Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪,

সংক্রমণ বৃদ্ধিতে ফিরতে হবে পুরোনো অভ্যাসে

মাহমুদুল হাসান

জুন ২৮, ২০২২, ০১:৪৫ এএম


সংক্রমণ বৃদ্ধিতে ফিরতে হবে পুরোনো অভ্যাসে
ফাইল ছবি

তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে গোটা বিশ্ব লড়ছে কোভিডের বিরুদ্ধে। সংক্রমণ চূড়ায় ওঠার পর ফের কমতে শুরু করে। কিছু দিন পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলেও ফের ঢেউয়ের কবলে পড়ছে। 

অতীতের সংক্রমণ রোগ নিয়ন্ত্রণের অভিজ্ঞতায় করোনা ভাইরাস মোকাবিলার চেষ্টা। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, টিকায় জোর দেয়া। আক্রান্ত ব্যক্তিকে আইসোলেশনে রাখা। রোগীর সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের কোয়ারেন্টাইনে রাখা। 

এসব পদ্ধতিতে ভাইরাসটি নিয়ন্ত্রণে রাখার চলছে চেষ্টা। দেশের ৭০ শতাংশ নাগরিককে করোনা ভাইরাসের দুই ডোজ টিকার আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে বলে দাবি করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। 

করোনার সংক্রমণ বেড়েছে স্বীকার করে মন্ত্রী বলেছেন, এতে আমরা আতঙ্কিত নই, সতর্ক। স্বাস্থ্যবিধিতেও দিয়েছেন তিনি জোর। প্রধানমন্ত্রীও গতকাল একটি অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে সুরক্ষিত থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন।

তবে আশঙ্কার দিক হলো— টিকা গ্রহণের পরেও মানুষ করোনা সংক্রমিত হচ্ছে। টিকার কার্যকারিতা ঠিক কতদিন থাকবে তারও কোনো নিশ্চয়তা দিতে পারছেন না বিশেষজ্ঞরা। 

বাংলাদেশে দুই ডোজ টিকা গ্রহণের চার মাস পর বুস্টার ডোজ (তৃতীয় ডোজ) প্রয়োগ করা হচ্ছে। অসংক্রমিত দেশে চতুর্থ ডোজ টিকা প্রয়োগও চলছে। টিকাদান কার্যক্রমে ভালো কাভারেজের পরও সংক্রমণ বেড়েই চলছে। ইতিবাচক বিষয় হলো— মৃত্যু এখনো বাড়েনি। 

এ জন্য জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, অতীতের অভিজ্ঞতার আলোকে করোনা মোকাবিলা শতভাগ সম্ভব নয়। টিকা গ্রয়োগের পর সুদিন আসবে বলে যে উচ্ছ্বাস করেছিলাম সেদি এখন বন্ধ করতে হবে। টিকা হয়তো উপসর্গ প্রশমিত করতে পারে। মৃত্যুহার কমিয়ে আনতে পারে। কিন্তু সংক্রমণ বন্ধ করতে পারছে না। এ জন্য আমাদের পুরোনো অভ্যাসে ফিরতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। মাস্ক পরতে হবে। সাবান দিয়ে ভালোভাবে হাত মুখ ধৌত করতে হবে। এসব অভ্যাস আমরা ভুলে গেছি অথচ এগুলো এখনো কার্যকর।

জনস্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আবদুস সবুর বলেন, বিশ্ব নতুন সংক্রামক ব্যধিকে মোকাবিলা করে অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে। সংক্রামক ব্যধিতে কেউ আক্রান্ত হলে তার শরীরে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়। এ জন্য কেউ একবার আক্রান্ত হলে আর সংক্রমিত হয় না। আবার দীর্ঘস্থায়ী প্রতিরোধ ব্যবস্থার জন্য টিকা প্রয়োগ করলে মহামারি থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। কিন্তু কোভিড এসে সেসব পুরোনো হিসাব-নিকাশ কাজে দিচ্ছে না। 

একবার কোভিডাক্রান্তের পর সুস্থ হয়ে ফের কোভিড আক্রান্তের তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। এক ডোজ টিকা গ্রহণের পরেও শতভাগ সুরক্ষিত থাকা যাচ্ছে না। কিংবা এক ডোজ টিকা ঠিক কতদিন সুরক্ষিত রাখবে সেটাও নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না। বুস্টার ডোজ (তৃতীয় ডোজ) গ্রহণের পরও কোভিড আক্রান্তের তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।

তিনি বলেন, প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কাজ করছে না। কোভিড মোকাবিলায় প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধে বেশি সুফল পাওয়া যাচ্ছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, বারবার হাত মুখ সাবান দিয়ে ধৌত করা, সবসময় নাকমুখ ঢেকে মাস্ক পরা, হাঁচি-কাশি দেয়ার সময় টিস্যু, রুমাল কিংবা হাতের কুনই দিয়ে ঢেকে রাখা। 

এসব প্রতিরোধ ব্যবস্থা কোভিড মেকাবিলায় অধিকতর ও বৈজ্ঞানিকভাবে কার্যকর। সামনে ঈদে মানুষ গ্রামে ফিরবে। আবার গ্রাম থেকে সবাই নিজ নিজ কর্মস্থলে ফিরবে। এই সময়ে স্বাস্থ্যসচেতনতা অতিমাত্রায় বাড়াতে হবে। নয়তো সামনে অতিমাত্রায় সংক্রমণ বৃদ্ধি পাবে। টিকা দেয়ার কারণে হয়তো মৃত্যু সেভাবে হবে না। কিন্তু করোনা শনাক্তের সংখ্যা বাড়বে। 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, ‘দেশে করোনার সংক্রমণ বাড়ছে কিন্তু তা জটিল অবস্থায় যায়নি। এর কারণ করোনা টিকার প্রয়োগ। ফলে আমরা দেখতে পাচ্ছি সংক্রমণ বাড়লেও মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তির হার অনেক কম। সাধারণ কিছু লক্ষণ নিয়ে বাসায় অবস্থান করেই আক্রান্তরা সুস্থ হয়ে যাচ্ছেন। তবে সংক্রমণ রোধে আমাদের সতর্ক হতে হবে।’   

Link copied!