Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪,

শক্তিশালী তৃণমূল গঠনে আসছে নির্দেশনা

রফিকুল ইসলাম

আগস্ট ১৪, ২০২২, ০২:২৫ এএম


শক্তিশালী তৃণমূল গঠনে আসছে নির্দেশনা

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি, তৃণমূলের সম্মেলন ও জেলা-উপজেলা পর্যায়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক অবস্থার সার্বিক পরিস্থিতি জানতে আজ ৮ সাংগঠনিক সম্পাদকদের সাথে বৈঠকে বসবেন দলটির দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে তাদের সাথে বৈঠকে বসবেন তিনি। এ বৈঠক থেকে শক্তিশালী তৃণমূল নেত্বত্ব গঠনে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের কঠোর নির্দেশনা দিতে পারেন আওয়ামী লীগপ্রধান।  

সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের তৃণমূলের রাজনীতি হ-য-ব-র-ল অবস্থায় রয়েছে। অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-কোন্দল, বিভক্তি-বিভাজন, হানাহানি-মারামারি ও নেতায় নেতায় দূরত্ব বেড়েছে বহুগুণে। সৃষ্টি হয়েছে বলয়ভিত্তিক রাজনীতি। দলটির স্থানীয় শীর্ষ নেতাদের কোণঠাসা করে পুরো এলাকায় ক্ষমতার রাজত্ব করছেন দলটির দলীয় সংসদ সদস্যরা। সৃষ্ট এসব সমস্যা সমাধানে বারবার উদ্যোগ নিয়েও ব্যর্থ হয়েছেন আওয়ামী লীগের বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্তরা।

এমন অবস্থায় তৃণমূলে ঐক্য ফিরিয়ে আনার বিকল্প দেখছেন না খোদ দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা। মূলত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের চিন্তা মাথায় রেখেই চলতি বছরেই দলের ঐক্য ফিরিয়ে আনতে চান তিনি। এজন্য পর্যায়ক্রমে প্রথমে দলের ৮ সাংগঠনিক এবং পরে ধারাবাহিকভাবে জেলা-উপজেলা পর্যায়ের নেতাদের সাথে বৈঠকে বসবেন তিনি।

তথ্যমতে, বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারণে দীর্ঘদিন সাংগঠনিক কার্যক্রম করতে পারেননি আওয়ামী লীগের বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। তারা সাংগঠনিক কার্যক্রম বন্ধ রেখে ব্যস্ত ছিলেন মানবিক কার্যক্রমে। তবে এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় চলতি আগস্টের পর থেকে এ কার্যক্রমে আরও জোর দেয়ার চিন্তা করা হচ্ছে।

এরই অংশ হিসেবে আজ ১৪ আগস্ট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত ৮ সাংগঠনিক সম্পাদককে নিয়ে গণভবনে বৈঠকে বসবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। বৈঠকে দলীয় প্রধান সারা দেশের সাংগঠনিক অবস্থার কথা জানবেন। কোথায় কোথায় দ্বন্দ্ব-কোন্দল চলমান, কোথায় এমপিরা ক্ষমতার প্রভাব দেখাচ্ছেন— আজকের বৈঠকে সেসব বিষয়ে জোর দিতে পারেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।

সৃষ্ট সমস্যা সমাধানের জন্য করণীয় কী— কীভাবে সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করা যায়, কীভাবে তৃণমূলকে ঐক্যবদ্ধ করা যায়, অপশক্তি-অরাজনৈতিক শক্তি, সাম্প্রদায়িক অপশক্তি, বিএনপি-জামায়াতের ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত ও অপপ্রচারের বিরুদ্ধে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাদের কীভাবে ঐক্যবদ্ধ করানো যায়— সে বিষয়ে নিকনির্দেশনা দিতে পারেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।

সাংগঠনিক সম্পাদকরা বলছেন, আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের চেয়ে এ বৈঠককে আলাদা গুরুত্ব দিচ্ছেন ৮ সাংগঠনিক সম্পাদকরা। ইতোমধ্যে তারা নিজ নিজ দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভাগের সাংগঠনিক রিপোর্ট তৈরি করেছেন। কত জেলা-উপজেলায় সম্মেলন হয়েছে, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের কোথায় এবং কেন নৌকা হেরেছে, তৃণমূলের দ্বন্দ্বের কারণ কী, এমপিরা কীভাবে নিজেদের প্রভাব ধরে রাখছেন— সেসব বিষয়ে সার্বিক রিপোর্ট তৈরি করেছেন।

আজকের বৈঠকে আনুষ্ঠানিকভাবে সেসব রিপোর্ট দলীয় প্রধানের কাছে হস্তান্তর করা হবে। ওই রিপোর্টের পর তা সমাধানের জন্য করণীয় কী— সে বিষয়ে নির্দেশনা দেবেন দলীয় প্রধান।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক আমার সংবাদকে বলেন, সংগঠনের সার্বিক বিষয় জানতেই সাংগঠনিক সম্পাদকদের সাথে বসবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি সাংগঠনিক রিপোর্ট দেখবেন, দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের কথা শুনবেন, সংগঠনের অভ্যন্তরে কোনো সংকট আছে কি না, সেসব বিষয় জানতে চাইবেন এবং সংকট থেকে উত্তরণের পথ কী— সে বিষয়ে দিকনির্দেশনা  দেবেন। এ বৈঠকে সাংগঠনিক কার্যক্রমকে ব্যাপকভাবে গুরুত্ব দেয়া হবে।    

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন আমার সংবাদকে বলেন, দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে ৮ সাংগঠনিক সম্পাদকের সাথে বৈঠকের গুরুত্ব অনেক। সাংগঠনিক কার্যক্রম কীভাবে আরও জোরদার করা যায়, অপরাজনৈতিক শক্তি, সাম্প্রদায়িক অপশক্তি, বিএনপি-জামায়াতের ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত ও অপপ্রচারের বিরুদ্ধে তৃণমূলকে কীভাবে ঐক্যবদ্ধ করা যায়— আজকের বৈঠক থেকে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা নির্দেশনা দেবেন। সেখানে আমরা নিজেদের মতামত ও সাংগঠনিক রিপোর্ট তুলে ধরব।

বিতর্কিত এমপি ও স্থানীয় নেতাদের দ্বন্দ্বের বিষয়গুলো সভানেত্রীর কাছে তুলে ধরবেন কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে আহমদ হোসেন বলেন, যেসব বিভাগে এমন ঘটনা আছে, অবশ্যই সেসব বিভাগের বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্তরা নিজেদের সাংগঠনিক রিপোর্টে তুলে ধরবেন।

এগুলো নিয়ে অবশ্যই আলোচনা হতে পারে। কারণ, এগুলো সাংগঠনিক কার্যক্রমের অংশ। আমাদের টার্গেট সফলভাবে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন শেষ করা এবং নৌকার বিজয় নিশ্চিত করা। সেই লক্ষ্য নির্ধারণ করা হবে বৈঠকে।  

জানা যায়, আজ সংগঠনিক সম্পাদকদের সাথে বৈঠকের পর আগামী মাস থেকে তৃণমূল নেতাদের সাথে ধারাবাহিক বৈঠকে বসবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। সেখানে তৃণমূল নেতাদের কথা শুনবেন তিনি। কোথাও সমস্যা থাকলে তাও সমাধান করে দেবেন। মূলত দলীয় প্রধানের টার্গেট হলো, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে তৃণমূল পর্যায়ে আওয়ামী লীগের ঐক্য ফিরিয়া আনা।

Link copied!