Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

ডেডলাইন ১০ ডিসেম্বর

বাড়ছে উত্তেজনা হার্ডলাইনে পুলিশ

নুর মোহাম্মদ মিঠু

ডিসেম্বর ৫, ২০২২, ১২:২৪ এএম


বাড়ছে উত্তেজনা হার্ডলাইনে পুলিশ

জাতীয় নির্বাচনের বছরখানেক আগেই বেড়েছে রাজনৈতিক উত্তাপ। ২০২৩ সাল ধরে যতই দিন গড়াচ্ছে ততই যেন মুখোমুখি অবস্থানে যাচ্ছে দেশের ছোটবড় সবকটি রাজনৈতিক দল। ইতোমধ্যে বিএনপির ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ নেতাদের বক্তব্য ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়াকড়ি অবস্থানে বাড়ছে উত্তেজনা।

পুলিশ সদর দপ্তরের বিশেষ অভিযানের নির্দেশনায় সারা দেশের পাশাপাশি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) শনিবার রাতের বিশেষ অভিযানেই গ্রেপ্তার করে শতাধিক ব্যক্তিকে। তল্লাশি চালানো হয় বাসা, মেস, হোটেলসহ বিভিন্ন স্থানে।

বিএনপির অভিযোগ, ১০ ডিসেম্বর ঢাকার গণসমাবেশ ঠেকাতেই তাদের নেতাকর্মীদের গণগ্রেপ্তার শুরু করেছে পুলিশ। গত তিন দিনে সারা দেশে বিএনপির বিভিন্ন স্তরের প্রায় ৭৮৩ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। 

এরমধ্যে গত চার দিনে শুধু ঢাকাতেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৪৭২ ব্যক্তিকে। নেতাকর্মীদের বাসায় পুলিশ হানা দিচ্ছে। কোনো ধরনের অভিযোগ ছাড়াই তাদের গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করছে পুলিশ।

দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, গত ৫ দিনে সারা দেশে বিএনপির এক হাজার ৩১ নেতাকর্মীকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেপ্তার করেছে। তিনি বলেন, ৩০ নভেম্বর রাত থেকে ৩ ডিসেম্বর রাত ৮টা পর্যন্ত ৭৮৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়া ৩ ডিসেম্বর রাত থেকে ৪ ডিসেম্বর দুপুর পর্যন্ত ২৪৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর বাইরেও আরও অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমরা সারা দেশ থেকে খবর নিয়ে পরবর্তীতে সম্পূর্ণ তালিকা করে অবহিত করব।

তবে ডিএমপির ডিসি (মিডিয়া) ফারুক হোসেন বলছেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতেই তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আবাসিক হোটেল ও বিভিন্ন এলাকায় যে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে তা আমাদের রুটিন ওয়ার্ক। তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ রয়েছে। তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বাসভবনের সামনে বাড়তি যে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে, তা আমাদের নিয়মিত ডিউটির অংশ। সেখানে অতিরিক্ত কোনো কিছুই নয়, মূলত সার্বিক নিরাপত্তা বিবেচনায় আমরা সেখানে ফোর্স মোতায়েন করেছি।

ডিসি ফারুক হোসেন বলেন, কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নয়, কেবল যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ রয়েছে, তাদেরই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশের এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে। রাজধানীবাসীর জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশের যা যা করণীয়, সবই করবে বলেও উল্লেখ করেন পুলিশের এই কর্মকর্তা।

সূত্র জানায়, ১০ ডিসেম্বরের গণসমাবেশ সামনে রেখেই ঢাকায় সাঁড়াশি অভিযান শুরু করেছে পুলিশ। এ অভিযানে বিএনপি-জামায়াতের কেন্দ্রীয়, মহানগর এবং থানা-ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাদের তালিকা ধরে ধরপাকড় চালানো হচ্ছে। গত এক মাস ধরে তথ্য প্রযুক্তি, স্থানীয় সোর্স ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের সহযোগিতায় অভিযানের জন্য এ তিন শ্রেণির তালিকা তৈরি করা হয়। সেই তালিকা ধরিয়ে দেয়া হয় মাঠ পুলিশের হাতে। তবে অভিযানে গিয়ে বেশিরভাগ ঠিকানাতেই বিএনপি-জামায়াত নেতাদের পুলিশ পাচ্ছে না। বিশেষ করে যাদের বিরুদ্ধে নাশকতার একাধিক মামলা ও গ্রেপ্তারি পরোনায়ানা রয়েছে, তাদের সবাই পলাতক রয়েছেন।

পুলিশ কর্মকর্তারাও বলছেন, ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ ঘিরে রাজধানীতে বড় ধরনের নাশকতার আশঙ্কা রয়েছে। জ্বালাও-পোড়াও ভাঙচুরসহ যেকোনো ধরনের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি থেকে নগরবাসীর জানমাল রক্ষায় তারা অভিযান শুরু করেছেন।

ডিএমপির ঊধ্বর্তন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ সামনে রেখে বিএনপি ও জামায়াতের ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের হালনাগাদ তালিকা তৈরি করা হয়েছে। পুরনো রাজনৈতিক মামলার পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারের নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। গত এক সপ্তাহ ধরেই অভিযান চালানো হচ্ছে। তবে শনিবার রাত থেকে গ্রেপ্তার অভিযান জোরদার করা হয়। বিশেষ করে নাশকতার মামলার আসামি ও জামিনে ছাড়া পাওয়া বিএনপি-জামায়াতের ‘হিটার’ নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারে অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে।

ডিএমপির ডিসি (মিডিয়া) ফারুক হোসেন বলেন, বিএনপিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের জায়গা দেয়া হয়েছে। তাদের সেখানেই সমাবেশ করতে হবে। আর তারা যদি জোর করে নয়াপল্টনে সমাবেশ করতে চায়, তা হলে সেটা হবে বেআইনি সমাবেশ। আর একটি বেআইনি সমাবেশের বিষয়ে পুলিশের যে আইনি ব্যবস্থা আছে, সেই আইনি ব্যবস্থাই নেয়া হবে। ডিএমপির একাধিক থানার ওসি জানান, ডিএমপি সদর দপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী রাজনৈতিক মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারে সাঁড়াশি অভিযান চালানো হচ্ছে।

এছাড়া রাজধানীতে বিএনপির গণসমাবেশ সামনে রেখে ঢাকার বাইরে থেকে কোনো ‘বহিরাগত’ যাতে আবাসিক হোটেল ও মেসগুলোয় উঠতে না পারে, সেজন্যও তল্লাশি চালাবে পুলিশ। অকারণে ঢাকার বাইরের কোনো বাসিন্দাদের ঢাকায় অবস্থান করতেও দেবে না। একইসঙ্গে ঢাকার প্রবেশ পথগুলোতেও তল্লাশি চৌকি বসিয়ে লোক-সমাগম ঠেকানোর কৌশলও নেবে পুলিশ। এদিকে বিএনপিকে ২৬ শর্তে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি দিয়েছে পুলিশ।

তবে বিএনপি নয়াপল্টনে সমাবেশ করতে অনড়। এমন প্রেক্ষাপটে বহুমাত্রিক নিরাপত্তা পরিকল্পনা সাজাচ্ছে পুলিশ। বিএনপি যাতে নয়াপল্টনে সমাবেশ করতে না পারে, সে জন্য অন্তত তিন দিন আগেই ওই এলাকা পুলিশ নিয়ন্ত্রণে নেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। আবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকেন্দ্রিক নিরাপত্তা পরিকল্পনাও সাজানো হচ্ছে বিএনপির পক্ষ থেকে। সমাবেশকে কেন্দ্র করে বঙ্গভবন, গণভবন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তা জোরদারেও পুলিশ কাজ করছে। ৪৮ ঘণ্টা আগে থেকেই এসব গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে পুলিশ সূত্র জানিয়েছে।

বিএনপি সূত্র জানিয়েছে, গত তিন দিনে রাজধানীতে বিপুলসংখ্যক বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হয়েছে। বিএনপির রাজশাহীর গণসমাবেশ থেকে ঢাকায় ফেরার পথে আমিন বাজার থেকে যুবদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুকে আটক করে গোয়েন্দা পুলিশ।

এসময় যুবদলের সহ-সভাপতি নুরুল ইসলাম নয়ন, ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি জাভেদ হাসান স্বাধীন ও টুকুর ব্যক্তিগত সহকারী মোখলেসুর রহমানকেও আটক করা হয়। এছাড়া কলাবাগান থানা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ইয়াসিন, ধানমন্ডি থানা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক পলাশ, লালবাগ থানা ছাত্রদলের আহ্বায়ক আফতাব ইয়াকিনকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি। ওয়ারী থানাধীন ৪১ নং ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য আমিনুল ইসলাম নয়ন, বংশাল থানা বিএনপি নেতা নাদের ও কোতোয়ালি থানাধীন ৩২ নং ওয়ার্ড বিএনপি নেতা আলাউদ্দীন আলাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সাবেক সহ-সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন, পশ্চিম মানিকদি ইউনিট বিএনপির সভাপতি ইব্রাহিম হক, ক্যান্টনমেন্ট থানা বিএনপি নেতা জুয়েল মাস্টার, আবদুল হান্নান, আহমেদ আলী, পল্লবী থানা বিএনপি নেতা শাকিল আল হাসান, ভাটারা থানা বিএনপি নেতা মেহেদী হাসান সোহেল, হাসান, শফিকুল ইসলাম, ফয়সাল, আলমাস, সোহেল, মোহাম্মদ জাকির ও কামাল গ্রেপ্তার হয়েছেন।

এছাড়া দক্ষিণখান থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি শাহাবুদ্দিন সাগর, বিমানবন্দর থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি জুলহাস পারভেজ মোল্লা, কাফরুল থানা বিএনপি নেতা মো. হেলাল উদ্দিন গ্রেপ্তার হয়েছেন। ৯২ নম্বর ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক ওমর ফারুক, ২০ নম্বর ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক সোহেল ভূঁইয়া ও ২১ নং ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক রইসুল ইসলাম রনককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

এছাড়াও গতকাল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ উপলক্ষে লিফলেট বিতরণের সময় হামলা হয় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি এক নম্বর সদস্য ও বিএনপি মেয়র প্রার্থী প্রকৌশলী ইশরাক হোসেনের ওপর। বিএনপির দাবি, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এই হামলা করেছে। এসময় তার ওপর হামলা করে তার গাড়ি ভাঙচুর করা হয় এবং তাদের কয়েকজন নেতাকর্মীও আহত হয়েছে।

Link copied!