বিয়ের দাবিতে প্রেমিকের বাড়িতে দুই সন্তানের জননীর অনশন

শ্রীপুর (মাগুরা) প্রতিনিধি প্রকাশিত: মার্চ ২, ২০২৩, ০৩:২৪ পিএম

আমার একটাই দাবি প্রেমিক তোফাজ্জল আমাকে বিয়ে করুক- দুই সন্তানের জননী মহুয়া
আমি মহুয়াকে বন্ধু মনে করেছিলাম। সে আমার সরলতার সুযোগ নিয়েছে- প্রেমিক তোফাজ্জেল
আমার স্ত্রীর চরিত্রগত সমস্যা রয়েছে, থানায় অভিযোগ- স্বামী রফিকুল
এক জনের বিবাহিত বউকে অন্য পুরুষের হাতে আমি তুলে দিতে পারি না- চেয়ারম্যান
আইন অনুযায়ী তালাক কার্যকর হয় নাই ৯০ দিন অতিক্রান্ত হতে হবে- কাজী
অভিযোগের বিষয়টি খতিয়ে দেখছি তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে- পুলিশ

স্বামীর সাথে প্রতারণা করে ৪ বছর যাবৎ অন্য পুরুষের সাথে প্রেম। প্রেমের টানে স্বামীকে দিয়েছে তালাক। অবশেষে স্বামীর বাড়িতে দুই সন্তান রেখে এসে বিয়ের দাবিতে ৫ দিন যাবত প্রেমিকের বাড়িতে অবস্থান করছে ফাতেমা আক্তার মহুয়া (২৯) নামে এই দুই সন্তানের জননী। তবু জোটেনি প্রেমের স্বীকৃতি। সংবাদ পেয়ে ঘটনার পর থেকে প্রেমিক তোফাজ্জেল হোসেন ওরফে শহর আলী (৪০) বাড়ি থেকে পালিয়েছে। প্রেমিক তোফাজ্জেল হোসেন ঢাকায় একটি ঔষধ কোম্পানিতে চাকরি করে। চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে মাগুরা জেলার শ্রীপুর উপজেলার কমলাপুর গ্রামে।

জানা গেছে, ফাতেমা আক্তার মহুয়া যশোর কোতয়ালী থানার বারান্দী পূর্ব মালোপাড়া এলাকার কাপড় ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলামের স্ত্রী। তাদের দীর্ঘ ১১ বছরের সংসারে রাফিম (৯) বছরের একটি ছেলে এবং রাফিয়া (৮ ) নামে বছরের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। ১১ বছর পূর্বে যশোর কোতয়ালী থানার বারান্দী পূর্ব মালোপাড়া গ্রামের শাহজাহান হাওলাদারের ছেলে রফিকুল ইসলামের সাথে একই থানার সুলতানপুর (বাবু পাড়া) গ্রামের ওসমান গণির মেয়ে মহুয়ার সাথে বিয়ে হয়। বিয়ের পর দীর্ঘ ৪ বছর ধরে মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার কমলাপুর গ্রামের তোফাজ্জেল হোসেনের সাথে ওই নারীর পরকীয়া প্রেম গড়ে ওঠে। ভ্রমনের জন্য স্বামী রফিকুল ভারতে গেলে, ফাতেমা আক্তার মহুয়া স্বামীর বাড়ি থেকে পিকনিকে যাওয়ার কথা বলে প্রেমিক তোফাজ্জেল হোসেনের বাড়িতে চলে আসে। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি শনিবার সকাল থেকে ৫ দিন ধরে প্রেমিক তোফাজ্জেল হোসেন বাড়িতে বিয়ের দাবিতে অবস্থান করছে ওই নারী।

এদিকে স্বামী রফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে সোমবার রাতে ওই স্ত্রী ও প্রেমিক তোফাজ্জেল হোসেনের বিরুদ্ধে যশোর কোতয়ালী থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছে।

এ বিষয়ে স্বামী রফিকুল ইসলাম মুঠোফোনে জানান, আমার স্ত্রীর চরিত্রগত সমস্যা রয়েছে। বিয়ের পরে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ছেলের সাথে পরকীয়াতে সে জড়িয়েছে। অবৈধ সম্পর্ক জানাজানি হলে এর আগে সে আত্মহত্যার চেষ্টাও করে। আমি ভ্রমনের উদ্দেশ্যে ভারতে যাওয়ার সুযোগে সে পিকনিকে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। এ সময় আমার বাড়িতে থাকা ৫ লাখ টাকা ও ৩ ভরি স্বর্ণ নিয়ে গেছে,যা সে নিজে মুখেই স্বীকার করেছে।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী ওই নারী বলেন, দীর্ঘ ৪ বছর ধরে তোফাজ্জল হোসেনের সঙ্গে আমার প্রেমের সর্ম্পক। বিয়ের প্রলোভনে বেশ কয়েকবার আমাদের মধ্যে শারীরিক সর্ম্পক হয়েছে। আমার স্বামী আমাদের এই প্রেমের সম্পর্ক জেনে যাওয়ায়, সে আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। কোন উপায় না থাকায় তোফাজ্জেল হোসেনের আশ্বাসেই আমি বিয়ের দাবিতে তার বাড়িতে অবস্থান করছি। আমার একটাই দাবি সে আমাকে বিয়ে করুক।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত তোফাজ্জেল হোসেন বলেন, মহুয়ার সাথে আমি শুধু কথা বলতাম। অন্য কোন সম্পর্ক আমাদের মধ্যে নেই। সে আমাকে বিয়ে দেওয়ার জন্য বিভিন্ন স্থানে একাধিক মেয়ে দেখিয়েছে। আমি তাকে আমার ভাল একজন বন্ধু মনে করেছিলাম। সে আমার সরলতার সুযোগ নিয়েছে। আমি তাকে বিয়ে করতে পারবো না। আইন যেটা করবে আমি সেটাই মেনে নেব।

স্থানীয় কাদিরপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ আইয়ুব হোসেন খান বলেন, বিষয়টি জানার সাথে সাথে আমি ঘটনার সুরাহ করতে অভিযুক্ত তোফাজ্জেল হোসেনের বাড়িতে যায়। এ সময় উৎসুক জনতা দুজনকে বিবাহ দেওয়ার কথা বলে। কিন্তু বিস্তারিত না জেনে এক জনের বিবাহিত বউকে অন্য পুরুষের হাতে আমি তুলে দিতে পারিনা। মেয়েটি বলেছে যে, আমি আসার সময় আমার স্বামীকে নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে তালাক দিয়ে এসেছি। কিন্তু মেয়েটি কোন তালাক নামা দেখাতে পারেনি।তাছাড়া তালাক দেওয়ার সাথে সাথে তালাক কার্যকর হয় না। এসময় মেয়েটির বর্তমান অভিভাবক পিতা-মাতা দুজনের কেউ ঘটনা স্থলে উপস্থিত ছিল না। আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ফিরে আসার পর এক শ্রেনীর সুবিধা বাদি লোক গুটি কয়েক উঠতি মিডিয়া কর্মী দ্বারা আমাকে হেয় প্রতিয়মান করার জন্য সংবাদ পরিবেশন করেছে। এখানে আমার কোন মন্তব্য তুলে ধরে নাই। আমার অপরাধ আমি কেন তাদের কে বিয়ে দিলাম না। অবশ্য অনেক প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়া  সত্য ঘটনা তুলে ধরেছে।

এ ব্যাপারে কাদিরপাড়া ইউনিয়নের কাজী ও ধর্মীয় শিক্ষক মাওলানা আব্দুর রহমান বলেন, আমার জানা মতে এই মেয়ের তালাক হয় নাই। কোন স্ত্রী কর্তৃক স্বামীকে তালাক দেওয়ার সাথে সাথে ইউপি/পৌর/সিটি কর্পোরেশনকে চেয়ারম্যানকে লিখিত ভাবে তালাকের নোটিস দিতে হবে এবং স্বামীকে উক্ত  নোটিসের নকল প্রদান করতে হবে। আর এ কাজটি রাষ্ট্রীয় ডাকযোগে প্রদান করাই সব চেয়ে উত্তম পদ্ধতি। মনে রাখতে হবে তালাক দেওয়ার সাথে সাথই তালাক কার্য়কর হয় না। চেয়ারম্যান উভয় পক্ষের আপোষের জন্য নোটিশ না করলে বা পদেক্ষেপ না নিলেও ৯০ দিন অতিক্রান্ত হলেই তালাক কার্যকর হবে।  

এ বিষয়ে যশোর কতোয়ালি থানার এস আই সাইমুন সাকিব বলেন, মহুয়ার স্বামী রফিকুল ইসলম যশোর কোতয়ালী থানায় স্ত্রী ও প্রেমিক তোফাজ্জেল হোসেনের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ করেছেন। অভিযোগের ভিত্তিতে বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এ বিষয়ে শ্রীপুর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাব্বারুল ইসলাম বলেন, ওই নারী ৯৯৯ ফোন করেছিল। নাকোল ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার বাদশা বুলবুল ঘটনাস্থলে গিয়েছিল। ইউনিয়ন পরিষদের সহযোগীতায় বসানো হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা। আমরা থানায় এসে অভিযোগ দিতে বলেছি। এ বিষয়ে কেউ কোন লিখিত অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পাওয়া গেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

কেএস