কাঁধে গামছা, হাতে কাস্তে—নূরবাগে জীবিকার যুদ্ধ

অভয়নগর (যশোর) প্রতিনিধি: প্রকাশিত: মে ৪, ২০২৫, ০১:১৩ পিএম

ভোর হতেই ভিড় বাড়ে অভয়নগরের নূরবাগ রেলক্রসিং এলাকায়। রেললাইনের দু’পাশে পাটি পেতে বসে থাকেন শত-শত শ্রমিক। কারও কাঁধে গামছা, কারও হাতে কাস্তে। মুখে ক্লান্তি থাকলেও চোখে ভরসা। জীবিকার আশায় উত্তরাঞ্চল থেকে আসা মানুষগুলো অপেক্ষার প্রহর গুনতে থাকেন, কখন আসবে কোনো কৃষক, ঠিক হবে মজুরি, তারপর ধান কাটা যাবে।

উপজেলার নূরবাগে বসে দেশের অন্যতম বড় ধানকাটা শ্রমিকের হাট। এই হাট শুধু শ্রমিক কেনাবেচার জায়গা নয়—এটি যেন  জীবন সংগ্রামের একটি বাস্তবচিত্র। রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁসহ দেশের নানা প্রান্ত থেকে আসা শ্রমিকেরা দল বেঁধে অবস্থান নেন এখানে। কেউ কেউ একটি দিন, কেউবা কাটান পুরো এক মাস।

রাজশাহী থেকে আসা কাজী আরাফাত হোসেন বলেন, ‘তিন দিন আগে দুই কৃষকের কয়েক বিঘা জমির ধান কেটেছি। এখন নতুন কাজের জন্য অপেক্ষা করছি। এক হাজার টাকা চেয়েছি, মালিক বলছে সাড়ে আটশ।’

চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে আসা আব্দুর রহিম বলেন, ‘দলে ছয়জন। কাজের সন্ধানে এসেছি। কিন্তু এখনও দরদাম মেলেনি। কাজ না পেলে খালি পেটেই থাকতে হবে।’

নওয়াপাড়ার প্রান্তিক কৃষক সিরাজুল ইসলাম জানালেন, ‘আমার ৬ বিঘা জমির ধান পেকে গেছে। লোকবলের অভাবে সময়মতো কাটা যাচ্ছে না। তাই নূরবাগে এসেছি শ্রমিক নিতে। মজুরি একটু বেশি হলেও ধান না পেটানোয় বড় ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।’

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর অভয়নগরে ১২ হাজার ৭৩৮ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ হয়েছে। এর মধ্যে ৭ হাজার ৬৪৩ হেক্টর জমির ধান ইতোমধ্যে কাটা হয়ে গেছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লাভলী খাতুন বলেন, ‘এবার ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আগামী ১০–১২ দিনের মধ্যে ধান কাটা সম্পন্ন হবে। অভয়নগরের নূরবাগে যে হাটটি বসে, তা দেশের জন্য একটি দৃষ্টান্ত। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে শ্রমিকেরা এখানে এসে কাজ পান, আবার কৃষকেরাও সময়মতো ধান কাটার লোক পান।’

নূরবাগের এই হাট যেন শুধু মজুরির দরদাম নয়, বরং ঘামের বিনিময়ে জীবন বাঁচানোর এক লড়াই। সারা দিনের খাটুনির পর মিলবে হয়তো দুমুঠো ভাত, আর পরের দিন নতুন চুক্তির অপেক্ষা।

বিআরইউ