মাগুরা টেক্সটাইল মিলস লিমিটেডের যন্ত্রপাতি নিলামে বিক্রি, সম্পদ লুটপাট ও দীর্ঘদিনের অব্যবস্থাপনায় ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা ও সাবেক শ্রমিকরা। বিটিএমসি’র অধীনে স্থাপিত এ সরকারি কারখানাটি ১৯৯৯ সালে বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকেই এর বিভিন্ন স্থাপনা, যন্ত্রাংশ ও জমি বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করা হলেও নেই কোনো স্বচ্ছতা বা জবাবদিহিতা।
১৯৮০-৮১ অর্থবছরে মাগুরা পৌরসভার ভায়না এলাকায় প্রায় ১৬ দশমিক ১৭ একর জমির ওপর মিলটি স্থাপিত হয়। নির্মাণ ব্যয় হয় ৫১ কোটি টাকার বেশি। ১৯৮৫ সালে চালু হওয়া এ সুতা তৈরির কারখানায় একসময় ৯৮৩ জন শ্রমিক কাজ করতেন। পরে ধারাবাহিক লোকসান ও প্রশাসনিক সিদ্ধান্তে এটি বন্ধ হয়ে যায়।
মিলটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর দীর্ঘদিন ধরে যন্ত্রপাতি বিক্রি, গাছপালা নিধন, ভবন ও পুকুর ভাড়া এবং আয়-ব্যয়ের অনিয়ম নিয়ে বারবার প্রশ্ন উঠেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, বিটিএমসি ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়াই বিভিন্ন রুম, গ্যারেজ ও পুকুর বেসরকারি মালিকদের কাছে ভাড়া দেওয়া হয়েছে, যার কোনো সরকারি হিসাব নেই।
জানা গেছে, ২০২৩ সালের ৬ ডিসেম্বর দ্বিতীয় দফায় স্ক্র্যাপ মেশিনারিজ বিক্রির দরপত্র আহ্বান করে বিটিএমসি। ভ্যাট ও আয়করসহ মোট ৬ কোটি ২৮ লাখ টাকায় ঢাকার ‘মেক পাওয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে যন্ত্রপাতি কিনে নেয়। কিন্তু স্থানীয়ভাবে কোনো পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ না করা, নোটিশ বোর্ডে না টানানো ও দরপত্র জমা সংক্রান্ত তথ্য গোপন রাখার অভিযোগ উঠেছে।
মিলের হিসাবরক্ষক ও ইনচার্জ শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘প্রক্রিয়াগতভাবে দরপত্র হয়েছে, সব কিছু নিয়ম মেনেই করা হয়েছে।’ তবে মিলের সম্পদের পরিমাণ, দরদাতাদের সংখ্যা কিংবা আয়-ব্যয়ের হিসাব দিতে রাজি হননি তিনি।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, কয়েক দিন আগে মিল থেকে ট্রাকে করে যন্ত্রপাতি সরানোর সময় তা আটকে দেন তারা। এরপর কয়েক দফা বৈঠক করে সরানো কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়। এর পর থেকেই মিল ইনচার্জ স্থানীয়দের নামে মিথ্যা অভিযোগ করছেন বলে দাবি তাদের।
মিলের প্রতিষ্ঠাতা, সাবেক মন্ত্রী মেজর জেনারেল (অব.) মাজেদুল হকের পরিবারের সদস্য লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) সাব্বির সিদ্দিকী বলেন, ‘আমরা এখানে একটি মেডিকেল কলেজ করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু যেভাবে হঠাৎ করে যন্ত্রপাতি বিক্রি হলো, তা জেলা প্রশাসনসহ আমাদের কাউকে জানানো হয়নি।’
২০১৩ সালের এক সরকারি মূল্যায়নে মিলের দৃশ্যমান সম্পদের মূল্য দেখানো হয়েছিল ৫৯ কোটি টাকা, যার মধ্যে জমির মূল্যই ছিল প্রায় ৪৭ কোটি। কিন্তু ২০২৫ সালে এসে মাত্র ৬ কোটি টাকায় যন্ত্রপাতি বিক্রির ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করছেন স্থানীয়রা।
মাগুরা জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আহসান হাবিব কিশোর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, ‘শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্মৃতিবিজড়িত মিলটি চুপিসারে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। অথচ সবাই নিরব।’
সাবেক শ্রমিক ও এলাকাবাসীর দাবি, টেক্সটাইল মিল ঘিরে দীর্ঘদিনের লুটপাট, অনিয়ম ও সম্পদ অপব্যবহারের ঘটনায় দুদকসহ সরকারি গোয়েন্দা সংস্থার যৌথ তদন্ত হওয়া প্রয়োজন।
বিআরইউ