ভূমি অধিগ্রহণে ক্ষতিপূরণের অর্থ পরিশোধ না করায় মাদারীপুরে সরকারের মেগাপ্রকল্প হাইটেক পার্কের নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্তদের টাকা না দেওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে কাজ বন্ধ করে দেন ভুক্তভোগীরা। বারবার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ধর্ণা দিয়েও কোনো ফল না পেয়ে বাধ্য হয়েই তারা এই সিদ্ধান্ত নেন।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, শিবচর উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়নের কেশবপুর এলাকায় হাইটেক পার্ক নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় মূল ভবনের পাইলিংসহ বাউন্ডারি দেয়ালের কাজ চলছিল। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান কাজ এগিয়ে নিলেও অধিগ্রহণ করা জমির ক্ষতিগ্রস্তরা ক্ষতিপূরণ না পাওয়ায় আগেই একবার কাজ বন্ধ করে দেন। পরে জেলা প্রশাসনের আশ্বাসে পুনরায় কাজ শুরুর অনুমতি দেন তারা। কিন্তু দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও টাকা না পেয়ে আবারও কাজ বন্ধ করে দেন ক্ষতিগ্রস্তরা।
ভুক্তভোগীরা জানান, জেলা প্রশাসক মোছা. ইয়াসমিন আক্তার বারবার আশ্বাস দিলেও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ক্ষতিপূরণ দেননি। সর্বশেষ চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে টাকা পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দিলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। ফলে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
স্থানীয়রা জানান, সাবেক জেলা প্রশাসক রহিমা খাতুনের সময় ভূমি অধিগ্রহণে কয়েক কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। দুদক তদন্ত করে একাধিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করলেও জেলা প্রশাসক রহিমা খাতুন ও তৎকালীন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সেই মামলার আওতায় আসেননি। এরপর থেকেই বন্ধ হয়ে যায় ক্ষতিপূরণের অর্থ পরিশোধ।
বর্তমান জেলা প্রশাসক আসার পর পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে। এলএ শাখার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অপ্রতুলতা এবং দায়িত্বহীনতার কারণে বিল প্রদান কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। সহকারী কমিশনারের কক্ষটি প্রায় সময়ই তালাবদ্ধ থাকে এবং সার্ভেয়ারদের অন্য দপ্তরের অতিরিক্ত দায়িত্বে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়।
ভুক্তভোগী নেছার উদ্দিন বলেন, “বাবাকে নিয়ে বারবার ডিসি অফিসে আসতে হয়েছে। কিছু বিল পেলেও অধিকাংশ এখনো বাকি। আমাদের হয়রানি না করে দ্রুত বাকি বিল পরিশোধের দাবি জানাই।”
রাজা মিয়া, কাইউম মাদবর, মিজানসহ অন্য ভুক্তভোগীরাও একই অভিযোগ করেন। তাদের দাবি, এলএ শাখার কর্মীরা খারাপ ব্যবহার করে এবং বিল প্রদানের ক্ষেত্রে নানা রকম হয়রানি করে থাকেন।
মাদারীপুর জেলা প্রশাসক মোছা. ইয়াসমিন আক্তার বলেন, “আমাদের কর্মকর্তা সংকট রয়েছে। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চাহিদা জানানো হয়েছে। কর্মকর্তা পেলেই বিল পরিশোধ শুরু করা যাবে।”
এ বিষয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান বলেন, “জেলা প্রশাসক চাইলে নিজেই অফিসার দিয়ে ভূমি অধিগ্রহণের কাজ চালাতে পারেন। টাকা পরিশোধের দায়িত্বও জেলা প্রশাসকের। ভূমি মন্ত্রণালয়ের এখানে কোনো ভূমিকা নেই।”
ক্ষতিগ্রস্তরা দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের পাওনা অর্থ পরিশোধের দাবি জানিয়েছেন এবং তা না হলে হাইটেক পার্কের কাজ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তে অনড় থাকার ঘোষণা দিয়েছেন।
ইএইচ