেন ফোর স্টেডিয়ামে ম্যাচের শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক খেলা উপহার দেন লিওনেল স্ক্যালোনির শিষ্যরা। ৭ মিনিটে ডি-বক্সের বাইরে থেকে শট নেন লিওনেল মেসি। তবে তার নিচু শটটি চলে যায় ভয়চেখ সেষ্ণির হাতে।

দুই মিনিট পর বাঁ প্রান্ত থেকে অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়ার পাস দখলে নিয়েই ডান প্রান্ত দিয়ে পোল্যান্ডের ডি-বক্সে দ্রুত গতিতে ঢুকে পড়েন মেসি। সেখান থেকে তার নেওয়া জোরালো শট কর্নারের বিনিময়ে ঠেকিয়ে দেন ভয়চেখ। ১৭ মিনিটে ডি-বক্সে মার্কোস অ্যাকুনার জোরালো শট থাকেনি লক্ষ্যে। এক মিনিট পর তার হেড চলে যায় সরাসরি পোলিশ গোলরক্ষকের হাতে।

মেসিদের একের পর এক আক্রমণে শুরুর প্রথম ২০ মিনিট কোনো সুবিধাই করতে পারেনি রবার্ট লেভানদোভস্কিরা। এরপর অবশ্য প্রতি আক্রমণে কিছুটা আশা জাগিয়েছিল পোলিশরা। তবে ফ্রি-কিক থেকে নেওয়া তাদের শটটি থাকেনি লক্ষ্যে। এক মিনিট পর তারা আরও একটি ফ্রি-কিক পায় কিন্তু সেটাও কাজে লাগাতে পারেননি পোলিশরা। প্রথমার্ধেই এতটুকুতে সন্তুষ্ঠ থাকতে হয় তাদের।

এরপর বাকি সময় পুরোটা একতরফা আক্রমণ চালিয়ে যায় স্ক্যালোনির শিষ্যরা। ২৮ মিনিটে ডি-বক্সে হুলিয়ান আলভারেজের শট ফিরিয়ে দেন ভয়চেখ সেষ্ণি। তবে বল চলে যায় অরক্ষিত অ্যাকুনার পায়ে। তার নেওয়া জোরালো শট একটুর জন্য জড়ায়নি জালে।

৩৩ মিনিটে কর্নার থেকে ডি মারিয়ার ক্রস সরাসরি গোল বারেই জায়গা করে নিচ্ছিল, তবে সেষ্ণি কর্নারের বিনিময়ে কোনো রকম বলটি ঠেকিয়ে দেন। এক মিনিট পর মেসির দেওয়া ডি-বক্সের বাইরের শট পোস্টের উপর দিয়ে যায়। পরের মিনিটে ওয়ান টু ওয়ান পজিশনে সেষ্ণিকে পরাস্ত করতে ব্যর্থ হন হুলিয়ান আলভারেজ। এরপর পোলিশ গোলরক্ষক দারুণ নৈপুণ্যে আবার প্রতিহত করেন মেসির হেড।

তবে বল সরাতে গিয়ে মেসির মাথায় লাগায় আর্জেন্টাইনদের আবেদনে ভিআর চেকে পেনাল্টি দেন ম্যাচ রেফারি। কিন্তু এবারও সেষ্ণির দক্ষতার কাছে হেরে যান মেসি। তার বাঁ পায়ের শট বাম দিকে ঝাপিয়ে পড়ে ঠেকিয়ে দেন এ পোলিশ গোলরক্ষক। এরপর ডি-বক্সে আলভারেজের শট ফিরিয়ে দেওয়ার পর, ফিরিয়ে দেন ওয়ান টু ওয়ান পজিশনে ডি পলের শটও। একের পর এক আক্রমণ করেও শেষ পর্যন্ত সেষ্ণির কাছে হার মেনে প্রথমার্ধে মাঠ ছাড়তে হয় মেসিদের।

বিরতির পর আলবিসেলেস্তেদের সে হতাশা দূর করে দেন ম্যাক-অ্যালিস্টার। ডান প্রান্তে নাহুয়েল মোলিনার পাস দখলে নিয়ে ডি-বক্সে ঢুকে নিখুঁত শটে বল জালে জড়ান এ মিডফিল্ডার। এবার আর পোলিশদের রক্ষাকবচ হতে পারেননি সেষ্ণি। পরের মিনিটে সমতায় ফিরতে পারতো পোল্যান্ড। ফ্রি-কিক থেকে সতীর্থের ক্রস আর্জেন্টিনার ডি-বক্সে হেড দেন কামিল গ্লিক। কিন্তু অল্পের জন্য সে বল জালে জড়ায়নি।

৫৯ মিনিটে ডি মারিয়াকে তুলে লিয়ান্দ্রো পারেদেসকে ও অ্যাকুনাকে তুলে নিকোলাস তাগলিয়াফিকোকে মাঠে নামান স্ক্যালোনি। এক মিনিট পর ডি-বক্সে গোলের দারুণ সুযোগ পেয়েও সেষ্ণির হাতে বল তুলে দেন ম্যাক-অ্যালিস্টার। তবে ভুল করেননি আলভারেজ। ৬৮ মিনিটে ডি-বক্সে বল পেয়ে জড়ালো শটে জাল কাঁপান হুলিয়ান আলভারেজ। তাকে অ্যাসিস্ট করেন এনজো ফার্নান্দেজ।

৩ মিনিট পর আরও একবার গোলের সুযোগ নষ্ট করেন মেসি। এক মিনিট পর ওয়ান টু ওয়ান পজিশনে আলভারেজের নেওয়া শট থাকেনি লক্ষ্যে। একের পর এক আক্রমণ করেও শেষ পর্যন্ত ২-০ গোলের জয় নিয়েই মাঠ ছাড়তে হয়েছে আর্জেন্টাইনদের। আর তাতে ৬ পয়েন্ট নিয়ে ‘সি’ গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন হয়েই শেষ ষোলোতে পাড়ি দিয়েছে মেসিরা।

ইএফ

Link copied!