Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪,

জাতীয় গ্রিডে ৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ

মহিউদ্দিন রাব্বানি

জুন ২৪, ২০২২, ০১:২৯ এএম


জাতীয় গ্রিডে ৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ

বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ পাওয়ার হাব আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানির (এপিএসসিএল) নির্মিত ৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন কম্বাইন্ড সাইকেল (পূর্ণ শক্তিতে) পাওয়ার প্লান্ট থেকে পরীক্ষামূলক বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। 

এপিএসসিএল জানায়, ইতোমধ্যে তারা ৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সক্ষমতা লাভ করে। ২০২১ সালের মাঝামাঝিতে ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের কথা ছিল। কিন্তু করোনা অতিমারীতে প্রকল্পটির কাজ থেমে যায়। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবারও কাজ শুরু হয়। গত সোমবার সকাল থেকে এ ইউনিটটি সিম্পল সাইকেলে (আংশিক শক্তি) পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু হয়। প্রথম কয়েকদিন বিদ্যুৎ উৎপাদন কম হলেও পর্যায়ক্রমে বাড়বে।

 গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে ইউনিটটি (সিম্পল সাইকেলে নির্ধারিত) ৩০০ মেগাওয়াটের কাছাকাছি বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সক্ষম হয়। ফলে জাতীয় গ্রিডে অতিরিক্ত ৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যুক্ত হয়। আগামী সেপ্টেম্বর শেষে ইউনিটটি পূর্ণ শক্তিতে চালু হলে ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ হবে বলে জানিয়েছে এপিএসসিএল কর্তৃপক্ষ। কর্তৃপক্ষ জানায়, এই ইউনিটটি চালু হলে জাতীয় গ্রিডে আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানির দৈনিক বিদ্যুৎ সরবরাহের সক্ষমতা ১৮০০ মেগাওয়াটে দাঁড়াবে। 

৪০০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্লান্ট (ইস্ট) প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মো. আব্দুল মজিদ জানান, পরীক্ষামূলকভাবে দৈনিক ছয়-সাত ঘণ্টা করে চালু রাখা হচ্ছে এবং ৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। 

জানা গেছে, ২০১৫ সালের ৩ সেপ্টেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) এক সভায় ৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন এই প্রকল্পটি অনুমোদন পায়। দরপত্র প্রক্রিয়ায় ২০১৮ সালে ২০ মার্চ সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে চায়না ন্যাশনাল টেকনিক্যাল ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট কর্পোরেশন এবং চায়না ন্যাশনাল কর্পোরেশন ফর ওভারসিস ইকোনমিক্স কো-অপারেশন কনস্ট্রাকশন প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব পায়।

প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ১৮০.৩২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ধরা হয়। এর মধ্যে এডিবি ১০৭.৯২ মিলিয়ন মার্কির ডলার, আইডিবি ৮৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং বাকি অর্থ বাংলাদেশ সরকার ৫২ মিলিয়ন টাকা প্রদান করার কথা রয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ২০১৮ সালের মার্চ মাসে চুক্তি স্বাক্ষর করে।  

এপিএসসিএল সূত্রে জানা যায়, বর্তমান সরকারের বিদ্যুৎ উৎপাদনের মহাপরিকল্পনার অংশ হিসেবে আশুগঞ্জকে ‘পাওয়ার হাব’ ঘোষণা করে। আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে এ কেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ছয় হাজার মেগাওয়াট।

এপিএসসিএলের এমডি এ এম এম সাজ্জাদুর রহমান বলেন, নতুন ইউনিটে বর্তমানে ৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। কোনো বাধা না থাকলে আগামী সেপ্টেম্বর নাগাদ প্রকল্পের কাজ পুরোদমে চালু হবে। তখন দৈনিক ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে।

সূত্র জানায়, এই প্রকল্পে ২০২০ সালের শেষ দিকে অর্থাৎ ডিসেম্বরে আংশিক এবং ২০২১ সালের জুনে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু করোনা অতিমারীতে প্রকল্পটির কাজ থেমে যায়। তাছাড়া চুক্তি মোতাবেক প্রকল্পের গ্যাস টারবাইন ও স্টিম টারবাইন জার্মানের সিমেন্স কোম্পানির কিছু যন্ত্রপাতি চীন থেকে আসার কথা থাকলেও আন্তর্জাতিক যোগাযোগ বন্ধ থাকায় তা বাধাগ্রস্ত হয়। 

করোনার প্রকোপ কমে গেলে কাজ শুরু হয় কিন্তু কারিগরি ত্রুটি ধরা পড়লে আবারও কাজের গতি থেমে যায়। নানা জটিলতা কাটিয়ে পরে কারিগরি টিমের সার্বিক তত্ত্বাবধানে যাবতীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে গত সোমবার থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়। ইউনিটটি চালু হওয়ায় জাতীয় গ্রিডে অতিরিক্ত ৩০০ মেগাওয়াট সরবরাহ বৃদ্ধি পেয়েছে।

ছয়টি ইউনিটের বর্তমান মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ১২৯৬.৯১ মেগাওয়াট। বাংলাদেশ সরকারের বিদ্যুৎ খাত উন্নয়ন ও সংস্কার কর্মসূচির অংশ হিসেবে আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেড (এপিএসসিএল) ২৮ জুন কোম্পানি আইন ১৯৯৪-এর অধীনে নিবন্ধিত হয়।

কোম্পানির আর্টিক্যালস্? অব অ্যাসোসিয়েশন অনুযায়ী মোট শেয়ারের ৯১.২৩ শতাংশ বিপিডিবি, ৮.৭৬ শতাংশ বিদ্যুৎ বিভাগ এবং অবশিষ্ট শেয়ার অর্থ বিভাগ, পরিকল্পনা বিভাগ এবং জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের মধ্যে বিতরণ করা হয়।

এই পাওয়ার স্টেশনে উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হয় এবং জাতীয় গ্রিডের মাধ্যমে পুরো দেশজুড়ে ভোক্তাদের মধ্যে বিতরণ করা হয়। এই প্রকল্পের মাধ্যমে উৎপাদিত বিদ্যুৎ দেশের মোট চাহিদার ৮.৭৬ শতাংশ মেটাতে পারবে। 

বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিঃ কর্তৃক সরবরাহকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস এই বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের প্রধান জ্বালানি হিসেবে ব্যবহূত হচ্ছে। স্টিম তৈরি এবং শীতলীকরণের জন্য প্রয়োজনীয় পানি মেঘনা নদী থেকে নেয়া হয়। শীতলীকরণের জন্য ব্যবহূত বিপুল পরিমাণ পানি বিদ্যুৎকেন্দ্রের ডিসচার্জ চ্যানেল দিয়ে নদীতে ছাড়া হয়। আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিঃ (এপিএসসিএল) ১৯৭০ সালে স্থাপিত হয়। 

৬৪ মেগাওয়াট সম্পন্ন দুটি থার্মাল পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপনের মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে। প্ল্যান্ট দুটির ইকোনমিক লাইফ বিগত ২০০৫ সালে অতিক্রম করেছে ফলে ২০১৪ সালে ইউনিট-১ এবং ২০১৮ সালে ইউনিট-২ স্থায়ীভাবে অবসরে যায়। 

উল্লেখ্য যে, শুষ্ক মৌসুমে ডিসচার্জ চ্যানেলের বিপুল পরিমাণ পানি আশুগঞ্জ, সড়াইল ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রায় ৩৬ হাজার একর জমি সেচের জন্য ব্যবহার করা হয়। ‘শেখ হাসিনার উদ্যেগ ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ’ বাস্তবায়নে আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেড গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

Link copied!