চলতি বছরেই খুলে দেয়া হবে কুমারখালী-যদুবয়রা গড়াই সেতু

নজরুল ইসলাম মুকুল, কুষ্টিয়া প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২২, ০২:৫৯ পিএম

কুষ্টিয়ার কুমারখালীসহ আশপাশ জেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের গণমানুষের প্রাণের দাবি ছিলো পদ্মার শাখা নদী গড়াইয়ের উপর দিয়ে কুমারখালী-যদুবয়রা সেতুর। অবশেষে সেই স্বপ্ন পূরণের আশ্বাস দিয়ে সরকার বাস্তবায়ন করছে ৮৯ কোটি ৯১ লাখ ৩৫ হাজার ৫৯১ টাকা ব্যয়ে কুমারখালী-যদুবয়রা গড়াই সেতু।  

করোনাকালীন ও ভুমি অধিগ্রহনের জটিলতার কারনে বেধে দেয়া নির্দিষ্ট সময়ে সেতুটি তৈরী করতে বিলম্ব হলেও সময় বৃদ্ধি করে কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) কুষ্টিয়া।

চলতি বছরেই জনগনের জন্য সেতুটি খুলে দেয়ার পরিকল্পনা থাকলেও আরও এক বছর সময় লাগবে বলে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা জানায়। কুমারখালী উপজেলার দক্ষিনের পাঁচ ইউনিয়নের মানুষের দীর্ঘদিনের প্রতিক্ষিত গড়াই নদীর উপর নির্মাণাধীন সেতুটি নির্মাণ করছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) কুষ্টিয়া।

১১২টি পাইলের উপর ৬৫০ মিটার  দৈর্ঘ্য পিসি গার্ডারে সেতুর ওয়ার্কওয়েসহ ৯ দশমিক ৮০ মিটার চওড়া করা হচ্ছে। এছাড়াও দুই পাড়ে মোট ৮০০ মিটার দৈর্ঘ্য এপ্রোচ সড়ক ও নদী শাসনে প্রটেকটিভ ওয়ার্ক নির্মাণ করা হচ্ছে সাড়ে তিন শত মিটার।

দেশের অন্যতম বৃহৎ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নেশনটেক কমিউনিকেশন লিমিটেড ও রানা বিল্ডার্স যৌথভাবে সেতুর নির্মাণ কাজ করছে। ২০১৯ সালের ১৭ এপ্রিল কাজের ওয়ার্ক অর্ডার পেয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যেই ১১টি স্প্যানের কাজ শেষ করেছে।

৫২টি পিসি গার্ডারের সেতুতে স্প্যান রয়েছে ১৩টি। প্রতিটি স্প্যানের দৈর্ঘ্য হচ্ছে ৫০ মিটার, চওড়া হচ্ছে ৯.৮০ মিটার, সেতুর দক্ষিণের যদুবয়রা পাড়ের গার্ডার  এবং উত্তর পাড়ের গার্ডার ঢালাই ইতিমধ্যেই শেষ হয়েছে।

১৩টি স্প্যানের ১১টির ছাদ ঢালাইও হয়েছে সম্পন্ন। বর্তমানে নদীর তলদেশে পানি থাকলেও দুই পাশের অধিকাংশ স্প্যান বালুর চরে আটকে আছে। সেতুর উপরিভাগের কাজ পুরোদমে চলছে বলে ম্যাটিরাল প্রকৌশলী শরীফ হোসেন এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন।

তিনি আরো বলেন, ইতিমধ্যেই মূল সেতুর প্রায় ৭০ শতাংশ কাজ সমাপ্ত হয়েছে।

ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের দায়ীত্বরত প্রোজেক্ট ম্যানেজার প্রকৌশলী আশিক আহমেদ জানিয়েছেন, এখন মূল গার্ডারের উপরে ডেক্সক্লাব, রেলিং ও প্রচ গার্ডারের কাজ করা হচ্ছে। নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ করার চেষ্টা করা হলেও করোনা পরিস্থিতির কারণে তা সম্ভব হয়নি। আরো এক বছর কাজের মেয়াদ বৃদ্ধিও জন্য আবেদন করা হয়েছে বলেও তিনি জানান।

গত ২৫ অক্টোবর ২০২১ সেতুর নির্মাণ কাজ সমাপ্তির কথা ছিল। গত বছর করোনার কারণে অর্থ সংকটে কাজ বন্ধ ছিল।

এদিকে সেতুর দুই পাশে নদী শাসন ও এপ্রোচ সড়ক নির্মাণ করার সতল প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। সড়কের জন্য জমি অধিগ্রহন মাপ-জোক  ইতিমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। তবে নদী শাসনের কাজ ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে। কুমারখালী পাড়ে ৩শত ও যদুবয়রা পাড়ে ৫শত মিটার দৈর্ঘ্য এপ্রোচ সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে।

ধীগতির বিষয়ে কথা হলে উপজেলা এলজিইডি কর্মকর্তা জানান, এলজিইডি সব সময় তদারকি করছে। করোনার কারণে শিডিউল অনুযায়ী কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি।

স্থানীয় সংসদ সদস্য ব্যারিষ্টার সেলিম আলতাফ জর্জ জানান, আমি সব সময় কাজের তদারকি করেছি। করোনা জটিলতা, শ্রমিক সমস্যার কারনেই শিডিউল অনুযায়ী কাজ শেষ হয়নি। অর্থের কোনো সংকট নেই, আশা করছি চলতি বছরেই কাজ শেষ হবে।

সেতুর নামকরণের বিষয়েও তিনি জানান, জনগণ বলছে শহীদ গোলাম কিবরিয়ার নামেই হোক, আমিও জনগণের সাথে নামকরনে একমত।

এদিকে এই সেতু দ্রুত শেষ করতে এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ জাহিদুর রহমান মন্ডল সার্বক্ষনিক তদারকি করছেন।

তিনি বলেন, ভূমি অধিগ্রহণের জটিলতা কেটে গেলেই আর কোন সমস্যা থাকবে না। তবে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভুমি অধিগ্রহনের কাজ প্রায় শেষ করে ফেলেছে। চলতি বছরের শেষের দিকে জনগনের জন্য এই সেতু খুলে দিতে পারবো।

কুমারখালীবাসীর বহু প্রত্যাশিত এই টোল ফ্রি সেতু নির্মাণ হলে উপজেলার সাথে ঝিনাইদহ ও মাগুরার দূরত্ব এবং গড়াই নদী দ্বারা বিভক্ত দক্ষিণের পাঁচটি ইউনিয়নের মানুষের দীর্ঘ দিনের দুর্ভোগ কমবে। শিল্প শহর কুমারখালীর অর্থনৈতিক গতি পাবে।

এআই