Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

তীব্র গরমেও দায়িত্বে অনড়

রায়হান উদ্দিন তন্ময়

জুলাই ২২, ২০২২, ০১:৩৮ এএম


তীব্র গরমেও দায়িত্বে অনড়

সারাদেশে বয়ে যাচ্ছে তীব্র দাবদাহ। বাতাসেও অনুভূত হচ্ছে গরম। সড়কে বাজছে গাড়ির হর্ন ও সাইরেন। শব্দদূষণ আর তীব্র গরমেও দায়িত্ব পালনে অনড় ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা। রাজধানীর ব্যস্ত সড়কগুলোর মতোই ব্যস্ত তারা।

রোদ-বৃষ্টি, ঝড়-ঝঞ্ঝা যাই থাকুক যানবাহনের চলাচল স্বাভাবিক রাখতে সড়কেই থাকতে হয় তাদের। রোদ-বৃষ্টি থেকে বাঁচতে এক হাতে মাথার উপর ধরে রাখেন ছাতা, আরেক হাতে ট্রাফিক সিগন্যাল পরিচালনা করছেন তারা। 

তাদের ইশারায় ছুটে চলে ব্যস্ত এই নগরীর গাড়িগুলো। আবার সড়কে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে পড়তে হয় নানা বিড়ম্বনায়। শুনতে হয় নানা জনের নানা কটূ কথা। সব মিলিয়ে ঢাকা নগরীর জ্যাম কমাতে ও কোটি মানুষের স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচল নিশ্চিতে কাজ করে যাচ্ছেন ট্রাফিক পুলিশ। 

একদিকে সড়কে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। উত্তপ্ত আবহাওয়ায় ঘেমে যাওয়ার পর শরীরেই শুকাচ্ছে ঘাম।

অন্যদিকে সর্দি-জ্বর, ডিহাইড্রেশন ও শব্দদূষণের কারণে অনেক সদস্য রয়েছেন স্বাস্থ্যঝুঁকিতে। সব ধরনের চ্যালেঞ্জকে মাথায় নিয়ে, রাষ্ট্র ও জনগণের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছেন বলে জানান ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা।    

রাজধানীর প্রগতি সরণি, কুড়িল বিশ্বরোড, শেরেবাংলা নগর, সদরঘাট, গুলিস্তান, শাহবাগ এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সূর্য উঠার পর সকাল থেকেই বিকেল পর্যন্ত নগরীতে রোদের তাপমাত্রা থাকে ৩২-৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে। এই তপ্ত রোদেও সড়কের শৃঙ্খলা ঠিক রাখতে এক হাতে ছাতা নিয়ে দায়িত্ব পালন করছেন ট্রাফিক সদস্যরা। 

এছাড়া ধুলার এই নগরীতে ধুলোবালিতে যেমন নাকাল হচ্ছেন তেমনি গরমেও কাহিল হয়ে যাচ্ছেন তার। রোদের তাপমাত্রা বেশি থাকায় তৃষ্ণাও পাচ্ছে বেশি। রাজধানীর সব পুলিশ বক্সগুলোতে স্যালাইন ও পানি সরবরাহ করা হচ্ছে এবং বেশি বেশি পানি পান করারও পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। কোনো কোনো ট্রাফিক সিগন্যালে গাড়ির চাপ বেশি থাকায় সবাই ডিউটি করছেন। 

আবার কোথাও গাড়ির চাপ কম থাকলে সেখানে একজন বা দুইজন ডিউটি করছেন। বাকিরা কিছুক্ষণের জন্য বিশ্রাম নিচ্ছেন। লোকবল কম থাকা ও গাড়ির চাপ বেশি থাকায় কিছু সময়ের জন্য বিশ্রামের সুযোগও মিলছে না। দীর্ঘসময় সড়কে টানা দাঁড়িয়ে থাকায় শরীরের ঘাম শরীরেই শুকাচ্ছে। ফলে অনেকে ঠাণ্ডা-জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছেন। অসুস্থ হলে পুলিশ হাসপাতাল থেকে বা সুবিধামতো স্থান থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে আবার ডিউটি করছেন নিয়মিত। 

এদিকে তাপমাত্রা বেশি থাকায় যাদের হাইপ্রেশার তাদের ডিউটি করা খুবই কষ্ট হচ্ছে। ইউনিফর্ম পরে গরমে দায়িত্ব পালন করা সমস্যাও হচ্ছে বলে জানান দায়িত্বরত ট্রাফিক সদস্য ও সার্জেন্টরা। তা ছাড়া যানবাহনের হর্ন, শব্দদূষণ ও বায়ুদূষণের ফলেও তারা নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন বলে জানান তারা। আবার অনেক জায়গার পুলিশ বক্সগুলো টিনশেডের। সেখানেটাও আগুনের মতো গরম হয়ে যাচ্ছে। ফলে বক্সে বা বসার জায়গাটাতেও বিশ্রাম করাটাও কষ্ট হচ্ছে। 

বিজয় সরণি ট্রাফিক সিগনাল মোড়ে দেখা যায়, এখানে দুজন সার্জেন্ট, চার জন এএসআই-কনস্টেবল নিয়মিত ডিউটি করেন। তাপপ্রবাহ চলমান থাকায় একজন সিগন্যালে দাঁড়াচ্ছেন আরেকজন কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিচ্ছেন। তবে গাড়ির চাপ বেড়ে গেলে সবাইকেই একসাথে কাজ করতে হয়। 

সড়কে কর্মরত ট্রাফিক পুলিশ সদস্য ও সার্জেন্টরা জানান, এই গরমে তো পাঁচ মিনিট রোদে দাঁড়ানো কষ্টকর। কিন্তু এটা আমাদের মহান দায়িত্ব। রাষ্ট্র ও জনগণের কল্যাণে কষ্ট করে কাজ করে যাচ্ছি। গরমে ইউনিফর্ম পরে দায়িত্ব পালন করা বহু কষ্টের। বেশি বেশি পানি ও স্যালাইন পানি খাওয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন। পোশাক ও বোট পরে এই তপ্ত রোদে ডিউটি করা কষ্টের। 

তবে এখন যে কাপড়ে পোশাক রয়েছে তাতে কিছুটা আরাম হচ্ছে। তারপরও রোদ বেশি থাকায় কষ্ট বেশি হচ্ছে। অনেকেই ঠাণ্ডা-জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন। তারা পুলিশ হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়ে ডিউটি করছেন।  

বসুন্ধরা প্রগতি সরণির ট্রাফিক সিগন্যালের ট্রাফিক ইনচার্জ (টিআই) ছারুয়ার দৈনিক আমার সংবাদকে বলেন, ‘শীতের তিন মাস ছাড়া বাকি ৯ মাস তো আমাদের রোদ-বৃষ্টিতে থেকেই কাজ করতে হয়। এখন যে সূর্যের তাপমাত্রা তাতে তো কষ্ট অনেক হচ্ছেই। যানচলাচল স্বাভাবিক রাখতে সব কষ্ট উপেক্ষা করে কাজ করে যাচ্ছি। আমার এখানে একজন মুভিং সার্জেন্ট ও একজন সার্জেন্ট রয়েছেন। 

আর কনস্টেবল আছেন তিন-চারজন। জনবল বেশি থাকলে রোদের মধ্যে কাউকে এক-দুই ঘণ্টার জন্য বিশ্রামের সুযোগ দেয়া যায়। গরম বেশি হওয়ায় তৃষ্ণাও পাচ্ছে বেশি। আমাদেরকে পানি ও স্যালাইন সরবরাহ করা হচ্ছে।’ 

হাইড্রোলিক হর্নের বিষয়ে তিনি বলেন, ২০১৮ সালের সড়ক আইনে এ হর্ন ৫০ শতাংশ কমে গেছে। মানুষ সচেতন হচ্ছে। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি আমরাও শব্দদূষণের ফলে ভুক্তভোগী।’ 

লালবাগ ট্রাফিক বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মেহেদি হাসান বলেন, ‘আমাদের ট্রাফিকে নতুন কোনো লোকবল নেই। আমাদের অনেক লোকবল কম। একই লোকবল দিয়ে কাজ করে যেতে হচ্ছে। গরমে আমাদের অবস্থা খুবই খারাপ। পানি ও স্যালাইন আমরা যতটুকু পারছি ততটুকু ব্যবস্থা করছি। মাঠপর্যায়ের কর্মীদের জন্য সরকারের কোনো ফান্ড নেই। আমাদের ব্যক্তিগত কোনো কিছু নেই। যেহেতু ট্রাফিক সদস্যরা কষ্ট করে অভ্যস্ত, তাই তারা কষ্ট করে যাচ্ছেন।’ 

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মো. মুনিবুর রহমান দৈনিক আমার সংবাদকে বলেন, ‘আমরা যে দায়িত্ব পালন করছি তা গুরুদায়িত্ব। দায়িত্ব পালন না করলে তো ট্রাফিক কাঠামো ভেঙে পড়বে। এ দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নানা চ্যালেঞ্জ রয়েছে। চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করেই সড়কের যানবাহন চলাচল নিশ্চত করতে আমাদের কাজ করে যেতে হচ্ছে। যে গরম পড়ছে তাতে সাধারণ মানুষের যেমন কষ্ট হচ্ছে ট্রাফিক সদস্যদেরও কষ্ট হচ্ছে। তা ছাড়া এই গরমে ইউনিফর্ম পরে গরমে কাজ করা খুবই কষ্ট। 

তবে রাষ্ট্র ও মানুষের কথা চিন্তা করেই আমাদের ট্রাফিক সদস্যরা কাজ করে যাচ্ছেন। সব কিছুকে মাথায় রেখেই আমরা এখনো যেমন কাজ করে যাচ্ছি, ভবিষ্যতেও কাজ করে যাব। এই গরমে সুস্থ থাকতে ও ফিট থাকতে ট্রাফিক সদস্যরা যেন বেশি করে পানি পান করেন সে ব্যাপারে তাদেরকে বলা হচ্ছে। রোদ-বৃষ্টিতে যদি কেউ ঠাণ্ডা-জ্বরে আক্রান্ত হন, তাদের পুলিশের হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। হাইড্রোলিক হর্ন বন্ধে জনগণকে সচেতন করতে কাজ করে যাচ্ছি।’

তীব্র এই গরমে সবার মতো আমাদেরও অনেক কষ্ট হচ্ছে। শরীর ফিট রাখতে সবাইকে বেশি বেশি পানি ও স্যালাইন খাওয়ার জন্য বলা হয়েছে। সব পুলিশ বক্সে স্যালাইন সরবরাহ করা হচ্ছে। রোদ-বৃষ্টি যাই থাকুক সব ধরনের চ্যালেঞ্জ মাথায় নিয়ে, রাষ্ট্র ও জনগণের কল্যাণে কাজ করে আমাদের ট্রাফিক পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে।  

Link copied!