Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

রাতে নয় বিএনপি প্রকাশ্যে সিল মারত : প্রধানমন্ত্রী

মো. মাসুম বিল্লাহ

আগস্ট ২, ২০২২, ০১:৫৭ এএম


রাতে নয় বিএনপি প্রকাশ্যে সিল মারত : প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে ‘জাতীয় শোক দিবস’ উপলক্ষে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘরে কৃষক লীগ আয়োজিত ‘স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি’ অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন-মেহেদী জামান

বিএনপি রাতে নয়, নির্বাচনে প্রকাশ্যে সিল মারত বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘রাতের ভোট নয়, প্রকাশ্যে সিল মারত বিএনপি নেতারা। ভোট দেয়ার অধিকার ছিল না বিএনপির আমলে। তারা আবার নির্বাচন নিয়ে কথা বলে কোন মুখে? বিএনপি নেতারা হাতে হারিকেন নিয়ে আন্দোলন করছে। তাদের হাতে হারিকেন ধরিয়ে দিতে হবে। তাদের সবার হাতে হারিকেন ধরিয়ে দেন আর দেশের মানুষকে আমরা নিরাপত্তা দেবো, দেশের মানুষ যাতে ভালো থাকে আমরা সেই ব্যবস্থা নেবো, সে কাজটা করব।’

গতকাল   সোমবার দুপুরে ১৫ আগস্ট উপলক্ষে বাংলাদেশ কৃষক লীগ আয়োজিত রক্তদান কর্মসূচির উদ্বোধনের আগে দেয়া বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে কর্মসূচির উদ্বোধন করেন ও বক্তব্য রাখেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৯৯৬-২০০১ এটা তো একটি স্বর্ণযুগ ছিল মানুষের জন্য। ২০০১ আমাদের আসতে দেয়নি ক্ষমতায়। সেটিও একটি চক্রান্ত ছিল। আমরা গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দেইনি বলে আসতে পারিনি; এটি হলো বাস্তবতা।

তিনি বলেন, ২০০১-০৬ বিদ্যুৎ চার হাজার ৩০০ মেগাওয়াট থেকে তিন হাজার ২০০ তে নেমে এসেছিল। আমরা ৪০ লাখ টন খাদ্য ঘাটতি নিয়ে ৯৬ সালে সরকার গঠন করি। ২০০১ সালে যখন ক্ষমতা থেকে বিদায় নেই তখন ২৬ লাখ টন উদ্বৃত্ত রেখে এসেছিলাম। ২০০৯ সালে যখন সরকার গঠন করি আবার সেখানে দেখি ২১ লাখ টন খাদ্য ঘাটতি। অর্থাৎ দেশকে খাদ্য ঘাটতি রেখে মানুষকে ভিক্ষুক জাতি হিসেবে বিশ্বে পরিচয় করানো ও ভিক্ষা চেয়ে নিয়ে আসা। এটিও একটি ব্যবসা। খাদ্য কিনবে ব্যবসা করবে এবং কমিশন খাবে— এটিই ছিল বিএনপির নীতি। অস্ত্র চোরাকারবারির সাথে তারা সম্পূর্ণ জড়িত। গোয়েন্দা সংস্থা দিয়ে এ সমস্ত কাজ করান হতো। ১০ ট্রাক অস্ত্রের চালান ধরা পড়েছে, মাত্র একটি চালান ধরা পড়েছে এরকম কত চালান এ দেশে আসছে-গেছে। দেশকে সম্পূর্ণ পরনির্ভরশীল করা। দেশের মানুষের নিরাপত্তা সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দেয়া জঙ্গিবাদ সন্ত্রাস সৃষ্টি করা পাঁচবার দুর্নীতিতে বাংলাদেশ এক নম্বরে ছিল। দুর্নীতি, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, খুনখারাবি প্রত্যেকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অস্ত্রের ঝনঝনানি, মেধাবী শিক্ষার্থীদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে তাদের লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে ব্যবহার করা, শিক্ষার সম্পূর্ণ পরিবেশ ধ্বংস করা— এটিই ছিল বিএনপির চরিত্র।’

নির্বাচন প্রসঙ্গে বিএনপির সমালোচনার জবাব দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০০১ সালের ১ অক্টোবরে নির্বাচন। সে নির্বাচন কি নির্বাচন হয়েছিল? সেখানে কি কোনো মানুষ ভোট দিতে যেতে পেরেছে? সমস্ত বাংলাদেশে সেনাবাহিনী নিয়োগ করা হয়েছে। সিল মারা বলে, এরা তো প্রকাশ্যে সিল মারত। এটি রাতের ভোট না, একেকটি বাসে করে যাবে বিএনপির সন্ত্রাসীরা একেকটি বুথে ঢুকবে সিল মারবে বাক্স ভরবে চলে আসবে। সেটি না পারলে সোজা ঘোষণা। এসব প্রক্রিয়ায় মাগুরা নির্বাচন, মিরপুরে নির্বাচন ঢাকা-১০ এ ফালু যখন নির্বাচন করে এগুলো তো মানুষের চোখে দেখা। তখন মানুষ তো ভোট দিতে পারেনি, ভোট দেয়ার অধিকারই ছিল না বিএনপির আমলে। সামরিক শাসক অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে যে দল গঠন করেছিল ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে, তাদের কাছে এখন নানান রকম নীতিকথা শুনতে হয়। যারা এ বাংলাদেশকে বানিয়েছিল অস্ত্র চোরাকারবারির একটি জায়গা। সন্ত্রাসীর দেশ জঙ্গিবাদের দেশ, বাংলা ভাই সৃষ্টির দেশ। তারাই এখন নীতির কথা বলে।’

‘তাদের কাছে কথা শুনতে হয় নির্বাচন নিয়ে কথা, তারা কথা বলে কোন মুখে? নির্বাচনের ভিত্তি ধরে তো তাদের ক্ষমতায় আসা না, ক্ষমতায় আসা অবৈধভাবে অথবা দেশ বিক্রির মুচলেকা দিয়ে আসা এই তো’- যোগ করেন শেখ হাসিনা। সদ্য শেষ হওয়ার শুমারি নিয়ে প্রশ্ন তোলায় তাদের কড়া জবাব দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জনসংখ্যা যখন সাড়ে ১৬ কোটির উপরে সেটাও আবার কারো হিসাবে পছন্দ হচ্ছে না। তাদের জিজ্ঞেস করব হিসাবটা পছন্দ হয় না কেন? তাহলে নিজেরাই সন্তান জন্মাতে থাকুক, বা জনসংখ্যা বাড়াতে থাকুক, যাদের পছন্দ না, তারা সেটা করুক আমরা খাবার দেবো কোনো আপত্তি নেই। আমরা চাই প্রত্যেকটি পরিবার যেন সুখী পরিবার হয়, সুন্দরভাবে বাঁচতে পারে।’

বর্তমান বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলায় সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বলব— দেশবাসীর কাছে যেতে হবে, তাদের আহ্বান জানাতে হবে। আমাদের খাদ্য আমরা উৎপাদন করব। আমরা কৃষকদের ভর্তুকি দিচ্ছি। কৃষকদের উপকরণ কার্ড আমরা দিয়ে দিয়েছি, তারা ন্যায্য মূল্যে সার কিনতে পারছে। ১০ টাকার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে তার মাধ্যমে আমরা ভর্তুকি পাঠাই। কৃষির যান্ত্রিকীকরণের জন্য আমরা ৭০ ভাগ পর্যন্ত তাদের বিশেষ ভর্তুকি দিচ্ছি। শিল্প গড়ে তোলার ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি। সাক্ষরতার হার আমরা বৃদ্ধি করেছি। দেশের প্রত্যেকটি মানুষের মধ্যে আমরা একটি চেতনা উদ্বুদ্ধ করেছি। ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় কৃষক লীগের সভাপতি সমীর চন্দ ছন্দের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম স্মৃতির সঞ্চালনায় শোক দিবসের আলোচনা ও রক্তদান কর্মসূচিতে আরো বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, ড. আব্দুর রাজ্জাক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম প্রমুখ।
 

Link copied!