ভেদরগঞ্জে ৩ মৎস্য কর্মচারীর বিরুদ্ধে ‘ঘুষ’ নেওয়ার অভিযোগ

শরীয়তপুর প্রতিনিধি: প্রকাশিত: মে ৪, ২০২৫, ০৬:০৪ পিএম

শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলা মৎস্য অফিসের এক ক্ষেত্র সহকারীসহ তিনজনের বিরুদ্ধে নিষিদ্ধ সময়ে জাটকা ধরার মৌখিক অনুমতির নামে জেলেদের কাছ থেকে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় জেলেরা বলছেন, নৌকা প্রতি ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা ঘুষ দিয়ে তারা নির্দ্বিধায় পদ্মা ও মেঘনা নদীতে জাটকা ধরতে পারছেন।

অভিযোগে নাম এসেছে ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের ক্ষেত্র সহকারী ওমর সানি, বোর্ড ড্রাইভার শাহজালাল, ফিস গার্ড কবির বেপারি এবং সেকান্দর সরকারের। অভিযোগ রয়েছে, এ চারজন বিভিন্ন পয়েন্টে জেলেদের কাছ থেকে নিয়মিত টাকা নিয়ে মাছ ধরার মৌখিক অনুমতি দিচ্ছেন।

সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রতি বছর ১ নভেম্বর থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত ২৫ সেন্টিমিটারের নিচের ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ। এ সময় জেলেদের জন্য ভিজিএফ চাল ও আর্থিক সহায়তার ব্যবস্থাও রয়েছে। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে, এই সুযোগের অপব্যবহার করে কিছু অসাধু কর্মকর্তা এবং ব্যবসায়ী মিলে নদীতে অবাধে জাটকা শিকার করছে।

জানা গেছে, উপজেলার অন্তত ১৫টি পয়েন্টে নিয়মিতভাবে জেলেরা কারেন্ট জাল ব্যবহার করে জাটকা ধরছেন, যাদের বড় একটি অংশ সরাসরি ঘুষ দিয়ে মাছ শিকার করছেন। এসব মাছ সকালে আড়তে পৌঁছে যাচ্ছে প্রকাশ্যেই।

বোর্ড ড্রাইভার শাহজালাল বলেন, ‘আমি ওমর সানি স্যারকে বলেছি আমি মাছ ধরতে চাই। উনি বললেন, যদি প্রতিরাতে বোর্ড প্রতি ১০ হাজার টাকা দিতে পারো, তাহলে ধরো। আমি রাজি হই, এবং নিয়মিত টাকা দিয়ে মাছ ধরছি। এখন চারটি বোর্ড এভাবে চলে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি সরকারি চাকরিজীবী না। আমি, কবির আর সেকান্দর টাকা তুলে ওমর সানি স্যারকে দিই। এর বেশি কিছু বলবো না, আপনি স্যারের সাথে কথা বলেন।’

স্থানীয় জেলে আবু কালাম বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। অফিসের লোকজন বলেছে কিছু টাকা দিলে সমস্যা হবে না। তাই সেকান্দর ও কবিরকে প্রতিদিন ২ হাজার টাকা করে দিই।’

আরেক জেলে সেলিম বলেন, ‘আমি ২ হাজার টাকা দিয়েছিলাম, পরে বলেছে ৪ হাজার না দিলে আর ধরতে পারবি না। এখন আর নদীতে যাই না। জাটকা রক্ষার দায়িত্ব যাঁদের হাতে, তারাই দুর্নীতিতে জড়িত। আগে ওদের ধরেন।’

অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত ক্ষেত্র সহকারী ওমর সানি বলেন, ‘এই অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। আমি কারও কাছ থেকে ঘুষ নিইনি, জেলেদের সাথেও যোগাযোগ নেই।’

অপর অভিযুক্ত কবির বেপারি ও সেকান্দর সরকার অভিযোগ এড়িয়ে গিয়ে বলেন, ‘ওমর সানি স্যারের সাথে কথা বলেন।’

ভেদরগঞ্জ উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. আব্দুল্লাহ আল ইমরান বলেন, ‘লিখিত অভিযোগ পেলে আমরা তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। জাটকা রক্ষা আমাদের অগ্রাধিকার। আমার অফিসের কেউ জড়িত থাকলে ছাড় দেওয়া হবে না। ইতিমধ্যে বেশ কিছু জাটকা জব্দও করেছি।’

স্থানীয় পরিবেশবাদী সংগঠন ‍‍ ‘নদী রক্ষা আন্দোলন‍‍’ এর এক নেতা বলেন, ‘সরষের মধ্যে ভূত থাকলে জাটকা রক্ষা হবে কীভাবে? আগে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। নয়তো সামনের বছর ইলিশের পরিমাণ আরও কমে যাবে।’

বিআরইউ