নরসুন্দার পাড়ে ইজারাবিহীন পাথর ব্যবসা, রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার

নান্দাইল (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি প্রকাশিত: নভেম্বর ৬, ২০২৩, ০৫:৫০ পিএম

নদীতে পাথর রেখে পানি প্রবাহে বাধা
অবৈধ ক্যাশিং মেশিনে পরিবেশন দূষণ

ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে নরসুন্দা নদী। আর সেই নদীপথকে কাজে লাগিয়ে কোটি কোটি টাকার পাথর আমদানি-রপ্তানি হচ্ছে তারেরঘাট বাজার নামক নরসুন্দা নদীর পাড়ে। এতে করে নান্দাইল উপজেলায় বাণিজ্যিক সুবিধা বাড়লেও সরকার কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে।

ইউনিয়ন পরিষদ থেকে নামমাত্র ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে অবাধে চালিয়ে যাচ্ছে রমরমা পাথর ব্যবসা। সেই পাথর ব্যবসাকে কেন্দ্র করে নরসুন্দা নদীর জমি (চর) দখল ও পানি প্রবাহে প্রতিবন্ধকতাসহ পরিবেশ দূষণ করা হচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, ব্যবসায়ীরা সিলেট, সুনামগঞ্জ  ও ছাতকসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে বড় বড় নৌকা দিয়ে নদীপথে লাখ লাখ ঘনফুট বড় বড় পাথর মুশুলী ইউনিয়নের তারেরঘাট বাজারে নিয়ে আসেন। সেই পাথর নরসুন্দা নদীর তীরে স্তূপ করে রাখা হয়। পরে তা ক্র্যাশিং মেশিনের মাধ্যমে ভাঙানো হয় এবং তা সারাবছর ক্রয়-বিক্রয় করা হয়। ফলে পাথর ব্যবসায়ীরা নরসুন্দা নদীতে পাথর রেখে পানি প্রবাহে বাধা সৃষ্টি ও অবৈধ ক্র্যাশিং মেশিন ব্যবহার চালিয়ে যাচ্ছে। এতে নদীর জায়গা ব্যবসায়ীরা দখলে নিয়ে যাওয়ায় সংকোচন হয়ে যাচ্ছে নদীর প্রস্থতা।

তবে ব্যবসায়ীরা জানান, যেখানে তারা পাথর রাখছেন, সেটি নদীর চর। অনেকেই ব্যক্তিগত জমি ভাড়া নিয়ে পাথর রাখেন। অপরদিকে সরকারের অনুমোদনহীন অর্থাৎ পরিবেশ অধিদপ্তরে কোন ছাড়পত্র ছাড়াই পাথর ভাঙ্গার মেশিনের (ক্যাশিং মেশিন) দেদারসে ব্যবহার চলছে। ফলে যেমন পরিবেশ দূষণ হচ্ছে, তেমনি শব্দ দূষণসহ পাথর ভাঙ্গার অদৃশ্য বালুকণা আশেপাশের পথচারীদের চোখে পড়ায় চোখের ক্ষতি হচ্ছে।

পাশাপাশি পাথরবহনকারী ছোট-বড় প্রতিটি নৌকা থেকে ৪০০ টাকা হতে ৮০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা তোলা হয়, যা বাজার কমিটি নিয়ে যায়। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পাথর ব্যবসায়ী জানান, উক্ত তারেরঘাট বাজার পাথর ব্যবসার সমৃদ্ধি লাভের জন্য সরকারি ইজারা ডাকের ব্যবস্থা করলে ভালো হয়। এছাড়া নদী রক্ষায় উক্ত তারেরঘাট বাজার সংলগ্ন একটি সরকারিভাবে নৌ ঘাট করার পাশাপাশি পাথর রাখার জন্য সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা করা হলে একদিকে যেমন নদী বাচঁবে, আবার অন্যদিকে আর্থিক কর্মসংস্থানও বৃদ্ধি পাবে।

তবে এখানে কাহারও পরিবেশ অধিদপ্তরের কোন অনুমতি নেই। স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই চলছে পাথর ব্যবসা।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ইফতেকার উদ্দিন ভূইয়া বিপ্লব বলেন, সরকারি ইজারা ডাক নেই। অনেকেই ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ট্রেড লাইসেন্স  নিয়ে ব্যবসা করে আসছে। আমার জানামতে অনেকেরই ইনকাম টেস্কের ফাইলও আছে। তবে পরিবেশ অধিদপ্তরের কোন অনুমোদন নেই বলে স্বীকার করেন।

এ বিষয়ে নান্দাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অরুণ কৃষ্ণ পাল বলেন, নদীতে পাথর রাখার জন্য পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বিঘ্ন হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা সেটা করতে পারেন না। পাথর ভাঙার জন্য যে ক্র্যাশার মেশিন ব্যবহার করছে তা ব্যবহার করতে হলে পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন প্রয়োজন। ওই বাজার এলাকায় নরসুন্দা নদীর প্রস্থতা কতখানি তা সার্ভেয়ারকে দিয়ে জরিপ করে দেখা হবে।

এআরএস