Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

বড় ছাড়েও বাড়ছে খেলাপি ঋণ

রেদওয়ানুল হক

নভেম্বর ১৪, ২০২২, ০১:১৭ এএম


বড় ছাড়েও বাড়ছে খেলাপি ঋণ

বড় ছাড়ের পরও দেশে পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে খেলাপি ঋণের পরিমাণ। বছরের প্রথম দুই প্রান্তিকের মতো তৃতীয় প্রান্তিকেও প্রায় সমান হারে বেড়েছে অর্থনীতির এ ক্ষতিকর সূচক। প্রতি তিন মাসে গড়ে ১০ হাজার কোটি টাকা হারে বেড়ে চলা খেলাপি ঋণ অর্থনীতির জন্য মহাবিপর্যয় ডেকে আনছে বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।

গতকাল প্রকাশিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ পরিসংখ্যান অনুযায়ী সেপ্টেম্বর মাস শেষে দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৩৪ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকায়। সে হিসাবে তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) এর পরিমাণ বেড়েছে ৯ হাজার ১৩৯ কোটি টাকা। জুন প্রান্তিক শেষে খেলাপি ঋণ ছিল এক লাখ ২৫ হাজার ২৫৭ কোটি টাকা।

গত মার্চে যা ছিল এক লাখ ১৩ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা। ফলে ছয় মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২০ হাজার ৯৫৬ কোটি টাকা। আর চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে বেড়েছে ৩১ হাজার ১২৩ কোটি টাকা। বছরের শুরুতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল এক লাখ তিন হাজার ২৭৩ টাকা।  

করোনার কারণে ব্যাংক ঋণ আদায়ের ক্ষেত্রে যে ছাড় দেয়া হয়েছিল, তা তুলে নেয়ার পর ধাপে ধাপে খেলাপি ঋণ বাড়তে শুরু করে। এর প্রেক্ষাপটে ঋণ পুনঃতফসিলের ক্ষমতা ব্যাংকগুলোর হাতে ছেড়ে দেয়া হয়। এ সংক্রান্ত একটি মাস্টার সার্কুলার 
জারি করে বড় ছাড় দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সর্বমহল থেকে এর সমালোচনা হলে তখন বলা হয়েছিল এমন উদ্যোগের ফলে দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমে আসবে।

এর সুযোগ নিয়ে কাগজে কলমে কমলেও বাস্তবে খেলাপি ঋণ মহামারি আকার ধারণ করবে বলে সতর্ক করেছিলেন অর্থনীতিবিদরা। তাদের ধারণার চেয়েও খারাপ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে ব্যাংক খাতে। বাস্তবে যাই হোক, কাগজে-কলমেই সমানতালে বেড়ে চলেছে খেলাপি ঋণ। তাই বাংলাদেশ ব্যাংকের জারি করা মাস্টার সার্কুলার কার্যত কোনো ফল বয়ে আনতে পারেনি বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর শেষে দেশে বিতরণ করা ব্যাংকঋণের পরিমাণ বেড়ে হয়েছে ১৪ লাখ ৩৬ হাজার ১৯৯ কোটি টাকা। জুন শেষে ব্যাংকিং খাতের বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ছিল ১৩ লাখ ৯৮ হাজার ৫৯২ কোটি টাকা। সে হিসাবে তিন মাসে বিতরণ বেড়েছে ৩৭ হাজার ৬০৭ কোটি টাকা। আর তিন মাসে খেলাপি বেড়েছে ৯ হাজার ১৩৯ কোটি টাকা।

তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সেপ্টেম্বর শেষে দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ এক লাখ ৩৪ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা। যা মোট ঋণের ৯ দশমিক ৩৬ শতাংশ। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের মোট ঋণের ২৩ শতাংশের বেশিই খেলাপি। এর পরিমাণ ৬০ হাজার ৫০১ কোটি টাকা। বেসরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৬৬ হাজার ৬৯৫ কোটি টাকা। যা মোট বিতরণকৃত ঋণের ৬ শতাংশের বেশি। বিশেষায়িত ব্যাংকের খেলাপি চার হাজার ২৭৭ কোটি টাকা। যা মোট ঋণের প্রায় ১২ শতাংশ। বিদেশি ব্যাংকের খেলাপি ৪ দশমিক ৭৭ শতাংশ। এর পরিমাণ দুই হাজার ৯৭০ কোটি টাকা।

ব্যাংক খাত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, করোনাকালে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণ পরিশোধ না করার যে সুবিধা দিয়েছে, তা গ্রাহকদের ঋণ পরিশোধে অনাগ্রহী করে তুলেছে। গত দুই বছর ব্যবসায়ীরা ঋণ শোধ না করেও ব্যাংকের খাতায় ছিলেন ভালো গ্রাহক। এ অবস্থায় গত জুলাইয়ে আব্দুর রউফ তালুকদার গভর্নর হিসেবে যোগ দেয়ার পর বড় ধরনের ছাড় দিয়ে খেলাপি ঋণ-সংক্রান্ত নীতিমালা জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। সেই নীতিমালায় আড়াই থেকে সাড়ে ৬ শতাংশ অর্থ জমা দিয়ে খেলাপি ঋণ নিয়মিত করার সুযোগ দেয়া হয়। আগে ১০ থেকে ৩০ শতাংশ অর্থ জমা দিয়ে খেলাপি ঋণ নিয়মিত করতে হতো। পাশাপাশি খেলাপি ঋণ পাঁচ থেকে আট বছরে পরিশোধের সুযোগ দেয়া হয়। আগে এসব ঋণ শোধ করতে সর্বোচ্চ দুই বছর সময় দেয়া হতো। আবার নতুন করে ঋণও পাওয়া যাবে। এসব সুবিধার পরও খেলাপি কমেনি বরং বেড়েই চলেছে।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থনীতিবিদ ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম আমার সংবাদকে বলেন, ‘এটি নতুন কিছু নয়, অনেকদিন ধরেই ঋণখেলাপি বাড়ছে। এর কারণ হলো ঋণ বিতরণের সময় যথাযথ বিশ্লেষণ হয় না। ঋণ ফেরত আসবে কি-না অর্থাৎ কতটা ঝুঁকিপূর্ণ তা বিবেচনায় নেয়া হয় না। তাই স্বাভাবিক কারণেই এসব ঋণ ফেরত আসে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণ বিতরণে তদারকি বাড়ানোর পরিবর্তে খেলাপিদের একটার পর একটা সুবিধা দিয়ে আসছে। তাই তারা বেপরোয়া হয়ে উঠছে।’ ঋণখেলাপি বন্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া উচিত বলে মনে করেন এ অর্থনীতিবিদ। তার মতে, ‘খেলাপিদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা এবং তাদের ফৌজদারি মামলার আওতায় আনা যায় কি-না তা ভেবে দেখা দরকার।’

Link copied!