ইটালির স্বপ্ন দেখিয়ে লিবিয়ায় আটকে নির্যাতনে প্লাবনের মৃত্যু

আব্দুল্লাহ আল মামুন (আলমডাঙ্গা), চুয়াডাঙ্গা প্রকাশিত: মে ১৫, ২০২৫, ০৫:২৪ পিএম

এক নির্মম পরিণতির মুখোমুখি হয়েছেন চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার খেজুরতলা গ্রামের যুবক জুনায়েদ হাসান প্লাবন (২৩)। 

ইতালিতে ভালো ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখে বাড়ির সবটুকু সম্বল বিক্রি করে দালালের হাতে তুলে দেওয়া হয় তাকে। কিন্তু সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি।

বুধবার লিবিয়া থেকে পরিবারের কাছে ফোনে জানানো হয়, প্রায় দেড় বছর ধরে আটকে রাখা ও নির্যাতনের ফলে প্লাবন মারা গেছেন। খবর পৌঁছতেই খেজুরতলার প্রতিটি ঘরে কান্নার রোল ওঠে।

জুনায়েদ হাসান প্লাবন নাদদাহ ইউনিয়নের খেজুরতলা গ্রামের কৃষক জমসেদ আলীর ছেলে। 

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, দেড় বছর আগে বেলগাছি গ্রামের সাগর নামের এক দালালের মাধ্যমে প্লাবনকে ইতালি পাঠানোর চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী প্রথমে লিবিয়া পৌঁছে দেওয়া হবে, এরপর সেখান থেকে সাগরের মাধ্যমে স্বপ্নের দেশে পৌঁছানো হবে। কিন্তু এই চুক্তির আড়ালে ছিল ভয়াবহ প্রতারণা।

সাগরের আত্মীয় জিমের মাধ্যমে দফায় দফায় ৪০ লাখ টাকারও বেশি টাকা পাঠানো হয়। ছেলেকে ফিরে পেতে শেষ সম্বল বিক্রি করে দেন বাবা জমসেদ আলী। কিন্তু মুক্তি মেলেনি; বরং, নির্যাতনের ভিডিও পাঠিয়ে আরও টাকা আদায়ের চেষ্টা চালানো হয়।

প্লাবনের বড় বোন স্বপ্না খাতুন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “দেড় বছর আগে ভাইটাকে সাগরের হাতে দিয়েছিলাম। জিম বারবার এসে টাকা নিত। আমরা ভিডিও দেখে কাঁদতাম, টাকা দিতাম। শুনেছি, ভাইকে বিক্রি করে দিয়েছে অন্য এক দালালের কাছে। দুই মাস ধরে মারধর করছিল, শেষমেশ হত্যা করেছে।”

গতকাল সকাল ৯টার দিকে লিবিয়ায় আটক থাকা কয়েকজন বাংলাদেশি যুবক ফোন করে প্লাবনের মৃত্যুর খবর দেন। তবে এরপর থেকে তারা আর ফোন ধরছেন না।

বৃদ্ধ পিতা জমসেদ আলী চোখের জল মুছতে মুছতে বলেন, “আমার ছেলেটাকে ভালো জীবনের আশায় পাঠিয়েছিলাম, কিন্তু সে ফিরলো না। শুনছি মারা গেছে, তবে সঠিক তথ্য পাইনি, যোগাযোগও বন্ধ।”

আলমডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ মাসুদুর রহমান পিপিএম জানান, “আমরা ঘটনাটি লোকমুখে শুনেছি। মানবিক কারণে পরিবারটির পাশে দাঁড়াতে এসেছি। তবে ছেলেটি সত্যিই মারা গেছে কি না, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।”

ইএইচ