Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪,

সবাই আছে নেই জামায়াত

আবদুর রহিম

জানুয়ারি ১১, ২০২৩, ০১:০৭ পিএম


সবাই আছে নেই জামায়াত
  • দুই যুগের জোটসঙ্গী বিএনপি-জামায়াতের চরম দ্বন্দ্ব স্পষ্ট 
  • জামায়াত যুগপৎ আন্দোলনের শরিক নয়— দাবি বিএনপির
  • বিএনপির গণঅবস্থান কর্মসূচিকে ১/১১ গণতন্ত্র হত্যা দিবস দাবি করে সব মহানগরীতে জামায়াতের ভিন্ন কর্মসূচি

 জামায়াত নিয়ে প্রশ্ন না করাই ভালো, আমি এর কোনো উত্তর দেব না

—ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু

গণমিছিলে হামলায় আমাদের বহু নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হন কিন্তু বিএনপি বিবৃতি দেয়নি

—মতিউর রহমান আকন্দ

১০ দফায় সরকার পরিবর্তন ও ২৭ দফা রাষ্ট্র মেরামতে বিএনপি সরকারবিরোধী দলগুলোর সাথে দফায় দফায় বৈঠক করলেও জামায়াতের সাথে এখনো পর্যন্ত কোনো আনুষ্ঠানিক বৈঠক করেনি। গেল মাসের ৩০ তারিখে যুগপৎ আন্দোলনের প্রথম দফায় গণমিছিল বের করে ঢাকায় জামায়াতের সাথে পুলিশের সংঘর্ষে বেশ কজন আহত ও গ্রেপ্তার হন। 

এ নিয়েও বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনের লিয়াজোঁ কমিটি কোনো খোঁজ-খবরও নেয়নি। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে ইতোমধ্যে যুগপৎ আন্দোলনে অংশ হিসেবে লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এলডিপি), ১২ দলীয় জোট, ৭ দলের গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলের সমন্বয়ে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য, গণফোরামসহ কয়েকটি সংগঠনের সাথে বৈঠক সেরেছে বিএনপি। 

কিন্তু বিএনপি জামায়াতকে একলা পথে ছেড়ে দেয়ায় দীর্ঘ সময়ের জোটটিতে মনোমালিন্য চলছে। তাই জামায়াতও সরকার পতনের আন্দোলনে নিজস্ব ছকে মাঠে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আজ বুধবার বিএনপির গণঅবস্থান কর্মসূচির দিনে জামায়াত আলাদা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। ৩২টি রাজনৈতিক দল ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ ছয়টি স্পটে অবস্থান করলেও জামায়াত এ দিনদিকে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি বাংলাদেশের ইতিহাসে ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ হিসেবে চিহ্নিত করে আলাদাভাবে ভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে। দেশের সব মহানগরীতে আলোচনা সভার মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের আহ্বান জানাবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিএনপির প্রায় দুই যুগের মতো জোটবদ্ধ রাজনৈতিক সঙ্গী জামায়াত। দীর্ঘ সময় নির্বাচন-আন্দোলনসহ নানা ইস্যুতে এক সাথে পথ চলা তাদের। প্রথমে চারদলীয় জোট, পরে এর পরিধি বের হয় ২০ দলীয় জোট। জোটে মূল ভূমিকা ছিল বিএনপি আর জামায়াতের। বিভিন্ন কারণে দল দুটির নেতাকর্মীদের মধ্যে ছিল অস্বস্তি। এতে ধীরে ধীরে তাদের দূরত্ব বাড়তে থাকে। 

অবশেষে গত ডিসেম্বরে ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশের পূর্বে ২০ দলীয় জোট ভেঙে দেয়ার কথা জানায় বিএনপি। এমন ঘোষণা দিলেও জোটের শরিকরা যুগপৎ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেন। এ লক্ষ্যে ২০ দলীয় জোটের শরিকরা দুটি জোট গঠন করে। এর মধ্যে শরিকদের ১২ দল মিলে একটি জোট এবং ১১ দল মিলে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট গঠন করে। এ দুই জোটের মাধ্যমে ২০ দলীয় জোটের শরিকরা যুগপৎ আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে।

২০ দলীয় জোট বিলুপ্ত হওয়ার পর  শরিকদের সাথে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির নিয়মিত বৈঠক-আলোচনা হলেও জামায়াতের সাথে মনোমালিন্য দৃষ্ট হচ্ছে। যুগপৎ আন্দোলনে থাকা জামায়াতে ইসলামীর সাথে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটি কোনো যোগাযোগ করেনি বলে জানিয়েছেন জামায়াত নেতারা। এমনকি গত ৩০ ডিসেম্বর রাজধানীতে গণমিছিল করার সময় পুলিশের আক্রমণ হলে বহু নেতাকর্মী আহত ও গ্রেপ্তার হন। এ ঘটনায় বিএনপির পক্ষ থেকে কোনো বিবৃতি বা জামায়াতের কারো সাথে যোগাযোগও করা হয়নি।

যুগপৎ আন্দোলনের বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক মতিউর রহমান আকন্দ আমার সংবাদকে বলেন, ‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ১১ জানুয়ারি (আজ) গণতন্ত্র হত্যা দিবস পালন করবে।’ ইতোমধ্যে জামায়াতে ইসলামী বিভাগীয় শহরে আলোচনা সভার মাধ্যমে গণতন্ত্র হত্যা দিবস পালনের জন্য সেক্রেটারি জেনারেল বিবৃতি দিয়েছেন। 

তিনি বলেন, যুগপৎ আন্দোলনের ইস্যুকে সামনে রেখে যার যার অবস্থান থেকে আন্দোলন করা হবে। জামায়াত তার অবস্থান থেকে আন্দোলন করবে, বিএনপি তার অবস্থান থেকে আন্দোলন করছে। দল ভিন্ন, মঞ্চ ভিন্ন, তাই নেচার একটু আলাদা হবে— এটাই স্বাভাবিক। কালও (১১ জানুয়ারি) কর্মসূচি পালন করা হবে। এরপর পরবর্তী কর্মসূচি সম্পর্কে ঠিক করা হবে।

মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, যখনই কোনো রাজনৈতিক দল সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে রাজনৈতিকভাবে, তখনই আমরা বিবৃতি দিয়ে আমাদের অভিব্যক্তি প্রকাশ করছি। বিএনপির অফিসে যখন হামলা হয়, তখন আমরা এ ঘটনার নিন্দা জানিয়েছি। মির্জা ফখরুল সাহেব যখন গ্রেপ্তার হন, তখন আমরা নিন্দা জানিয়ে দ্রুত তার মুক্তি দাবি করেছি। কিন্তু রাজধানীতে গত ৩০ ডিসেম্বর গণমিছিলে পুলিশি আক্রমণ করা হলে জামায়াতের বহু নেতাকর্মীকে আহত ও গ্রেপ্তার করা হয়। এ বিষয়ে কিন্তু বিএনপির কোনো বিবৃতি আমরা দেখিনি।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম আমার সংবাদকে বলেন, ১১ জানুয়ারি ওয়ান-ইলেভেন হিসেবে চিহ্নিত। এ বিষয়ে আমরা আলোচনা সভা করব। ১১ জানুয়ারি (আজ) আমরা কর্মসূচি পালন করব; কিন্তু আমাদের কর্মসূচি হলো গণতন্ত্র হত্যা দিবস। ৩০ ডিসেম্বর রাজধানীতে পুলিশের সঙ্গে জামায়াতের সংঘর্ষের ঘটনায় নেতাকর্মী আহত এবং গ্রেপ্তারের ঘটনার পর বিএনপির কোনো নেতা আমাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেননি বলেও জানান তিনি।

জানতে চাইলে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু আমার সংবাদকে বলেন, জামায়াতের সাথে আলোচনা হলে তো আপনারা জানতে পারতেন। এমন প্রশ্ন করার প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না। জামায়াত নিয়ে প্রশ্ন না করাই ভালো; আমি এর কোনো উত্তর দেব না।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু আমার সংবাদকে বলেন, জামায়াত আমাদের যুগপৎ আন্দোলনের শরিক নয়।

সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনসহ ১০ দফা দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি এবং সমমনা রাজনৈতিক দল ও জোট। যুগপৎ আন্দোলনের প্রথম কর্মসূচি ঢাকায় ৩০ ডিসেম্বর এবং অন্যান্য জেলা ও মহানগরে ২৪ ডিসেম্বর গণমিছিল করা হয়। যুগপৎ আন্দোলনের দ্বিতীয় কর্মসূচি আজ ১১ ডিসেম্বর গণঅবস্থান। এদিন বেলা ১১টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত চলবে এ কর্মসূচি।

আজ ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ পালন করবে জামায়াত : ওয়ান-ইলেভেনের মাধ্যমে দেশে গণতন্ত্রহীনতার যে পরিবেশ তৈরি হয়েছে, তা থেকে জাতি মুক্তি চায় বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন  বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মাছুম। তাই ১১ জানুয়ারি ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ হিসেবে পালনের আহ্বান জানন তিনি।

তিনি বলেন, ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি বাংলাদেশের ইতিহাসে ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। ওইদিন দেশের গণতান্ত্রিক ধারাকে ব্যাহত করে জরুরি অবস্থা জারির মাধ্যমে অগণতান্ত্রিক সরকার রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে। ওই সরকারকে নিজেদের আন্দোলনের ফসল বলে দাবি করে আওয়ামী লীগ। 

আওয়ামী লীগ বাদে দেশের সব রাজনৈতিক দল অগণতান্ত্রিক সরকারের ক্ষমতা দখলের প্রতিবাদ জানায়। সেনাসমর্থিত সেই সরকারের নিরাপদ প্রস্থানের লক্ষ্যে আওয়ামী লীগের সাথে সমঝোতায় মিলিত হয়ে তারা ২০০৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর একটি নির্বাচনের আয়োজন করে। সমঝোতার ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে দুই-তৃতীয়াংশের বেশি আসনে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে ওয়ান-ইলেভেনের সরকারের ধারাবাহিকতায় দেশকে রাজনীতিহীন ও গণতন্ত্রহীনতার দিকে নিয়ে যায়। 

ওয়ান-ইলেভেনের মাধ্যমে দেশে যে রাজনীতিহীন ও গণতন্ত্রহীনতার পরিবেশ তৈরি হয়েছে, তা থেকে জাতি মুক্তি চায়। এ অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। ওয়ান-ইলেভেনের এই দিনটিকে ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ হিসেবে পালন করার জন্য দেশের সব মহানগরী শাখাকে আলোচনা সভা আয়োজন করার ও দেশবাসীকে কেয়ারটেকার সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে নিজেদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার জন্য সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

Link copied!