দোয়ারাবাজারে দিনে ১৮ ঘণ্টাই বিদ্যুৎ থাকে না

দোয়ারাবাজার (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি প্রকাশিত: আগস্ট ২৪, ২০২২, ০৫:৪৭ পিএম

বিদ্যুৎ আসেনা, শুধুই যায়। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১৮ ঘণ্টায় থাকছে না বিদ্যুৎ। কোন কোন সময় ঘণ্টায় ৮/১০ বার লোডশেডিং হচ্ছে। নিয়মবহির্ভূত বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনার এমন অভিযোগ সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলা পল্লীবিদ্যুৎ অফিসের বিরুদ্ধে।

স্থানীয়রা জানায়, নিয়মবহির্ভূত ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের ফলে মানুষ ঘুমাতে পারছেনা। বিদ্যুৎ একবার গেলে আর আসেনা, কোন কোন সময় ঘণ্টায় ৮/১০ বার ও লোডশেডিং হচ্ছে। এতে ছাত্র-ছাত্রীরা মোমবাতি জ্বালিয়ে লেখাপড়া করতে হচ্ছে। চিকিৎসাকেন্দ্র গুলোতে চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে। হাতপাখার কদর বেড়েছে। বর্তমানে এমনিতেই গ্রাম ও শহরে জ্বর, ঠাণ্ডা দেখা দিয়েছে। এতে অতিরিক্ত লোডশেডিং এর ফলে এসব জ্বরের রোগীরা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। মিল কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। মুরগী ও গবাদি পশুর খামারিয়া বিপাকে পড়েছে।

দোয়ারাবাজার উপজেলার গ্রাহকদের অভিযোগ,আধা ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকলে চলে যায় কয়েক ঘণ্টার জন্য, দিনে ১৫/২০ বার বিদ্যুৎ নেওয়া হচ্ছে। দিনরাত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১৮ ঘণ্টায় থাকছে না বিদ্যুৎ। বিদ্যুতের অসহনীয় লোডশেডিংয়ে জনজীবন চরম বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। তীব্র তাপবদাহ, ভ্যাপসা গরম ও রৌদ্রের প্রখরতার সাথে যেন পাল্লা দিয়ে চলছে দোয়ারাবাজারে পল্লী বিদ্যুতের লোডশেডিং। এ লোডশেডিংয়ের কবলে পড়ে হাজার হাজার গ্রাহক ভোগান্তির শিকার হচ্ছে।
উপজেলা সদরের বাইরে প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে রাতে ও দিনে কমপক্ষে ১৫/২০ বার লোডশেডিং দেওয়া হয়।

ভুক্তভোগী উপজেলাবাসীরা জানায়, সন্ধ্যা ৭টায় থেকে কখনো কখনো মাঝ রাত পর্যন্ত বিদ্যুৎ থাকে না। ফলে এসএসসি, এইচএসসি পরীক্ষার্থীসহ সকল শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। অনেক সময় মৃদু হালকা বৃষ্টির অজুহাতেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ থাকে। উপজেলার প্রায় সবকটি ইউনিয়ন থেকে এমন অভিযোগ আসে। রাতেও দীর্ঘ সময় ধরে বিদ্যুৎ থাকে না। উপজেলাবাসী অনেকেই পল্লী বিদ্যুতের, ডিজিএম, এজিএমের উপর ক্ষোভ প্রকাশ করে তার বদলির দাবি ও করেছেন। ভুক্তভোগীরা জানায় পল্লী বিদ্যুৎ লোডশেডিং এর বিষয়ে ডিজিএম, এজিএমকে ফোন করলে তারা গ্রাহকের ফোন রিসিভ করেন না। উপজেলা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি জানায়- কর্তৃপক্ষ বলছে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন না হওয়ায় ঘন ঘন লোডশেডিং দিতে হচ্ছে।

বিদ্যুৎ লোডশেডিংয়ে উপজেলা প্রশাসন, হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সহ জরুরি অনেক কাজেও ব্যাঘাত ঘটছে প্রতিনিয়ত। এসব সমস্যা থেকে উত্তরণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থা গ্রহণে জোর দাবি জানিয়েছে উপজেলার সর্বসাধারণ। আকাশে মেঘ জমলেই চলে যায় বিদ্যুৎ। যতক্ষণ মেঘ-বৃষ্টি থাকে, ততক্ষণ বিদ্যুতের দেখা মেলে না। এর বাইরেও ঘন ঘন লোডশেডিং এবং বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে অতিষ্ঠ হয়ে পরেছে দোয়ারাবাসী।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহ ধরে দোয়ারাবাজার উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় মাত্রাতিরিক্ত নিয়মবহির্ভূত ভাবে লোডশেডিং চলছে। আকাশে একটু মেঘ আর হালকা বাতাস পেলেই চলে যায় বিদ্যুৎ। দিনে অন্তত ১৫/২০ বারের বেশি সময় লোডশেডিং হয়। বিদ্যুৎ অফিসে যোগাযোগ করা হলেও এ থেকে প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছেনা।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, সন্ধ্যার পর একাধিকবার বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় পড়াশোনা করতে খুব কষ্ট হয়। বার বার লোডশেডিং হওয়ার ফলে লেখাপড়াও ঠিকমতো হয় না। তাই এ সমস্যা দ্রুত সমাধানের দাবি জানান তারা।

দোয়ারাবাজার উপজেলা বিদ্যুৎ বিভাগের (এজিএম) জাহিদুল ইসলাম জানান, আমাদের চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ পাচ্ছিনা। অর্ধেকের চেয়ে ও কম বিদ্যুৎ দেওয়া হচ্ছে আমাদেরকে। এই অর্ধেক বিদ্যুৎ পাওয়ায় আমরা সবাইকে এক সাথে বিদ্যুৎ দিতে পারছিনা। বাস্তবতার সাথে ওই সিডিউলের কোন মিল নেই, একারণেই সেটা মানা সম্ভব হচ্ছেনা।

গ্রাহকরা দিনে-রাতে অর্ধেক সময়ও ২৪ ঘণ্টার ১৮ ঘণ্টায় বিদ্যুৎ পাচ্ছেন না এমন অভিযোগে তিনি জানান, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১৮ ঘণ্টা বিদ্যুৎ পাচ্ছেনা বিষয়টি ভুল। আমরা ২৪ ঘণ্টার ১২ ঘণ্টায় বিদ্যুৎ দিচ্ছি।

আমারসংবাদ/এসএম