Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪,

রমজানে ভোগ্যপণ্যের কোনো সংকট হবে না

মো. মাসুম বিল্লাহ

ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২৩, ০৮:১৬ এএম


রমজানে ভোগ্যপণ্যের কোনো সংকট হবে না

আসন্ন রমজানে ভোগ্যপণ্যের কোনো সংকট হবে না বন্দর নগরী চট্টগ্রামে। ইতোমধ্যে প্রায় সব ধরনের পণ্যেরই সরবরাহ বেড়েছে এবং মজুতও পর্যাপ্ত। খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে গত কয়েকদিনের পর্যবেক্ষণ এবং পাইকারি ব্যবসায়ী ও আড়তদারদের সাথে কথা বলে এ চিত্র পাওয়া গেছে।  ব্যবসায়ীরা বলছেন, ডলার সংকটের কারণে পণ্য আমদানি কয়েক মাস আগে কিছুটা কমলেও তা ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে ওঠছে। আগামী মার্চের শেষ ভাগে শুরু পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে যারা পণ্য আমদানিতে এলসি  খুলেছেন তাদের পণ্য বাজারে আসা শুরু হয়েছে।  খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সংকট না থাকায় বেশ কিছু পণ্যের দাম কমেছে। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে পাম তেলের দাম মণপ্রতি ৪০ টাকা কমে এখন বিক্রি হচ্ছে চার হাজার ৬৬০ টাকা এবং সয়াবিন তেলের দাম মণপ্রতি ৩০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ছয় হাজার ৩৬০ টাকায়। 

ভারতীয় পেঁয়াজ কেজিতে ছয় টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ২৮ টাকা, চীনা রসুন কেজিতে ১০ টাকা কমে ১৫০ টাকা এবং চীনা আদা কেজিতে ১০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকায়। মসুর ডালের দাম কেজিতে দুই টাকা কমে এখন বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকায়। অস্ট্রেলিয়ান  ছোলা কেজি প্রতি চার টাকা কমে এখন বিক্রি হচ্ছে ৭২ টাকা, ভারতীয় ছোলা কেজিতে পাঁচ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা। মটর ডালের দাম কেজিতে তিন টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ৬১ টাকায়। এলাচের দাম কেজিতে ২০ টাকা কমে এখন বিক্রি  হচ্ছে এক হাজার ৪০০ টাকা, লবঙ্গ কেজিতে ২৫ টাকা কমে এক হাজার ৩৪০ টাকা, জিরা ৩০ টাকা কমে ৫৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতি নেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বাজারে সরবরাহ বাড়তে শুরু করেছে। চট্টগ্রাম বন্দরে এবং সরবরাহ লাইনে রয়েছে আরো বিপুল ভোগ্যপণ্য। গুদামেও পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে। সামনের দিনগুলোতে এর ইতিবাচক প্রভাব বাজারে পড়তে পারে।

 চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের বৃহৎ পাইকারি প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার আলমগীর পারভেজ জানান, ‘পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে ব্যবসায়ীদের প্রস্তুতি ভালো। অধিকাংশ পণ্যের আন্তর্জাতিক বাজারে দর নিম্নমুখী থাকায় আমাদের বাজারেও এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। বহু ভোগ্যপণ্যের শিপমেন্ট হয়েছে। শিগগির এগুলো দেশে এসে পৌঁছাবে। এলসি ডেচপাস আরো সহজ করা গেলে বাজার আরো সুষম হবে। তবে চিনির আন্তর্জাতিক বাজার ঊর্ধ্বমুখী। তাই চিনিতে কিছুটা অস্বস্তি দেখা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে ডিউটি কমানো গেলে চিনির দাম স্বাভাবিক থাকবে।’ আলমগীর পারভেজ মনে করেন, ব্যবসায়ী নেতারাসহ কমিটি গঠন করে আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে সামঞ্জস্য রেখে সরকারের পক্ষ থেকে দাম নির্ধারণ করে দিলে বাজারে অহেতুক অথবা উদ্দেশ্যমূলক অস্থিতিশীলতা তৈরির সুযোগ পাবে না কোনো পক্ষ। 

অনেক সময় রাজনৈতিক উদ্দেশে অথবা অসাধু ব্যবসায়ীদের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির চেষ্টা থাকে। এ সময় প্রশাসনের অভিযানে অসাধুদের সাথে সাধারণ ব্যবসায়ীদেরও ভোগান্তি পোহাতে হয়। এতে ভয় থেকেও বাজার অস্থির হয়ে ওঠার আশঙ্কা থাকে।  চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাহাবুবুল আলম বলেন, ‘ইতোমধ্যে বহু পণ্যের শিপমেন্ট হয়েছে, বন্দরে এবং বাজারেও পৌঁছেছে আমদানিকৃত পণ্য। ফলে বাজারে কিছু পণ্যের দাম সামান্য কমেছে। সরবরাহ বৃদ্ধির এ ধারায় পণ্যমূল্য আরো কমে আসবে। সাপ্লাই চেইন ঠিক থাকলে বাজার স্বাভাবিক থাকবে। ভোগ্যপণ্য আমদানির জন্য যারা এলসি করতে চায় তাদের যেন অগ্রাধিকার দেয়া হয় এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন ব্যাংককে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দিতে পারে।’ তিনি বলেন, ‘ট্রেডবডির পক্ষ থেকে আমরা বাজার স্বাভাবিক রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করব। চিটাগাং চেম্বারের পক্ষ থেকে এ মাসের প্রথম দিকে মেট্রোপলিটন শপ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাথে বৈঠক করেছি। 

চট্টগ্রাম মহানগরীর ৬৮টি মার্কেটের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। আগামী মার্চের প্রথম ভাগে আমরা আবারো বসব। আমাদের টার্গেট হচ্ছে, কৃত্রিম সংকটের মাধ্যমে পণ্যমূল্য বৃদ্ধি করে কোনো অসাধু চক্র যেন সরকারকে বিব্রত করতে না পারে বা ব্যবসায়ী সমাজের সাথে সরকারের দূরত্ব সৃষ্টি যেন না হয়।’ মাহাবুবুল আলম বলেন, ‘নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যমূল্য বাড়ার কোনো কারণ দেখি না। এক কোটি লোক টিসিবির মাধ্যমে ন্যায্যমূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পাচ্ছেন। এর মাধ্যমে পাঁচ কোটি মানুষের চাহিদা মিটছে। ফলে দেশের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মানুষ সরাসরি সরকারের পদক্ষেপের সুফল পাচ্ছেন।’ প্রসঙ্গক্রমে তিনি জানান, আমদানির মাত্র ২০ শতাংশ এখন চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। অবশিষ্টগুলো ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে আমদানি হলেও পণ্য বন্দর থেকে সরাসরি ঢাকা বা দেশের অন্যান্য প্রান্তে চলে যায়। তেল চিনির অধিকাংশ মিল এখন ঢাকায়। চট্টগ্রামে রয়েছে শুধু এস আলম ও টিকে গ্রুপের মিল। ফলে মিলমালিক, আমদানিকারক ও পাইকারি ব্যবসায়ীসহ সব স্টেকহোল্ডারকে নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে উচ্চ পর্যায়ের ন্যাশনাল কো-অর্ডিনেশন সভা করা যেতে পারে। এতে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো কার্যকর হতে পারে।

Link copied!