Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

ফখরুল-রিজভীর ভারত বিরোধিতায় দলে অস্বস্তি

আবদুর রহিম

সেপ্টেম্বর ৮, ২০২২, ০১:৩৬ এএম


ফখরুল-রিজভীর ভারত বিরোধিতায় দলে অস্বস্তি

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীর প্রকাশ্যে ভারত বিরোধিতায় বিএনপিতে অস্বস্তি। দলের দুই স্থায়ী কমিটির সদস্য ও আন্তর্জাতিক উইংয়ে সম্পৃক্ত এক সদস্যর কাছে মন্তব্যে চাইলে তারা এ নিয়ে মতামত দিতে নারাজ। তবে আন্তর্জাতিক উইংয়ের এক সদস্য জানান, এটি সিনিয়রদের অভিজ্ঞতা, দলের কোনো ভাষ্য নয়। আনুষ্ঠানিকভাবে এ নিয়ে বিএনপি কিছু এখনো জানায়নি।

জ্যেষ্ঠ একাধিক নেতা বলেছেন, দলের মহাসচিব শেখ হাসিনার ক্ষমতা লোভের বিষয়টি তুলে ধরেছেন, ভারতের বিরোধিতা করেনি। আর প্রকৃতপক্ষে শেখ হাসিনা ভারত থেকে কিছুই নিয়ে আসতে পারছেন না। একজন প্রধানমন্ত্রীর বিদেশ সফরের পর প্রাপ্তি থাকে অনেক, সেখানে অনেক শূন্যতা রয়েছে এটিই শীর্ষ নেতারা বলেছেন। তিস্তা চুক্তি নিয়ে কিছুই হয়নি, রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে কোনো বার্তা আসেনি।  

তবে অন্যরা এও বলছেন, দলের দুই মুখপাত্রকে আরো কৌশলী হয়ে বক্তব্যে দিলে ভালো হতো। কারণ ভারতের বিরোধিতা করে কোনোভাবে রাজনৈতিক সুবিধা ভোগ করা যাবে না। সুসময়-দুঃসময়ে ভারতকে সবসময় প্রয়োজন হবে। কূটনৈতিক দিকগুলো খেয়াল করা আরো সতর্ক থাকা দরকার ছিল। দেন দরবার করতে ভারতে যাওয়া, ভারত থেকে কিছু না পাওয়া, ভারতের দয়া নিয়ে ক্ষমতার যাওয়া চিন্তা ইত্যাদি বক্তব্যগুলো আরো সতর্কতার সাথে দেয়া উচিত ছিল। রাজনৈতিক উত্তর প্রধানে শেখ হাসিনা ও সরকারের হিসেবে তুলে ধরাকে যৌক্তিক মনে করা হলেও ভারতের প্রসঙ্গের জন্য খারাপ কিছু হতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।  
   
বিএনপিপন্থি এক বুদ্ধিজিবী মনে করছেন, শেখ হাসিনা কৌশলগত দিকনির্দেশনা দিয়েছেন এবং ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের সমসাময়িক ও ভবিষ্যৎ গতিপথ গঠনে মূল্য যোগ করেছেন যা শক্তিশালী। ভারত শুধু তার সদিচ্ছা নয়, তার সম্পদ ও তার সামর্থ্যকে  দুই দেশের অভিন্ন মঙ্গলকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার আগ্রহী হয়েছে। শেখ হাসিনা সরকার যে কৌশলে এগিয়েছে বিএনপির সেই পথে হাঁটা উচিত ছিল। অনেক ক্ষেত্রে বিএনপির গ্রহণযোগ্যতা আওয়ামী লীগের চেয়েও বেশি ভারতের কাছে। শুধুমাত্র বিএনপির অদূরদর্শিতার কারণে অনেক জায়গা থেকে যেতে হচ্ছে।

জানা যায়, গত ৫ সেপ্টেম্বর একটি অনুষ্ঠানে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, অতীত অভিজ্ঞতা হতাশার। আমরা প্রত্যেকবার আশা করেছি যে, এবার প্রধানমন্ত্রী আমাদের জন্য কিছু আসবেন। প্রত্যেকবার দেখেছি অত্যন্ত হতাশার সঙ্গে, নিরাশার সঙ্গে— দিয়ে এসেছেন, নিয়ে আসেননি।

এর পরদিন গত ৬ সেপ্টেম্বর আরেকটি অনুষ্ঠানে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘জনসমর্থনহীন’ সরকার বলেই ভারতের সাথে অভিন্ন সমস্যাগুলোর সমাধান করতে পারছে না। ভারতের সাথে যে আমাদের অভিন্ন সমস্যাগুলো আছে, অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন সমস্যা, সীমান্তে বাংলাদেশের নাগরিকদের হত্যা করা এবং অন্যান্য যে সমস্যাগুলো আছে এই সমস্যাগুলোর সমাধান বাংলাদেশ সরকার এখন পর্যন্ত করতে পারেনি। কারণ ওদের পেছনের জনগণের সমর্থন নেই— সেটাই হচ্ছে বড় কারণ। সে জন্য এখন পর্যন্ত সেই শক্তি নিয়ে এই সরকার কোনো কাজ করতে পারেনি।

ভারতের পালাম বিমানবন্দরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা নিয়ে তিনি আরো বলেন, ওরা (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে) যেভাবেই রিসিভ করুক, তারা যাবে ও সেটা নিয়ে তাদের খুব একটা বড় রকমের সমস্যা থাকবে না। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আগের যে বক্তব্যগুলো এবং এই সরকারের বেশির ভাগ মন্ত্রীর যে বক্তব্যগুলো সেই বক্তব্য তো খুব স্পষ্ট কারণ। এই সরকার একেবারের একটি নতজানু সরকার। এই সরকার তাদের বন্ধুদের সমর্থন ছাড়া টিকে থাকা কঠিন আছে এবং বন্দুক-পিস্তল নিয়ে তাদের টিকে থাকা কঠিন হবে। তারা চাইবে যে, সামনে নির্বাচনের আগে সেটিকে যদি কোনো রকম আরো শক্তিশালী করতে পারে।

গতকাল বুধবার আরেকটি অনুষ্ঠানে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীও প্রকাশ্যে ভারত নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্যে করেছেন। তিনি বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিছুদিন আগে ভারতে যে বক্তব্য দিয়েছেন ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য প্রধানমন্ত্রী এর দেনদরবার করতে ভারত গেছেন কি-না সন্দেহ হচ্ছে। এই দেনদরবার করতে গিয়ে বাংলাদেশের স্বার্বভৌমত্ব কতটুকু বিক্রি করছেন সেটিই এখন দেখার বিষয়। জনগণ চেয়ে আছেন প্রধানমন্ত্রী সেখানে গিয়ে কি করছেন কতটুকু স্বার্বভৌমত্ব বিক্রি করে নিজের অবৈধ ক্ষমতা টিকে রাখার চেষ্টা করছেন। প্রধানমন্ত্রী ওখানে (ভারত) গিয়ে তো তিস্তা চুক্তি করতে পারেননি। এখনো আমাদের যে ন্যায্য পাওনা আমাদের অভিন্ন নদীগুলো সেগুলোর আপনি একটিও আদায় করতে পারেননি। আজকে জোর করে অবৈধভাবে ক্ষমতায় আছে অথচ আমাদের ন্যায্য হিস্যা একবারও আদায় করতে পারেনি।

বিএনপির শীর্ষ দু’নেতার বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে গণস্বাস্থ্যেকেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী আমার সংবাদকে বলেন, ‘আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি ভারত থেকে আমাদের কোনো স্বার্থ আদায় করে নিয়ে আসেন এতে আমাদের দুঃখিত হওয়ার কিছুই নেই। বরং প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ দেয়া উচিত এবং প্রধানমন্ত্রী যে ভালো কাজটা করেন তার সমর্থন দেয়া উচিত। আমাদের রাজনৈতিক শিষ্টাচার থাকা দরকার। এখন কোনো কিছু না বুঝে সব জায়গায় টানাটানি করা তো ঠিক নয়। আর ভারত আমাদের সবসময় বন্ধু দেশ। ভারত কিংবা শেখ হাসিনার সব বিষয়কে রাজনৈতিক বক্তব্যে দেয়ার ক্ষেত্রে আরেকটু যত্নবান হওয়া দরকার হয়। কিন্তু অনেক সময় তারা (বিএনপি) সেটি ভুলে যায়।’

Link copied!