শেরপুরের সুগন্ধি তুলসীমালা চাল

ঝিনাইগাতি (শেরপুর) প্রতিনিধি প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৬, ২০২২, ০৭:৩২ পিএম

শেরপুর জেলার ৫টি উপজেলাতেই প্রায় সব ধরনের কৃষি ফসল উৎপাদন হয়ে থাকে। এর মধ্যে উল্লেখ যোগ্য কিছু কৃষি ফসল উৎপন্ন হয় তার মধ্যে অন্যতম ঐতিহ্য সুগন্ধি তুলসীমালা ধান। এ জাতের ধান থেকে চালের পিঠা, পায়েস, খই-মুড়ি, ভাতের সুগন্ধ ও স্বাদ অসাধারণ। ‘পর্যটনের আনন্দে, তুলসীমালার সুগন্ধে’ তুলসীমালা চালের ব্যবহার হয় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে।

শেরপুরের এই সুগন্ধি চালের ব্যবহার বিয়ে, বনভোজন, মিলাদ মাহফিল সহ বিশেষ বিশেষ পর্বে এ চাউল অত্যন্ত গুরুত্ব পেয়ে থাকে। এ চালের সুগন্ধি ও স্বাদের কারণে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তুলসীমালা চাল একটি চিকন ও সুগন্ধি প্রজাতির চাল। উচ্চ গুণগত মানসম্পন্ন এ চাল অ্যান্টিঅক্সিজেন, প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও খনিজসমৃদ্ধ। ঈদ, পূজা-পার্বণ, বিয়ে, বউভাতসহ বিভিন্ন উৎসব ও অনুষ্ঠানে পোলাও, বিরিয়ানি, মিষ্টান্ন তৈরিতে তুলসীমালা চালের জুড়ি নেই।

অনেকেই শখের বসে এই আতব ধানকে জামাই আদরি ধান বলে থাকে গ্রাম অঞ্চলে। শেরপুর জেলার এই ঐতিহ্যবাহী উৎপাদিত ফসল তুলসীমালা ধানের সুক্ষেতি সারাদেশ জুরেই রয়েছে। উক্ত ফসলটি আমন মৌসুমেই হয়ে থাকে। তবে ভিন্ন জাতের সরু ধানের চাষ এখন বোর মৌসমেও চাষ হয়ে থাকে। কিন্তু আমন মৌসুমের মতো তেমন সুগন্ধি জাতের ধান বোর মৌসমে হয় না।

শেরপুর সদর, ঝিনাইগাতী, নালিতাবাড়ী, নকলা ও শ্রীবরদী উপজেলার প্রায় ১৭/১৮ হাজার হেক্টর জমিতে তুলসীমালা ধান আবাদ হয়। জেলার অর্ধশত স্বয়ংক্রিয় চালকলে তুলসীমালা চাল তৈরি করা হয় এবং প্রতিবছর প্রায় ৩২ থেকে ৩৫ হাজার মেট্রিক টন চাল রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা ও বিদেশে রপ্তানি করা হয়। ফলে কৃষিনির্ভর শেরপুরের অর্থনীতিতে তুলসীমালা চাল ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে। জেলা ও উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, শেরপুর জেলার ৫ টি উপজেলাতেই আমন ধানের পাশাপাশি আতব ধান তুলসীমালা সরু ধানের চাষ হয়ে থাকে ব্যাপক আকারে।

তুলসীমালা সরু জাতের নানা ধরনের ধানের চাষাবাদ করে কৃষকেরা। যথা কালিজিরা, বাগুন বিচি, চিনি সাগর, ফুলবাসরি, দইনুস, গুয়ামুরি, বাসমতি, বাসপাতাসহ নানা জাতের উৎপাদন করে থাকে অত্র জেলার কৃষকরা। খাদ্যে উদ্বৃত্ত শেরপুর জেলায় রোপা আমন মৌসুমে অর্থাৎ জুলাই-আগস্ট মাসে তুলসীমালা জাতের ধান আবাদ করা হয়। শেরপুর জেলার ৫০ হাজার কৃষক আমন মৌসুমে প্রায় ৮ হাজার হেক্টর জমিতে তুলসীমালা ধান আবাদ হয়। উৎপাদন হয় প্রায় ১৭/১৮ হাজার মেট্রিক টন ধান। ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে এ চাল বাজারে আসেতে শুরু করে।

শেরপুরের ঝিনাইগাতি উপজেলার সদর ইউনিয়নের কৃষক কামাল বলেন, ‘আমি প্রতিবছর তুলসীমালা ধানের আবাদ করি। চলতি মৌসুমে ২ একর জমিতে এ ধান আবাদ করেছি। প্রতি একর জমিতে ৪০ মণ করে ২ একর জমিতে ৮০ মণ ধান হয়েছে। এ ধান আবাদ করে আমি লাভবান হয়েছি। তাই আমি প্রতি বছর এই লাভজনক আতব তুলসীমালা জাতের ধান চাষ করি। বর্তমান প্রতিমণ তুলসীমালা আতব ধানের বাজার মূল্য ২৩/২৪শ” টাকা দরে বাজারে বিক্রি হচ্ছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর শেরপুরের উপপরিচালক সুকল্প দাস এর কাছে জানা যায়, দেশেও যেমন তুলসীমালা জাতের ধানের চাহিদা রয়েছে ঠিক তেমনি বিদেশেও তুলসীমালা চালের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তাই এ চাল উৎপাদনে কৃষকদের বিশেষভাবে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। পাশাপাশি তুলসীমালা চাল উৎপাদনকারীদের আর্থসামাজিক উন্নয়নে তুলসীমালা চালের মূল্য সংযোজন ও বাজার সংযোগ স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে কৃষকেরা যেমন ধানের ন্যায্যমূল্য পাবেন, তেমনি এ চাল বিপণনে নতুন নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি হবে। ভোক্তারা গুণগত মানসম্পন্ন চাল কিনতে পারবেন।

এসএম