২০ নারী উদ্যোক্তা ফুটিয়েছে ১ লাখ ভিনদেশী টিউলিপ

তেঁতুলিয়া (পঞ্চগড়) প্রতিনিধি প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৯, ২০২৩, ০১:০৫ পিএম

বাংলাদেশের সর্বউত্তরের উপজেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া। এই উপজেলায় ২০ জন নারী উদ্যোক্তা খামার পর্যায়ে চাষ করেছে ভিনদেশী ফুল টিউলিপ। তারা এবার ফুটিয়েছে ১০ রঙের ১ লাখ  টিউলিপ। এই অঞ্চলে দ্বিতীয়বারের মতো চাষ হচ্ছে এই  ফুল। গতবছরের মতো এবারো এই টিউলিপ ফুল দেখতে ছুটে আসছে  দেশের নানা প্রান্ত থেকে দর্শনার্থীরা। 

তেঁতুলিয়া থেকে ১০ মিনিটের রাস্তা অতিক্রম করে দর্জিপাড়া গ্রামে গেলেই দেখা মিলবে এই টিউলিপ ফুল। আগত দর্শনার্থীরা চাইলে ফুল কিনেও নিয়ে যেতে পারছেন এখান থেকে। হিমালয়-কাঞ্চনজঙ্ঘা ও সমতলের চা সৌন্দর্যের পর মুগ্ধতা কাড়ছে নেদারল্যান্ডের টিউলিপ ফুল। ভিনদেশি এ টিউলিপ চাষে পর্যটনে যুক্ত হয়েছে নতুনমাত্রা।

এবার দুই একর জমিতে এক লাখ গাছে ফুটেছে বাহারি রঙের ১০ প্রজাতির রাজসিক টিউলিপ। রং গুলো হচ্ছে- অ্যান্টার্কটিকা হোয়াইট (সাদা), ডেনমার্ক (কমলা ছায়া), লালিবেলা (লাল), ডাচ সানরাইজ (হলুদ), ষ্টংগোল্ড (হলুদ),জান্টুপিঙ্ক (গোলাপী), হোয়াইট মার্ভেল (সাদা), মিষ্টিকভ্যান ইজক (গোলাপী), হ্যাপি জেনারেশন (সাদা লাল ছায়া) এবং গোল্ডেন টিকিট (হলুদ)।

পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) এবং ইণ্টারন্যাশনাল ফান্ড ফর এগ্রিকালচার ডেভলপমেন্ট (ইফাদ)”র সহযোগিতায় দেশের উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা ইকো সোশ্যাল ডেভলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ইএসডিও)’র মাধ্যমে পাইলট প্রকল্পে চাষ করা হচ্ছে বিদেশি ফুল টিউলিপ। মঙ্গলবার (৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে প্রান্তিক সীমান্ত গ্রাম দর্জিপাড়ায় এ অঞ্চলে টিউলিপ পাইলট প্রকল্প নিয়ে জেলা-উপজেলার গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকদের অবহিতকরণ করেছেন ইএসডিও’র পরিচালক (প্রশাসন) ড. সেলিমা আখতার।

ড.সেলিমা আখতার বলেন, ভৌগলিক অবস্থানগত দিক থেকে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া পর্যটনে অপার সম্ভাবনাময় এলাকা। হিমালয়কন্যা এ জেলার তেঁতুলিয়ায় আমরা ইকো ট্যুরিজম গড়ে তুলতে ভিনদেশি টিউলিপ ফুলের চাষ পাইলট প্রকল্প গ্রহণ করেছি। গত বছর আমরা পরীক্ষামূলকভাবে দর্জিপাড়া-শারিয়ালজোত দুটি গ্রামে ৮জন প্রান্তিক নারী কৃষাণীদের নিয়ে ৪০ হাজার টিউলিপ চাষ শুরু করি। প্রথমবারেই টিউলিপ ফুটিয়ে অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলেছে নারীরা। দ্বিতীয়বারের মতো বাণিজ্যিকভাবে ২০ জন নারী কৃষাণীদের হাতে প্রস্ফুটিত হচ্ছে ভিনদেশি নেদারল্যান্ডের উচ্চ মূল্যের দামি ফুল। পর্যটন এলাকায় টিউলিপ ফুলের বাগান সৃষ্টি হওয়ায় পর্যটনের আকর্ষণও বেড়েছে। দেশ বিদেশের নানা প্রান্ত থেকে পর্যটকরা এসে বাহারি রঙের টিউলিপ ফুল দেখে মুগ্ধ হচ্ছেন। কেউ সেলফি তুলছেন। আবার কেউ ফুল কিনছেন। এখন প্রতিদিনই ফুটছে নতুন নতুন ফুল। এ ফুল ঘিরে নারী কৃষাণীদের আয়ের স্বপ্ন তৈরি হয়েছে। এ ফুলের পর অন্য সময়টাতেও দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ফুল চাষাবাদ করতে পারবেন তারা। সামনে ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস, ২১ ফেব্রুয়ারি মহান মাতৃভাষা দিবস ও ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস রয়েছে। বিশেষ করে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস রাঙাবে আমাদের টিউলিপ। মুগ্ধ করবে যেকোন পর্যটকদের।

টিউলিপ ঘিরে পর্যটকদের আকর্ষণে কিছু নতুন সংযোজন করা হয়েছে। সবুজ গমের চারার মাঝে টিউলিপ ফুটিয়ে জাতীয় পতাকার রূপ দেয়া হয়েছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকদের এখানে ঘুরতে এসে যাতে কোন প্রকার অসুবিধা না হয়, সেজন্য এখানেই ইকো ট্যুরিজমের মাধ্যমে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা হিসেবে হোটেল দেয়া হয়েছে। তারা এখানকার ঐতিহ্যবাহী খাবার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

পর্যটকরা বলছেন, ফাগুনের আগমনে বসন্ত রাঙাচ্ছে নেদারল্যান্ডের ফুটন্ত টিউলিপ। যেন আমরা কাশ্মীর বা নেদারল্যান্ডে আছি। বাহারি রঙের টিউলিপ সৌন্দর্য আমাদেরকে মোহিত করছে। দেশের মাটিতে এরকম বাণিজ্যিক আকারে শীত প্রধান দেশের এমন দামি ফুল চাষ হবে ভাবাই যায় না। খুব অভিভূত হয়েছি।

তেঁতুলিয়া কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা বলেন, তেঁতুলিয়ার মাটিতে ভিনদেশি ফুল, সবজি ও ফল চাষ হচ্ছে। হিমালয়-কাঞ্চনজঙ্ঘার সৌন্দর্যের পর  পিকেএসএফ  সহযোগিতায় ইএসডিও’র মাধ্যমে পাইলট প্রকল্পে বিদেশি ফুল টিউলিপ চাষে এ অঞ্চলে পর্যটনে নতুনমাত্রা তৈরি করেছে। সেই সাথে এ টিউলিপ চাষে ২০ নারী চাষিদের অর্থনীতি সমৃদ্ধি ঘটছে। কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় সব সময় পাশে আছে। আগামীতে টিউলিপ চাষ আরও বড় আকারে সস্প্রসারিত করা হলে অর্থনীতি ও আর্থ-সামাজিক এবং পর্যটনে সমৃদ্ধ ঘটবে বলে আশা করছি।

কেএস