Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪,

সেই পিয়নের প্রাইভেট চেম্বার

নুর মোহাম্মদ মিঠু

ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২৩, ১২:৪৫ এএম


সেই পিয়নের প্রাইভেট চেম্বার
  • নারায়ণগঞ্জে কিনেছেন জমি, কেরানীগঞ্জে দোকান
  •  চম্বারের মাসিক ভাড়া ৩০ হাজার কর্মচারী নিয়োগ তদারকি করেন ভাই ভবন সংশ্লিষ্টরা জানেন তিনি কর আইনজীবী
  • নারায়ণগঞ্জের ভুইগড়ে ৩৫ লাখ টাকায় শ্বশুরসহ নিজের নামে জমি
  • কেরানীগঞ্জের খাঁজা সুপার মার্কেট-৪ এ ৩০ লাখ টাকায় দোকান, দোকান নম্বর-৬৫

জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদের পাহাড় গড়েছেন কর অঞ্চল-৪ এর সার্কেল-৮৮ কেরানীগঞ্জের পিয়ন (নোটিস সার্ভার) শফিকুল ইসলাম। তার সম্পদের ফিরিস্তি অনুসন্ধানে একের পর এক মিলছে এসব তথ্য। অনুসন্ধানের এ পর্যায়ে মিলেছে নারায়ণগঞ্জে জমি ও কেরানীগঞ্জে দোকান ক্রয়ের তথ্য। শুধু তাই নয়, মিলেছে রাজধানীর পল্টনে প্রাইভেট চেম্বার করার তথ্যও। এ ছাড়াও চাউর রয়েছে ডেমরার ডগাইরেও কিনেছেন জমি। যেখানে চলছে বাড়ি নির্মাণকাজ। ধারাবাহিক প্রতিবেদনের আজকের পর্বে তুলে ধরা হচ্ছে তার ক্রয়কৃত সেসব জমি, দোকান ও প্রাইভেট চেম্বারের চিত্র। তবে আশ্চর্যের বিষয়, সম্পদের পাহাড় গড়েও চতুর্থ শ্রেণির এই কর্মচারী শফিকুল যেন জবাবদিহির ঊর্ধ্বে। অবশ্য তার বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশের পর সহকর্মীদের তিনি বলে বেড়াচ্ছেন, দুর্নীতি দমন কমিশনেও (দুদক) নাকি টাকা দিয়ে থামানো যায় তদন্ত। আর সাংবাদিক; পারলে নিয়ে যাক তার জমিজিরাত। বুক ফুলিয়ে আরও বলে বেড়াচ্ছেন, আগেও একবার দুদক তার বিরুদ্ধে তদন্ত করেছিল। কিছুই হয়নি; বরং দুদকই তাকে ছাড়পত্র দিয়েছে। সে কাগজও তিনি দেখাতে পারবেন বলে বলছেন সহকর্মীদের এবং এ প্রতিবেদককেও বলেছেন একই কথা।

 শফিকুল ইসলামের অঢেল সম্পদের তথ্য অনুসন্ধানের ধারাবাহিকতায় কেরানীগঞ্জের পূর্ব আগানগর গুদারাঘাট এলাকায় বুড়িগঙ্গা পাড়ের খাঁজা সুপার মার্কেট-৪ এ যায় আমার সংবাদ। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, সিঁড়ি বেয়ে উঠতেই মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় ডান পাশে ৬৫ নম্বর দোকান। বর্তমানে দোকানের নাম জে কে কালেকশন। পোশাক সামগ্রীর ওই দোকানের ভাড়াটিয়া আব্দুর রহিম। মার্কেটের নিরাপত্তাকর্মীরা জানান, তারা মালিককে চেনেন না। দেখেননি কখনো। দোকানটি ভাড়ায় চলে। এখন যিনি ভাড়া নিয়েছেন তার নাম আব্দুর রহিম। তার সাথে যোগাযোগ করলে মালিকের তথ্য পাওয়া যাবে। মুঠোফোনে আব্দুর রহিমের সাথেও কথা হয় আমার সংবাদের। প্রতিবেদককে তিনি জানান, দোকানটি সিঙ্গেল। মাসিক ভাড়া দেন সাড়ে ৯ হাজার টাকা। প্রতিবেদন প্রকাশের আগে চলমান অনুসন্ধানের মধ্যেই এই প্রতিবেদককে চায়ের দাওয়াত দিয়ে পল্টনের হোটেল আল ফাহামে নিয়ে শফিকুলও স্বীকার করেছেন, দোকানটির মালিক তিনিই। কোনো একটি জটিলতার কারণে সেখানে ভাড়া নিয়েও সমস্যা হচ্ছে তার। তবে ঠিক কী জটিলতা তা তিনি বলেননি এবং কত টাকা মূল্যে দোকানটি কিনেছেন তাও বলেননি। তবে জানতে চাইলে খাঁজা সুপার মার্কেট-৪ এর ম্যানেজার জামাল বলেন, ওই দোকানটি সিঙ্গেল নাকি ডাবল এ মুহূর্তে তিনি তা বলতে পারছেন না। যদি সিঙ্গেল হয়ে থাকে তাহলে ওই দোকানের মূল্য ২৫-৩০ লাখ টাকা। আর ডাবল হলে ৫০ লাখ টাকা।

এদিকে নারায়ণগঞ্জেও জমি কিনেছেন তিনি। দুদকে তার বিরুদ্ধে হওয়া অভিযোগের সূত্রে করা আমার সংবাদের অনুসন্ধানে এই তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। এ ছাড়া শফিকুল নিজেই এই তথ্য শতভাগ নিশ্চিত করেছেন প্রতিবেদককে। তিনি প্রতিবেদককে বলেন, নারায়ণগঞ্জের ভুইগড়ে জমি কেনার বিষয়টি সত্য। তবে সেখানে জমির পরিমাণ সামান্য। মাত্র ৩ শতাংশ জমি কিনেছেন সেখানে। পাশেই তার শ্বশুরের রয়েছে ৩ শতাংশ জমি। দুদকের অভিযোগ সূত্র আর আমার সংবাদের অনুসন্ধানে জানা গেছে, তার শ্বশুরের নামের ৩ শতাংশ জমির ক্রয়মূল্য ৩৫ লাখ ২০ হাজার টাকাও পরিশোধ করেছেন শফিকুল। সম্পদের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় তিনি নামে-বেনামে জমি কিনছেন। তার সরল স্বীকারোক্তি প্রশংসার দাবিদার হলেও তিনি জানাতে পারেননি ঠিক কীভাবে গড়েছেন সম্পদের এই পাহাড়। যেখানে তিনি চাকরি করছেন সরকারের সর্বশেষ ২০তম গ্রেডে। এ ছাড়া ডেমরার ডগাইরেও কিনেছেন জমি। যেখানে চলছে বাড়ি নির্মাণকাজ। তবে ডগাইরে জমি ক্রয়ের বিষয়ে শফিকুল বলেন, এটি সত্য নয়। ডগাইরে তার কোনো জমিই নেই। এ ছাড়া অভিযোগ সূত্রে জানা গেলেও সেই জমির বিষয়ে সরেজমিন অনুসন্ধান করেনি আমার সংবাদ। যে কারণে এ তথ্যের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও জমি ক্রয়ের তথ্য চাউর রয়েছে বিভিন্ন মহলে এবং শফিকুলের সহকর্মীদের মধ্যেও।

সম্পদ অর্জনের পাশাপাশি শফিকুল রাজধানীর পল্টনে ৫১/৫১, পল্টন রিসোস ফুল সিটির লিফটের ১০ ফ্লোরে তিন লাখ টাকা অগ্রিম দিয়ে করেছেন প্রাইভেট চেম্বারও। আর ওই চেম্বারের মাসিক ভাড়া দেন ৩০ হাজার টাকা। ডেকোরেশন বাবদ খরচ করেছেন আড়াই লাখ টাকা। চেম্বারে ২০ হাজার টাকায় রেখেছেন একজন পিয়ন। আর ২৫ হাজার টাকা বেতনে নিয়োগ পেয়ে সার্বিক তদারকির কাজটি করেন তার ভাই জাকির হোসেন। জানতে চাইলে ওই ভবনের নিরাপত্তাকর্মীরা বলেন, তিনি প্রতিদিন সন্ধ্যার দিকে চেম্বারে আসেন। ওই ভবন ও এর আশপাশের সবাই জানেন শফিকুল পেশায় একজন আইনজীবী। কর অফিসে চাকরি করেন। এই চেম্বারেও কর সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনা করেন তিনি। তবে শফিকুল বলেছেন, চেম্বারটি তার সিনিয়রের। যার বাড়ি কুমিল্লায়।

Link copied!