Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

কৃত্রিম সংকটের পাঁয়তারা

লোডশেডিংয়ে সক্রিয় হচ্ছে ইলেকট্রিক পণ্যের সিন্ডিকেট

নুর মোহাম্মদ মিঠু

জুলাই ২১, ২০২২, ১২:৫৩ এএম


লোডশেডিংয়ে সক্রিয় হচ্ছে ইলেকট্রিক পণ্যের সিন্ডিকেট

শাহরিয়ার রহমান। কাজ করেন ব্যক্তি মালিকানাধীন একটি প্রতিষ্ঠানে। ১৬-২০ দিন আগে উত্তরার পলওয়েল মার্কেট থেকে একটি পাওয়ার ব্যাংক কিনেন এক হাজার ৭০০ টাকায়। 

এরই মধ্যে গত মঙ্গলবার সরকার লোডশেডিংয়ের ঘোষণা দেয়ার পর গতকাল মঙ্গলবার তারই এক সহকর্মীর জন্যও একই পাওয়ার ব্যাংক নিতে ফের পলওয়েল মার্কেটে যান তিনি। কিন্তু মার্কেটে গিয়ে পাওয়ার ব্যাংক হাতে নেয়ার পরই চক্ষু চড়কগাছ। 

১৫-২০ দিনের ব্যবধানে এক হাজার ৭০০ টাকার সেই পাওয়ার ব্যাংক পর এখন তিন হাজার ৩০০ টাকা। আবার মার্কেটেও নেই পর্যাপ্ত পরিমাণ। যে কারণে পাওয়ার ব্যাংক না নিয়েই ফেরেন তিনি। 

আকাশ মাহমুদ। ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকার বাসিন্দা। ভাড়া বাসায় থাকেন, সঙ্গে থাকেন তার সন্তান সম্ভবা স্ত্রীও। যে কারণে সরকার নির্ধারিত লোডশেডিংয়ের সময় ব্যবহারের জন্য চার্জার ফ্যান কিনতে যান শনির আখড়ার একটি মার্কেটে। কিন্তু মঙ্গলবার থেকে শিডিউল করা লোডশেডিং শুরু হওয়ার দ্বিতীয় দিন গতকাল বুধবারই ব্যবসায়ীরা বলছেন, চার্জার ফ্যানের সংকট রয়েছে। বিক্রি হয়ে গেছে। 

নতুন করে মাল তুললে তখন পাওয়া যাবে। শনির আখড়ার একাধিক মার্কেটে ঘুরেও তিনি চার্জার ফ্যান পাননি। দু-একটি দোকানে পেলেও তা আগের দামের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি দাম বলায় তিনি আর ফ্যানই কিনেননি। 

জানতে চাইলে তিনি বলেন, সরকার এক ঘণ্টার জন্য লোডশেডিংয়ের কথা বললেও বাস্তবে তার চেয়েও বেশি সময় ধরে হচ্ছে। যে কারণে চার্জার ফ্যানের প্রয়োজন বোধ করছি। কিন্তু মার্কেটের যা অবস্থা দেখছি, দু-চারদিনের মধ্যে ফ্যান ছাড়া অন্যান্য পণ্যেরও সংকট দেখা দিতে পারে। দেশে অতীতের ঘটনাবলি থেকে দেখা যাচ্ছে, যেকোনো সংকট সৃষ্টি হলে ব্যবসায়ীরা কারসাজি করে পণ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে মূল্যবৃদ্ধি করে। ভোজ্যতেলের ক্ষেত্রেও সম্প্রতি এমনি ঘটনা ঘটেছে। 

শুধু তাই নয়, প্রতি অর্থবছরে বাজেটের আগেও নিজেদের মনগড়া সিদ্ধান্তে পণ্যের দাম বৃদ্ধি করে ব্যবসায়ীরা। যা বাজেটের পর স্বাভাবিক দামে রূপ নেয়। ব্যবসায়ীদের এমন কারসাজি কালে কালেই হয়ে আসছে। খাত ভিত্তিক ব্যবসায়ীদের এমন কারসাজি থেকে এবার বাদ পড়েনি ইলেকট্রিক পণ্যের ব্যবসায়ীরাও। 

সম্প্রতি বিদ্যুতের ঘাটতি মেটাতে সরকার শিডিউল করে সারা দেশে লোডশেডিংয়ের ঘোষণা দেয়। এরপর থেকেই মার্কেটগুলোতে বিভিন্ন ইলেকট্রিক পণ্যের ক্রেতাদের মার্কেটমুখী হতে দেখা যায়। ইলেকট্রিক পণ্য ক্রয়ে ক্রেতাদের আগ্রহ দেখে ব্যবসায়ীরাও করছেন সুযোগের সদ্ব্যবহার। কোনো পণ্যে দাম রাখছেন দুই থেকে তিনগুণ বেশি। 

পণ্যের দাম বৃদ্ধি ঠেকাতে সরব জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারাও বলছেন, লোডশেডিংয়ের সিদ্ধান্তের পর থেকে ইলেকট্রিক পণ্যের ব্যবসায়ীরা দাম বৃদ্ধির পাঁয়তারা করছেন। এ জন্য ইতোমধ্যে একাধিক মার্কেটে অভিযান পরিচালনা করে জরিমানাও করা হয়েছে তাদের। 

অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিকাশ চন্দ্র সাহা আমার সংবাদে বলেন, ‘পণ্যের দাম বাড়ানোর ঘটনা ঘটছে। আমরা অভিযান পরিচালনা করছি। প্রথম দিনও (মঙ্গলবার) রাজধানীর নবাবপুর রোডের ইলেকট্রিক মার্কেট ও গুলিস্তান স্টেডিয়াম মার্কেটে অভিযান চালিয়েছি। গতকাল বুধবারও রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চলেছে বলে জানিয়েছেন তিনি। তবে ঠিক কয়টি প্রতিষ্ঠানকে কত জরিমানা করা হয়েছে তা তিনি বলতে পারেননি। 

অভিযানে অংশ নেয়া অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, ব্যবসায়ীরা আমদানিকৃত অথবা দেশি উৎপাদিত মোড়কজাত ইলেকট্রনিক লাইট, ফ্যানসহ বিভিন্ন পণ্যের মোড়কে আমদানিকারকের তথ্য ও মূল্য উল্লেখ করছে না। এতে যেকোনো সময় দাম বৃদ্ধি করা খুচরা ব্যবসায়ীদের জন্য সহজ হয়। ব্যবসায়ীরা পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ের ভাউচার, তারিখ ও স্বাক্ষরসহ সঠিকভাবে সংরক্ষণে রাখছেন না। 
আমদানিকারক কর্তৃক বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স পণ্য সামগ্রী আমদানির সঠিক তথ্য প্রতিষ্ঠানে সংরক্ষিত থাকে না। 

মঙ্গলবার গুলিস্তানে অভিযানের বিষয়ে ভোক্তা অধিদপ্তরের ঢাকাক বিভাগীয় কার্যালয়ের সরকারি পরিচালক ফাহমিনা আক্তার আমার সংবাদকে বলেন, ভোক্তা অধিদপ্তরের ৪৫ ধারায় মঙ্গলবার আরাফাত ইলেকট্রনিক্সকে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। একই দিনে ডিফেন্ডার নামক চার্জার ফ্যানের বিক্রয়মূল্য একেকজনের কাছে ৫০০ থেকে এক হাজার ৫০০ টাকা বেশি রাখায় স্কাইল্যাব ইলেকট্রনিক্সকেও ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। 

তিনি বলেন, গতকালও কারওয়ান বাজারে অভিযান চালিয়েছি। তবে সেখানে ইলেকট্রনিক পণ্যের দোকান তেমন একটা পাওয়া যায়নি। ছোটো ছোটো দোকান। ইলেকট্রনিক পণ্যও নেই তেমন। জানা গেছে, গুলিস্তান স্টেডিয়াম মার্কেটে এক হাজার ৯০০ টাকা চার্জার ফ্যান চার হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রির ঘটনা ঘটছে। 

ব্যবসায়ীদের ক্রয়মূল্যের সাথে মুনাফার সামঞ্জস্য রয়েছে কি-না তা তদারকি করতে রাজধানীর পুরান ঢাকার নবাবপুর রোডের ইলেকট্রিক মার্কেটেও (পাইকারি মার্কেট) অভিযান চালায় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। 

অভিযানে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন-২০০৯ না মেনে ২০ শতাংশের বেশি মুনাফা করায় দ্য লাকি ইলেকট্রিক এজেন্সিকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। ওই অভিযানের নেতৃত্ব দেন অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (তদন্ত) শাহনাজ সুলতানা ও সহকারী পরিচালক (প্রশিক্ষণ ও প্রচার) রজবী নাহার রজনী।
 

Link copied!