বরেন্দ্র অঞ্চলে অবহেলিত আদিবাসী নারী শ্রমিকদের মজুরি বৈষম্য

গোদাগাড়ী (রাজশাহী) প্রতিনিধি প্রকাশিত: আগস্ট ২৫, ২০২২, ০৫:৪৫ পিএম

রাজশাহীর গোদাগাড়ীসহ বরেন্দ্র অঞ্চলের অধিকাংশ জেলায় নারীর অধিকার, মজুরি বৈষম্য এবং নারী নির্যাতন এখনো বন্ধ হয়নি। নারী-নির্যাতন বন্ধ, নারীর অধিকার, মজুরিসহ নানা বিষয়ে সম-অধিকার নিয়ে সভা-সেমিনার হলেও বাস্তবে নারী শ্রমিকরা যুগের পর যুগ নির্যাতন সহ্য করছে।জীবন-জীবিকার তাগিতে পুরুষ শ্রমিকদের সঙ্গে মাঠে-ময়দানে হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করলেও মিলছে না সমান মজুরি।

এক্ষেত্রে সবচেয়ে পিছিয়ে আছেন আদিবাসী নারীরা। এ অঞ্চলের নারীরা এতটাই পিছিয়ে যে, প্রতিবছর নারী দিবস নামে একটি দিবস পালিত হয়। অনেকে নারী জানেনই না নারী দিবস কি?

রাজশাহী অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় নারী শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা এখনো নির্যাতনের শিকারসহ বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছেন। সেই সঙ্গে এখনো রয়েছে মজুরি বৈষম্যের চিত্র। নারীরা তুলে ধরেন তাদের কষ্টের কথা। তাদের অভিযোগ তারা মাঠে-ঘাটে, ময়দানে পুরুষদের সঙ্গে সমানভাবে কাজ করলেও নারীরা সমান মজুরি থেকে বঞ্চিত।

নারীদের সুরক্ষা ও ন্যায্য অধিকার (মজুরির) নিয়ে প্রতিবাদ করেও কোনো ভাবেই আশানুরূপ ফল পাচ্ছেন না বলে জানান একাধিক নারী শ্রমিক। তারা ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, জীবন-জীবিকার তাগিদে তারা কম মূল্যে মাঠে-ঘাটে কাজ করেই যাচ্ছেন। শুধু তাই নয়, তারা পুরুষ শ্রমিকদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কাজ করছেন।

স্থানীয়ভাবে একদিনের পুরুষ শ্রমিকের মজুরি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। কিন্তু নারী সমান কাজ করে মজুরি পাচ্ছেন ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা।বর্তমানে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় নারী শ্রমিকেরা পাচ্ছেন ৩০০ টাকা, পুরুষেরা পাচ্ছেন ৪৫০ টাকা। নারী শ্রমিকরা বোরো, আউশ, আমন চারা রোপণসহ বিভিন্ন মৌসুমি ফসলের পরিচর্যা, মাটি কাটা, চাতাল, ইটভাটায় ও রাজমিস্ত্রির কাজও করছেন।

সাধারণত সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত কাজ করলে তাদের একদিনের কাজ ধরা হয়।রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলায় জামতলা আদিবাসী পাড়ার নারী শ্রমিক মায়া রানী জানান, জমিতে ধান রোপণ ও কাটা মাড়াইসহ বিভিন্ন কৃষি কাজ দীর্ঘদিন ধরে করে আসছি।

তিনি আরো বলেন, জমিতে কাজে গেলে কত বৃষ্টি-বাদলসহ মাথার উপর হয়ে যায়। কিন্তু সে তুলনায় পুরুষদের চেয়ে আমাদের মজুরী কম। জাতীয় আদিবাসী পরিষদ রাজশাহী জেলা সভাপতি বিমল চন্দ্র রাজোয়াড় জানান, বরেন্দ্র অঞ্চলের হাজার হাজার একর জমিতে বিভিন্ন উন্নত জাতের ফসল উৎপাদন হচ্ছে। যা এ এলাকার খাদ্যের চাহিদা মিটিয়ে উৎবৃত্ত থাকে। আর এই খাদ্য ভাণ্ডার বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষি কাজে পুরুষ শ্রমিকদের পাশাপাশি নারী শ্রমিকরা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন।

তিনি বলেন, গোদাগাড়ী উপজেলায় এখন প্রায় ১২ হাজারের বেশি নারী কৃষি শ্রমিক রয়েছেন।

আদিবাসি নারী নেত্রী সুস্মিতা টুডু বলেন, এলাকার আদিবাসি নারী শ্রমিকরা কৃষিকাজে অভাবনীয় সাফল্য এনেছেন। অন্যের জমিতে কাজ করার পাশাপাশি নিজেরায় দক্ষতার সঙ্গে ফসলচাষ করে সফল হচ্ছেন। রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চল, গোদাগাড়ী, তানোর মোহনপুর, নাচোল, নিয়ামতপুর, ধামইরহাট, গোমস্তাপুর, মহাদেবপুর, মান্দা উপজেলাসহ এ এলাকায় বসবাসকারী প্রায় ৩১ হাজারের বেশি আদিবাসী নারী কৃষি কাজে অগ্রণী ভূমিকা রাখছেন। বেশির ভাগ আদিবাসি নারী অন্যের জমিতে কৃষি শ্রমিক হিসেবে কাজ করে থাকেন। এই নারীরা কাজে পুরুষের সমপরিমাণ কাজ করলেও মজুরি বৈষম্যের শিকার হয়ে থাকেন। 
আদিবাসী নারী শ্রমিকরা বলেন, আদিকাল হতে বংশ পরম্পরায় আমরা কৃষিকাজ করে আসছি এবং কৃষি কাজই তাদের প্রধান পেশা হিসেবে যুগ যুগ ধরে চলে আসছে।

এ প্রসঙ্গে সম্মিলিত আদিবাসী নারী জোটের সভাপতি কল্পনা তির্কী বলেন, এ অঞ্চলের আদিবাসীরা জঙ্গল পরিষ্কার করে সব জমিকে ফসলি জমিতে পরিণত করেছেন। ধানসহ ফসল উৎপাদনে আদিবাসী শ্রমিকদের অবদান রয়েছে সবচেয়ে বেশি।

তিনি জানান, আদিবাসী নারীদের কৃষি শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানসহ ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করার দাবী জানান।

আমারসংবাদ/এসএম