নিজস্ব প্রতিবেদক
আগস্ট ১১, ২০২৫, ১২:০০ এএম
ইউরোপের শ্রমবাজারে দক্ষতার অভাবে বাংলাদেশের কর্মীরা পিছিয়ে পড়ছে। যদিও ইউরোপের শ্রমবাজারের দিকে বাড়তি আগ্রহ রয়েছে বাংলাদেশের কর্মী। ইউরোপের শ্রমবাজারের জন্য যে ধরনের ভাষাগত ও কারিগরি দক্ষতা প্রয়োজন তা পূরণ করতে ব্যর্থ হচ্ছে বাংলাদেশি কর্মীরা। বাংলাদেশ থেকে বিগত ২০২৪ সালে বিদেশে যান ১০ লাখ ১১ হাজার ৯৬৯ জন কর্মী। তার মধ্যে মাত্র ১৬ হাজার ৭৭ জন ইউরোপে গেছে। যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় অর্ধেক।
২০২৩ সালে ৩০ হাজার ৪২৭ জন ইউরোপে গেছেন। ইউরোপের ২৮টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশি শ্রমিকরা ইতালি, ফ্রান্স, বুলগেরিয়া, ক্রোয়েশিয়া, গ্রিস, হাঙ্গেরি, লিথুনিয়া, মাল্টা, পর্তুগাল, পোল্যান্ড, রোমানিয়ায় পাড়ি জমান। বাংলাদেশিরা বৈধ পথের পাশাপাশি অবৈধভাবেও এসব দেশে যান। জনশক্তি রপ্তানিকারক এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ইউরোপের প্রায় ২৭টি দেশে ১০ বছর ধরে জনশক্তি রপ্তানি হলেও হাতে গোনা মাত্র কয়েকটি দেশে রেগুলার মাইগ্রেশন হচ্ছে। পশ্চিম ইউরোপের ৯টি দেশের মধ্যে গ্রিস ছাড়া অন্য কোনো দেশের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক নেই। দক্ষিণ ইউরোপে ইতালির সঙ্গে চলতি বছর নতুন সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। তাছাড়া অস্ট্রিয়া, স্পেন ও পর্তুগালের সঙ্গে আলোচনা চলছে।
যদিও সরকারের পক্ষ থেকে ইউরোপের বাজার সম্প্রসারণ করার চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কিন্তু দক্ষতা ছাড়া ইউরোপের দেশগুলো কর্মী নেয় না। আর বাংলাদেশি কর্মীদেরও ওই জায়গায় ঘাটতি রয়েছে। পাশাপাশি বাংলাদেশি কর্মীদের ইমেজ সংকটও ইউরোপীয় দেশগুলোতে অভিবাসন কম হওয়ার অন্যতম কারণ। শ্রমিকরা নন শেনজেনভুক্ত একটা দেশে ঢুকে সেখান থেকে শেনজেন দেশে চলে যাচ্ছে। তাছাড়া ভাষা না জানাও একটি বড় সংকট।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশ থেকে কাজের উদ্দেশ্যে বিগত ২০২৪ সালে বিদেশে ১০ লাখ ১১ হাজার ৯৬৯ জন গেছেন। তাদের মধ্যে মাত্র দুই লাখ ১৪ হাজার ৪৪ জন দক্ষ কর্মী। যা মোট শ্রমবাজারের ২৩ দশমিক ৬২ শতাংশ। একই সময়ে স্বল্প দক্ষ কর্মী (অদক্ষ) হিসেবে চার লাখ ৯১ হাজার ৪৮০ জন বা ৫৪ দশমিক ২৩ শতাংশ বিদেশে গেছেন। বিদেশগামী কর্মীদের প্রশিক্ষণের জন্য সরকারের ১১০টি প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
গত পাঁচ বছরে ওই ট্রেনিং সেন্টারগুলো থেকে চার লাখ ১২ হাজার ৫০৪ জন কর্মী প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। তবে প্রশিক্ষণ শেষে মাত্র ৮-১২ শতাংশ বিদেশে যেতে পেরেছে। আর দেশে কাজ পেয়েছে ১৫-২০ শতাংশ। বাকি ৭০ শতাংশই কাজ না পেয়ে হতাশায় ভুগছেন।
সূত্র আরও জানায়, দক্ষ জনশক্তি গড়তে দেশে বৈশ্বিক মানদণ্ড অনুযায়ী দেশে ট্রেনিং দেয়া হচ্ছে না। প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোতে ট্রেইনার ও যন্ত্রপাতির অভাব রয়েছে। তাছাড়া ট্রেনিং সেন্টারগুলোও মান্ধাতা আমলের। সেখানে যেসব ট্রেনিং দেয়া হয় সেগুলো ফলপ্রসূ হয় না। যদিও সরকার চাইলে বিদেশি শ্রমবাজার উপযোগী শ্রমিক তৈরি করতে পারে। সেজন্য প্রয়োজনে প্রফেশনাল ট্রেইনার আনতে পারে।
এদিকে এ বিষয়ে ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্টদের সংগঠন বায়রার মহাসচিব আলী হায়দার চৌধুরী জানান, টিটিসিগুলো থেকে কর্মীদের ট্রেনিংয়ের পর সার্টিফিকেট দেয়া হয়। কিন্তু তারা অভিজ্ঞতার নিশ্চয়তা দেয় না। ওই ট্রেনিং নিয়ে কর্মীরা বিদেশ যাওয়ার মতো দক্ষ হয় না। পাশাপাশি নিয়োগকর্তারা এসে আগে দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা দেখে। এ সংকট নিরসনে রিক্রুটিং এজেন্সি ও টিটিসির মধ্যে কানেক্টিভিটি বাড়ানো প্রয়োজন।