Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪,

ফের বাড়ছে সংক্রমণ

মাহমুদুল হাসান

সেপ্টেম্বর ২১, ২০২২, ০২:১৩ এএম


ফের বাড়ছে সংক্রমণ

করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ফের চোখ রাঙাচ্ছে। আগের সপ্তাহের চেয়ে গত সপ্তাহে শনাক্ত বেড়েছে ২৮ শতাংশের বেশি। গত সপ্তাহে মৃত পাঁচজনের মধ্যে তিনজনই কোনো টিকা গ্রহণ করেনি। প্রতিদিন বাড়ছে শনাক্তের হার। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে বাধ্যতামূলক মাস্ক পরিধান, টিকাদান কার্যক্রমে জোরারোপ এবং বেসরকারি পর্যায়ে করোনা পরীক্ষার খরচ কমানোসহ পাঁচ দফা সুপারিশ করেছে কোভিড-১৯-সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। নয়তো আগামী মাস থেকে কোভিড পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে।

এদিকে আগামী মাসের শুরুতে প্রতিরোধক টিকার প্রথম ডোজ বন্ধ হতে যাচ্ছে। কারণ টিকায় মানুষের আগ্রহ কমে যাওয়ায় অব্যবহূত টিকার মেয়াদ ফুরিয়ে আসছে। অন্যদিকে ৩৩ লাখ মানুষ কোনো টিকা গ্রহণ করেনি। বুস্টার ডোজ এবং দ্বিতীয় ডোজেও রয়েছে চরম গাফিলতি।

সম্প্রতি স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ৩ অক্টোবর থেকে প্রথম ডোজ দিতে পারব না, দ্বিতীয় ডোজ দেয়াও কষ্ট হয়ে যাবে। কারণ অনেক টিকার মেয়াদোত্তীর্ণ তারিখ শেষ হয়ে যাবে, টিকা থাকবে না হয়তো। তিনি বলেন, প্রথম ডোজ নেয়নি প্রায় ৩৩ লাখ মানুষ, দ্বিতীয় ডোজ নেয়নি প্রায় ৯৪ লাখ মানুষ। পাশাপাশি বুস্টার ডোজ দেয়া হয়েছে প্রায় চার কোটি মানুষকে। তবে সাধারণ মানুষকে টিকায় উদ্বুদ্ধ করতে আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত আরেকটি টিকা ক্যাম্পেইন চালু করার কথা বলা হয়েছে।

জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, যারা করোনা প্রতিরোধক টিকার এক ডোজও গ্রহণ করেনি কোভিডে তাদের সবচেয়ে বেশি জটিলতা তৈরি হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে বয়স্ক লোক হলে আরও সঙ্কট তৈরি করবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনা ভাইরাস-বিষয়ক ৩৭তম এপিডেমিওলজিকাল রিপোর্টের তথ্যমতে, গত ১২ সেপ্টেম্বর থেকে ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শেষ সপ্তাহে ২৭ হাজার ৩২৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এতে শনাক্ত হয়েছে দুই হাজার ৭২৭ জন। তার আগে ৫ সেপ্টেম্বর থেকে ১১ সেপ্টম্বর এক সপ্তাহে ২৮ হাজার ৩৫৭ জনের নমুনা পরীক্ষায় দুই হাজার ১২৬ জনের নমুনায় করোনা শনাক্ত হয়। এ সপ্তাহের ব্যবধানে রোগী শনাক্তেরহার বেড়েছে ২৮ দশমিক ৩ শতাংশ। সংখ্যার হিসেবে ৬০১ জন।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রতিবেদন মতে, দেশে মোট জনসংখ্যার পরিমাণ ১৭ কোটি তিন লাখ ১৭ হাজার ৭৭ জন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গত সোমবারের তথ্যমতে, সারা দেশে ১০ কোটি ৫২ লাখ ৬৮ হাজার ২৬ জন সুরক্ষা ওয়েবসাইটে নিবন্ধন করেছেন। তার মধ্যে জাতীয় পরিচয়পত্র নাম্বার ব্যবহার করে করেছেন ৯ কোটি ১৪ লাখ ৯৩ হাজার ৫৯৭ জন। পাসপোর্ট নাম্বার দিয়ে নিবন্ধন করেছেন ১৬ লাখ ৭৪ হাজার ২২৫ জন এবং জন্মসনদের মাধ্যমে নিবন্ধন করেছেন এক কোটি ২১ লাখ ২০৪ জন। অ্যাপে নিবন্ধনের বাইরেও বিভিন্ন সময়ে সরকার পরিচালিত গণটিকার মাধ্যমে আরও কয়েক কোটি মানুষ টিকা গ্রহণ করেছেন। সেই হিসেবে এ পর্যন্ত প্রথম রেডাজ টিকা নিয়েছেন ১৩ কোটি ১১ লাখ ২৭ হাজার ৩৬৪ জন। তার মধ্যে দ্বিতীয় ডোজ টিকা নিয়েছেন ১২ কোটি ১৫ লাখ ৮৩ হাজার ৭৭৬ জন।

অন্যদিকে বুস্টার ডোজ নিয়েছেন মাত্র চার কোটি ৪৯ লাখ ২৮ হাজার ৯১৬ জন। ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সিদের মধ্যে প্রথম ডোজ নিয়েছে এক কোটি ৭৩ লাখ ৬২ হাজার ৩১ জন। দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছে এক কোটি ৬১ লাখ ২৮ হাজার ১৮ জন। পাঁচ থেকে ১১ বছর বয়সিদের সম্প্রতি টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সেখানে তারা প্রথম ডোজ নিয়েছে ১১ লাখ ছয় হাজার ৬৬৭ জন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক ডা. বেনজির আহমেদ আমার সংবাদকে বলেন, ৩৩ লাখ মানুষ প্রথম ডোজ টিকা গ্রহণ করেনি এটা তো রীতিমতো ঝুকির বিষয়। যারা এখনো প্রথম ডোজ টিকা গ্রহণ করেনি তাদের তালিকা তৈরি করা সম্ভব হলে দ্রুত টিকার আওতায় নিয়ে আসা যেত। কারণ বাংলাদেশের মানুষ টিকা বিরোধী নয়। প্রান্তিকের মানুষ, বয়স্ক মানুষ কেন টিকা গ্রহণ করবে এর উপযোগিতা তৈরিতে শুরু থেকেই ঘাটতি ছিল। আগামী মাসে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে প্রথম ডোজ।

তাই প্রচার প্রচারণা ও টিকাদান কর্মসূচির কর্মকৌশলে আরও উদ্যোমী ভূমিকা পালন করতে হবে। তিনি বলেন, তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, যারা এক ডোজও টিকা গ্রহণ করেনি তাদের সবচেয়ে বেশি জটিলতা তৈরি হচ্ছে। আবার বয়স্ক লোক হলে আরও সংকট তৈরি করবে।

Link copied!