Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪,

সাতক্ষীরা মেডিকেল ও নলতা ম্যাটসে দুর্নীতির তদন্তে দুদক

কাজী নাসীর উদ্দীন, সাতক্ষীরা

কাজী নাসীর উদ্দীন, সাতক্ষীরা

আগস্ট ১৯, ২০২২, ০১:৪৮ এএম


সাতক্ষীরা মেডিকেল ও নলতা ম্যাটসে দুর্নীতির তদন্তে দুদক

সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাড়ে ছয় কোটি টাকার প্যাক্স মেশিন ক্রয়ে দুর্নীতি ও কালিগঞ্জ উপজেলার নলতা ম্যাটস ও আইএইচটির আসবাবপত্র এবং খেলার সামগ্রীসহ অন্যান্য জিনিসপত্র ক্রয়ে সরকারের বিপুল পরিমাণ অর্থ অতিরিক্ত অপচয়ের অভিযোগে দায়েরকৃত দুদকের মামলার তদন্তকার্য অব্যাহত রয়েছে। দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে দুটি টিম সাতক্ষীরায় এসে গত মঙ্গল ও বুধবার তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন।

দুদকের দায়িত্বশীল সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করে জানায়, অচিরেই মামলার অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করার লক্ষ্যে দ্রুত গতিতে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরীক্ষা-নীরিক্ষার সামগ্রিক তথ্য বছরের পর বছর জমা রাখার জন্য (তথ্যভাণ্ডার) প্যাক্স মেশিন ক্রয়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন মেডিকেল হাসপাতালের তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক ডা. শাহাজান আলী।

সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দরপত্র আহ্বানপূর্বক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিযুক্ত করে মেশিন সরবরাহের আগেই বিল পরিশোধের অভিযোগে বিষয়টি গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়। এক পর্যায়ে প্রাথমিক তদন্তে মাঠে নামে দুদক। প্রাথমিক তদন্তে মেডিকেল হাসপাতালে ওই মেশিন না এলেও বিল পরিশোধের সামগ্রিক কাগজপত্র জব্দ করে দুদক। অনিয়মের বিষয়টি প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় বিগত ২০১৯ সালের ৩১ অক্টোবর দুদক বাদী হয়ে একটি মামলা করে।

ওই মামলার বর্তমান তদন্তকারী কর্মকর্তা এডি রাকিবুল হায়াত গত  মঙ্গলবার সাতক্ষীরায় আসেন। তিনি গত মঙ্গল ও বুধবার কয়েক দফায় সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন অফিস ও মেডিকেল হাসপাতালে যান। ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্টদের লিখিত বক্তব্য গ্রহণপূর্বক তদন্তকার্য সম্পন্ন করেন।

তিনি জানান, স্বাস্থ্য খাতের আলোচিত এই মামলার তদন্তকার্য দ্রুত গতিতে চলছে। ক্রয়কৃত পণ্য প্রতিষ্ঠান না পেয়ে কীভাবে সরকারি অর্থ বিল পরিশোধ করলেন তার সঠিক জবাব এখানো মেলেনি। ফলে তদন্তকার্য শেষ হলেই অচিরেই আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে।

এদিকে অপর এক সূত্র জানান, দুদকের এডি শহিদুর রহমান এসেছেন জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার নলতা মেডিকেল অ্যাসিসটেন্ট ট্রেনিং স্কুল (ম্যাটস) ও ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজির (আইএইচটি) আসবাবপত্র ও খেলার সামগ্রী ক্রয়ে দুর্নীতির অভিযোগে দায়েরকৃত দুটি মামলার তদন্তকাজে।

দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, নলতা আইএইচটির শিক্ষার্থীদের খেলার জন্য বিপুল খেলার সামগ্রী ক্রয় করা হয় বিগত ২০২০ সালে। তৎকালীন এই প্রতিষ্ঠানের চলতি দায়িত্বে থাকা সাবেক সিভিল সার্জন ডা. তৌহিদুর রহমানসহ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের যোগসাজসে অসৎ উদ্দেশ্যে বাজার মূল্যের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি দামে খেলার সামগ্রী ক্রয় করে অনিয়মের আশ্রয় নেন।

বিষয়টি গণমাধ্যমে এলে তদন্তে মাঠে নামে দুদক। দুদকের প্রাথমিক তদন্তে খেলার সামগ্রী ক্রয়ে বাজার মূল্যের চেয়ে অতিরিক্ত মূল্যে ক্রয় করে সরকারের ২০ লাখ ৬১ হাজার ৩৫০ টাকা ব্যয় দেখায়। ওই ঘটনায় দুদক বাদী হয়ে ২০২০ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারাসহ দণ্ডবিধির ৪০৯, ৪২০, ১০৯ ধারায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানসহ কয়েকজনের নামে মামলা করে।

এছাড়াও ম্যাটসের আসবাবপত্র ক্রয়ে বাজার মূল্যের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি দামে আসবাবপত্র ক্রয়ের অভিযোগ দুদকের প্রাথমিক তদন্তে প্রমাণিত হয়। দুদকের প্রাথমিক তদন্তে এই কেনাকাটায় সরকারের অতিরিক্ত ৯৮ লাখ দুই হাজার ৮১০ টাকা ব্যয় দেখিয়ে নিজেরা হাতিয়ে নেয় বলে প্রমাণ পায়। ফলে দুদক বাদী হয়ে বিগত ২০২০ সালের ৩ জুন দণ্ডবিধির ৪০৯, ৪২০, ২১৮ ও ১০৯ ধারাসহ ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় মামলা করে।

আলোচিত ওই দুটি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের এডি শহিদুর রহমান মঙ্গলবার সাতক্ষীরায় আসেন। তিনি গত মঙ্গল ও বুধবার এসব বিষয় নিয়ে তদন্ত কার্যক্রম  পরিচালনা করেছেন।

একই সাথে এই তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনায় সহয়তার জন্য ডা. মো. মেহেদী হাসান, ডা. শেখ আকছেদুর রহমান, ডা. মো. আব্দুল লতিফ, ডা. শেখ তৈয়েবুর রহমান ও স্টোরকিপার মামুনুর রশিদকে উপস্থিত থাকতে দুদকের পক্ষ থেকে বার্তা দেয়া হয়। দুটি মামলায় ১৬ ও ১৭ আগস্ট তাদের উপস্থিত থাকতে গত ৮ আগস্ট ওই পত্র দেয় দুদক।

এসব বিষয় নিয়ে দুপুরে দুদকের এডি রাকিবুল হায়াতের সাথে কিছু কথা হয়। তিনি দু-একটি কথা বলে পরে জানাবেন বলে জানালেও আর যোগাযোগ করা যায়নি। স্বাস্থ্য খাতে অপ্রতিরোদ্ধ দুর্নীতি মধ্য দিয়ে সরকারের হাজার হাজার কোটি টাকা সংশ্লিষ্টদের আত্মসাতের ঘটনায় বিব্রত জেলাবাসী। এসব দুনীতির সাথে জড়িতদের তদন্তপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা জরুরি বলে মনে করে জেলাবাস।

Link copied!