ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু: অস্থায়ী কার্যালয়ে চলছে ইউনিয়ন পরিষদের দাপ্তরিক কাজ

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি প্রকাশিত: মে ১০, ২০২৪, ০৫:৩৮ পিএম

ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলার ৬নং ফলসী ইউপি ভবন গত ১০ বছর ধরে তালাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। আর ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম ও নাগরিক সেবা চলে উপজেলা শহরের একটি অস্থায়ী কার্যালয়ে।

প্রায় কোটি টাকার ব্যয়ে নির্মিত এ ভবন অব্যবহৃত থাকায় সরকারের উন্নয়নের সমালোচনায় গোটা উপজেলায় ঝড় উঠেছে। নির্মাণ কাজ শেষ ও ভবন হস্তান্তরের ১০ বছর অতিক্রম হলেও উপজেলার ফলসী ইউনিয়ন পরিষদের দাপ্তরিক কার্যক্রম এখনো শুরু হয়নি।

সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে গৃহপালিত পশুর বিচরণ। পরিষদের প্রতিটা কক্ষের দরজায় ঝুলছে তালা। বারান্দায় পশুপাখির মলমূত্র। দেয়ালের পলেস্তারা খসে পড়ছে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, সরকারের নবনির্মিত কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি ভবন অকেজো হয়ে পড়ে আছে। ইউপি চেয়ারম্যান হরিণাকুণ্ডু পৌর এলাকায় পরিত্যক্ত একটি ভবনে বসেই করেন পরিষদের দাপ্তরিক কার্যক্রম। ইউনিয়ন পরিষদ ভবন থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার দূরে পরিষদের অস্থায়ী কার্যালয় হওয়ায় নাগরিক সেবা নিতে আসা জনসাধারণের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে।

অথচ ওই ইউনিয়নের বিগত ও বর্তমান চেয়ারম্যানদের দাবি, ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম থেকে নতুন ভবন দূরবর্তী হওয়ায় সেখানে লোকজন যেতে চায় না। ফলে ভবন নির্মাণের ১০ বছর পার হলেও সেখানে নতুনভাবে অফিস স্থানান্তর সম্ভব হয়ে ওঠেনি। মাঝে মাঝে বড় পরিসরে নাগরিক সেবা কার্যক্রম হলে ওই নতুন ভবনে যাওয়া হয়। তাছাড়া সব সময় অস্থায়ী কার্যালয়েই চলে সকল কার্যক্রম।

ফলসী ইউপি ভবন নির্মাণকারী সংস্থা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ২০১০ সালের ডিসেম্বর মাসে ফলসী ইউনিয়ন পরিষদ ভবন নির্মাণ কাজ শুরু হয়। তিনতলা ভবনের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ৬৭ লাখ টাকা। কাজ সম্পন্ন করে ২০১৩ সালের ৫ জুলাই। শহর এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে ভবন হস্তান্তর করে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হরিণাকুণ্ডু পৌর বাজার সংলগ্ন এলাকায় একটি ভবনের ২য় তলা ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় এবং নিচতলা হরিণাকুণ্ডু স্কলার প্রি-ক্যাডেট ইনস্টিটিউট।

এ বিষয়ে স্থানীয়রা জানান, আমাদের এই ইউনিয়ন পরিষদ দীর্ঘদিন ধরে তালাবদ্ধ অবস্থায় পড়ে রয়েছে। সমস্ত কার্যক্রম শহরের অস্থায়ী একটি ভবনে করে থাকেন। বর্তমান চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট  বজলুর রহমান। তিনিও শহরের পরিত্যক্ত ওই ভবনেই ইউনিয়নের কার্যক্রম চালান। তাছাড়া যে চেয়ারম্যানই নির্বাচিত হয়ে আসে তাদের নিজস্ব সুবিধার জন্য ওই পরিত্যক্ত ভবনকে পরিষদের অস্থায়ী কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করে থাকেন। যেখানে পরিষদের সব ধরনের সেবামূলক কাজকর্ম হওয়ার কথা ছিল নতুন এই ইউপি ভবনে। কিন্তু সেটা না হওয়ার কারণে ইউনিয়নবাসীকে অনেক ভোগান্তিতে পড়তে হয়।

স্থানীয় বাসিন্দা শাহিন আলম বলেন, ১০ বছর ধরে তালাবদ্ধ নতুন এ ইউপি ভবন। যে চেয়ারম্যানই নির্বাচিত হয় তাদের সুবিধার্থে উপজেলা শহরের অস্থায়ী পরিত্যক্ত ভবনে ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম করে থাকেন। প্রয়োজনের তাগিদে পায়ে হেঁটে দুই-আড়াই কিলো রাস্তা আমাদের যেতে হয়।

ইউপি চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট বজলুর রহমান বলেন, ইউনিয়নের শড়াতালা, কুলবাড়িয়া বোয়ালিয়াসহ কয়েকটি গ্রাম থেকে নতুন ভবন দূরবর্তী হওয়ায় সেখানে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। ফলে ভবন নির্মাণ হলেও ১০ বছরে সেখানে নতুনভাবে অফিস স্থানান্তর সম্ভব হয়ে ওঠেনি। তাছাড়া নতুন ইউপি ভবন এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না। তেমন কোনো হাট-বাজারও নেই। তাই উপজেলা শহরের একটি ভবনে ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম চালানো হয়।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আক্তার হোসেন বলেন, আমি কিছুদিন পূর্বে যোগদান করেছি। উদ্বোধনের ১০ বছরেও কার্যক্রম চালু হয়নি এটা দুঃখজনক। এ বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ইএইচ