প্রধান উপদেষ্টা

ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন, ভোট হবে উৎসবমুখর

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: আগস্ট ৫, ২০২৫, ১১:৩৪ পিএম

বহুল প্রত্যাশিত জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগামী ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

মঙ্গলবার রাতে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস’ উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি এই ঘোষণা দেন।

ড. ইউনূস বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে আমি প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে চিঠি পাঠাব, যাতে নির্বাচন কমিশন আগামী রমজানের আগেই— ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে— জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। সবাই দোয়া করবেন যেন এই নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয় এবং দেশের সব নাগরিক একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ার কাজে সফলভাবে এগিয়ে যেতে পারে।”

তিনি জানান, নির্বাচন যেন সুষ্ঠু, উৎসবমুখর এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়, সে লক্ষ্যে সরকার সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “এই নির্বাচনের দিনটি যেন আমাদের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকে— তা আনন্দ-উৎসব, শান্তি-শৃঙ্খলা, ভোটার উপস্থিতি এবং পারস্পরিক সৌহার্দ্যের দিক থেকে। এ লক্ষ্যে মানসিক প্রস্তুতি এবং প্রাতিষ্ঠানিক আয়োজন এখন থেকেই শুরু করা হবে।”

ভোটারদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমরা প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটদানের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে চাই। আমাদের রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের ঐতিহাসিক অবদানের প্রতি সম্মান জানিয়ে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ নিশ্চিত করাও আমাদের অঙ্গীকার।”

নারী ভোটারদের অংশগ্রহণের বিষয়েও গুরুত্বারোপ করে ড. ইউনূস বলেন, “নারী ভোটাররা যেন নির্ভয়ে, স্বতঃস্ফূর্তভাবে এবং আনন্দ-উৎসাহ নিয়ে ভোট দিতে পারেন, সেটি নিশ্চিত করতে আমরা প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেব।”

তিনি বলেন, “গত ১৫ বছর ধরে দেশের মানুষ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি। এবারের নির্বাচন সেই বঞ্চনার অবসান ঘটাবে। এবার হবে ভোটের মহোৎসব— আমাদের বকেয়া আনন্দসহ একটি গণতান্ত্রিক বিজয়ের দিন।”

ভোটারদের অংশগ্রহণের ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, “অনেকেই আছেন যারা ১৫ বছর আগে থেকেই ভোট দেওয়ার যোগ্য ছিলেন, কিন্তু একবারও ভোট দিতে পারেননি। আবার অনেকেই আছেন যাঁরা ৫ বা ১০ বছর আগে ভোটার হয়েও ভোটের সুযোগ পাননি। এবার ভোট দিতে পারবেন নতুন প্রজন্মের সেই সৌভাগ্যবান নারী ও পুরুষ, যারা প্রথমবার ভোটার হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করলেন এবং একইসঙ্গে ভোট দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন।”

ভোটের দিনকে “ঈদের উৎসবের মতো” করতে চাওয়ার কথা জানিয়ে ড. ইউনূস বলেন, “আপনারা সবাই বাচ্চাকাচ্চাদের সঙ্গে নিয়ে ভোটকেন্দ্রে যাবেন। নাগরিক অধিকার প্রয়োগের এই আনন্দময় অভিজ্ঞতা পরবর্তী প্রজন্মের কাছে তুলে ধরুন।”

তিনি আহ্বান জানান, “এখন থেকেই এলাকাভিত্তিক আলোচনার মাধ্যমে নির্ধারণ করুন— কেমন ভোটদান ব্যবস্থা হলে তা হবে আনন্দমুখর ও সুন্দর। এই নির্বাচনই হবে নতুন বাংলাদেশের ভিত্তি। চলুন, প্রস্তুতি নেই এই ঐতিহাসিক পরীক্ষায় সাফল্য অর্জনের জন্য।”

ভোটের গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, “যাদের তাজা রক্তের বিনিময়ে আমরা আমাদের ভোটাধিকার ফিরে পেয়েছি, ভোট দেওয়ার আগমুহূর্তে যেন তাদের মুখ আমাদের চোখে ভেসে ওঠে।”

শেষে তিনি বলেন, “ফেব্রুয়ারি দূরে নয়। প্রস্তুতি নিতে নিতে ভোটের দিন এসে যাবে। বহু বছর আমরা ভোট দিতে পারিনি— এবার সবাই ভোট দেব, কেউ বাদ যাবে না। যেন আমরা বলতে পারি, নতুন বাংলাদেশ গড়ার যাত্রায় আমার ভোটও ছিল।”

ইএইচ