Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪,

দায় মাঠ প্রশাসনের ঘাড়ে

আবদুর রহিম

অক্টোবর ১৫, ২০২২, ০২:০২ এএম


দায় মাঠ প্রশাসনের ঘাড়ে

নির্বাচন কমিশন মন পায়নি কারো। রাজনীতিতে পাল্টাপাল্টি উত্তেজনা। ইসির সিদ্ধান্তে মন ভরেনি ক্ষমতাসীন দলের। বিরোধীরা বলছেন, দলীয় সরকারের অধীনে যে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না এটি তার প্রমাণ। শুধু কমিশনের ৪২শ কর্মকর্তা নিয়েও একটি মাত্র আসনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন করতে না পারায় চায়ের দোকান থেকে সর্বত্র আলোচনা চলছেই। আসছে পক্ষে-বিপক্ষে নানা মত। বলা হচ্ছে— ইসি কী ইঙ্গিত দিলো। তবে দেশের সুশীল সমাজ নির্বাচন অভিজ্ঞরা ইসির সিদ্ধান্তকে সঠিক সিদ্ধান্ত বলে মনে করছে।

গত বুধবার গাইবান্ধায় ভোট গ্রহণের শুরু থেকেই একের পর এক কেন্দ্রে অনিয়মের খবর গণমাধ্যম প্রকাশসহ ইসির দপ্তরে জমা পড়ে। শুরুতে নির্বাচন কমিশন যেখানে অনিয়ম দেখেছেন সেখানে ভোট বাতিল করেছেন। প্রায় অর্ধশত আসনে যখন দেখতে পেলেন, গোপন কক্ষে জটলা বেধে একদল ভোটডাকাত ভোট দিচ্ছে— সেগুলো ধাপে ধাপে বন্ধ করেও যখন সামাল দেয়া যাচ্ছে না তখন সম্পূর্ণ ভোট বাতিল করতে বাধ্য হয়।

তবে কমিশনের সিদ্ধান্তের আগেই ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী ছাড়া চার প্রার্থী অনিয়মের অভিযোগ তুলে ভোট বর্জন করেন। চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের আগে নির্বাচন কমিশন বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নিয়েছে। যেখানেই ভোটডাকাতের চিত্র দেখেছে সেখানেই স্থানীয় প্রশাসন ডিসি-এসপির সহযোগিতা চেয়েছে। তাদের নিষ্ক্রিয় ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ অবস্থান দেখেই ইসি কঠোর পথে হাঁটতে বাধ্য হন।

অভিযোগ এসেছে— ভোটকেন্দ্রের বাইরে পুলিশ ও প্রশাসনের প্রহরা এবং টহলের মধ্যেও ভেতরের গোপন কক্ষে অনিয়মের মহোৎসব কিভাবে চলে। যারা গোপন কক্ষে ঢুকেছে, ইচ্ছেমতো সিল মারছে তারা স্থানীয় প্রশাসনের নিরাপত্তায় ছিল বলেও দাবি তোলা হয়েছে। ওইদিন মাঠ প্রশাসন ইসির নিয়ন্ত্রণে ছিল না। ফলে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের পক্ষ থেকে পাওয়া অভিযোগের কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়াও সম্ভব হয়নি। সর্বশেষ ভোটের দিন সিসিটিভিতে স্বচক্ষে অনিয়ম আর জাল-জালিয়াতি দেখে এ সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে ইসি।

দীর্ঘদিন ধরে একতরফা বিজয় আর প্রকাশ্যে জালজালিয়াতির ঘটনা ভোটের মাঠে ঘটছেই। সরকার সমর্থক দল ছাড়া দেশের বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল নির্বাচন কমিশনে প্রতি বিশ্বাস হারিয়েছে। আন্তর্জাতিক হলেও সাংবাদিক প্রতিষ্ঠানটি গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। সর্বশেষ একাদশ সংসদ নির্বাচনে অনিয়ম ও জাল ভোটের চিত্র আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে লাইভ চিত্র প্রকাশ হলেও আগের কমিশনকে তার কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। সর্বশেষ ইউনিয়ন পরিষোধ নির্বাচনে মাঠ পর্যায়ে রাজনৈতিক প্রভাব, পেশিশক্তি , প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে স্বয়ং আউয়াল কমিশন প্রশ্ন তুলে।

গত ৮ অক্টোবর মাঠ প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করে ইসি। সেখানে নিজেদের দাবি-দাওয়া তুলে ধরেন ডিসি-এসপিরা। তাদের দুর্বল ভূমিকা নিয়ে কমিশনার আনিছুর রহমানের বক্তব্যের সময় হইচই শুরু করেন তারা। সেদিনের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতেই মাঠ প্রশাসনের সাথে দূরত্ব বাড়ে বলেও কেউ কেউ মনে করেন। যার ফলে ভোটের দিন নির্বাচন কমিশন মাঠ পর্যায়ের কোনো সহযোগিতা পায়নি।

এ নিয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য খালেকুজ্জামান আমার সংবাদকে বলেন, ‘ভোটের দিন নির্বাচন কমিশনার ডিসি এসপিদের সহযোগিতা চেয়েছেন কিন্তু তা পাননি। সকাল থেকেই আমরা গণমাধ্যমে ভোটের অনিয়ম দেখতে পেয়েছি। অন্য প্রার্থীদের অভিযোগ শুনতে পেয়েছি। বলা চলে এটিই এখন দেশের নির্বাচনের আসল চেহারা। ওইদিনের পরিস্থিতির কারণে নির্বাচন বন্ধ করাই ছিল যৌক্তিক। যে সব স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা কিংবা যারাই দায়ি ছিল তাদের শাস্তির ব্যবস্থা না করা গেলে এ ধরনের ঘটনা ঘটতেই থাকবে। তাই তাদের দ্রুত শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।’

স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ আমার সংবাদককে বলেন, ‘নির্বাচনে যখন অনিয়ম হচ্ছিল, তখন মাঠ প্রশাসন কোথায় ছিল। কাউকে কেন গ্রেপ্তার করেনি। কমিশন তো তাদের কাছে সাহায্যে চেয়েছে। কিন্তু তারা নিরাপত্তা দিয়েছে ভোটডাকাতদের। কমিশন যে পরিস্থিতে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা যৌক্তিক। এখানে আইনগত কোনো জটিলতা ছিল না। কমিশন যদি মনে করে ভোট করতে পারছে না তাহলে নির্বাচন বন্ধ করে দেবে— এটিই আইন। আর আইন দরকার হয় না। গত ৮ অক্টোবর মাঠ প্রশাসনের সঙ্গে ইসির বৈঠকে ডিসি-এসপিদের আচরণই প্রমাণ করে যে, তারা সরকারের আদেশ মানলেও কমিশনের আদেশ মানেন না। এটা বড় একটা শঙ্কার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন আমার সংবাদকে বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন স্থানীয় প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন। আমরাও দেখেছি প্রিসাইডিং অফিসার ও পুলিশ ভোট ডাকাতদের নিরাপত্তা দিয়ে কেন্দ্রের ভেতরে নিয়ে গেছে। এ রকম পরিস্থিতিতে ইসির পক্ষে ভোট বন্ধ করা ছাড়া আর কী করার থাকতে পারে? এক কথায় বলা চলে গাইবান্ধায় রক্ষক ভক্ষকের ভূমিকায় চলে গিয়েছিল। অনিয়মের চিত্র প্রকাশ্যে দেখা গেছে। তার রেকর্ডও ইসির হাতে জমা আছে। এসব ঘটনার মধ্যে আবার অনেক সিসিটিভি ভেঙে ফেলা এবং সংযোগ কেটে দেয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে বলে জেনেছি।’

Link copied!