Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

‘চা’ রাজনীতি

আবদুর রহিম

জুলাই ২৫, ২০২২, ১২:৫৪ এএম


‘চা’ রাজনীতি

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে আশঙ্কা, স্বচ্ছতা ও গ্রহণযোগ্যতার প্রশ্নে। নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার মেনে না নিলে নির্বাচনে যাবে না বিএনপি। এ ঘোষণায় আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে সব মহলে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। 

নির্বাচন কমিশন থেকে বলা হয়— বিএনপি যদি জাতীয় নির্বাচনে না আসে তাহলে নির্বাচন ভাবমর্যাদা হারাবে। গণতান্ত্রিক দেশের ইতিহাস নষ্ট হবে। ভোটের আগেই একটি রাজনৈতিক সমঝোতা প্রয়োজন। 

এর মধ্যে চলতি সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি যদি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচি দেয়, তাতেও বাধা দেয়া হবে না, ‘চা’ খাওয়ানো হবে। 

তিনি বলেছেন, ‘বাংলামোটরে যে বাধা দেয়া, সেটি সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিয়েছি। আসুক না হেঁটে হেঁটে যতদূর আসতে পারে। কোনো আপত্তি নেই। আমি বসাব, চা খাওয়াব। কথা বলতে চাইলে শুনব।’ 

এরপরই রাজনীতির মাঠে আলোচনা শুরু হয়— হয়তো খুব শিগগিরই একটি রাজনৈতিক সমঝোতা হতে পারে। যেমনটি একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে হয়েছে। বিএনপি খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে নির্বাচনে যাবে না ঘোষণা দিলেও বেলা শেষে ড. কামাল হোসেনকে নিয়ে সমঝোতার টেবিলে যান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। 

এবারও দ্বাদশ নির্বাচনের আগে মির্জা ফখরুল পুরোনো রূপে ঘোষণা দেন নির্বাচনকালীন সরকার ব্যতীত বিএনপি দ্বাদশ নির্বাচনে যাবে না। 

তবে রাজনৈতিক বিচক্ষণ ব্যক্তিরা মনে করছেন, এবারও যেহেতু দ্বাদশ নির্বাচনের আগ পর্যন্ত মির্জা ফখরুলই বিএনপি মহাসচিব রয়েছেন, শেষ পর্যন্ত একটা সমঝোতা হতে পারে। আলোচনার টেবিলে বসতে পারে। 

বিএনপিতে ভারত ও চীনপন্থি দু’ধরনের নেতার পরিচয় রয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে ভিন্নতা মির্জা ফখরুলের ক্ষেত্রে। তিনি ভারত ও চীন দু’দেশের কাছেই গ্রহণযোগ্য বলে রাজনৈতিকপাড়ার বড় অংশের ভাষ্য রয়েছে। 

দেশে কোনো ধরনের আন্দোলন হোক, রাজনৈতিক সহিংসতা হোক, ফখরুল কোনোভাবেই তা চান না। খালেদা জিয়া আটকের পর আন্দোলনের ছক থাকলেও অজানা কারণে তা শীতল হয়ে যায়। 

খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রে কয়েকটি সভা-সমাবেশ, দোয়া মাহফিল ছাড়া কিছুই করতে পারেনি দলটি। সরকারের করুণায় বর্তমানে সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া শর্তে মুক্তি রয়েছেন।এ পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানের উত্তর দিয়েছেন মির্জা ফখরুল। 

তিনি বলেছেন, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবি মেনে নিলে প্রধানমন্ত্রীর ‘চা’ খেতে সমস্যা নেই। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এলে চা খাওয়াবেন।’ তার আগে বলে দিন— নিরপেক্ষ সরকার সিস্টেম এনে দিচ্ছি। তাহলে চা খাবো, অসুবিধা কি? সমস্যার সমাধান হচ্ছে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার। 

উল্লেখ্য, এর আগে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আহসান হাবিব খান বিএনপির উদ্দেশে বলেন, আসেন, দেখেন, চা খান। সিদ্ধান্ত আপনাদের। 

তবে আপনাদের সহযোগিতা আমাদের দরকার। এর আগে বিএনপি ব্যতীত গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের শঙ্কা প্রকাশ করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, ‘বিএনপি না এলে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে না। 

আমরা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। আমরা মনে করি— বিএনপি যদি এ নির্বাচনে অংশ না নেয়, তাহলে আমাদের যে উদ্দেশ্য— অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজন করা, সেটি হয়তো সফল হবে না। নির্বাচন হয়তো আমরা করব। পত্র-পত্রিকায় পড়েছি, বিএনপি সিদ্ধান্ত নিয়েছে— নির্বাচনে অংশ নেবে না। 

তাদের নিজস্ব কিছু প্রোগ্রাম রয়েছে, নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে কিছু পরিবর্তন করলে নির্বাচনে আসবে। এটি কিন্তু একটি অস্থিরতা সৃষ্টি করছে, সংশয় সৃষ্টি করেছে। বিএনপি যেভাবে নির্বাচন করতে চায়, তা নিয়ে শাসকদলের সাথে বসে বিষয়টির সুরাহা করতে পারে।’ 

এ আহ্বানের পর প্রধানমন্ত্রী বিএনপিকে চায়ের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন রাজনৈতিক বক্তব্যের মাধ্যমে। নির্বাচন কমিশনও চায় ‘চা’ আলোচনায় রাজনৈতিক সমঝোতা হোক। 

এমন প্রেক্ষাপটে মির্জা ফখরুল গতকাল জানিয়েছেন, নির্বাচনকালীন সরকার মেনে নিলে আলোচনায় বসা যায়। 

রাজনীতিতে চোখ রাখা ব্যক্তিরা বলছেন, একাদশের মতো দ্বাদশেও মির্জা ফখরুলে সমঝোতার পথ বের হচ্ছে। খুব শিগগিরই এই ‘চা’ রাজনীতির মাধ্যমে একটি সমঝোতায় পৌঁছা যাবে।

Link copied!