আহ্বায়ক কমিটির বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে উলিপুরে ৪ বিএনপি নেতার পদত্যাগ

কামরুজ্জামান স্বাধীন, উলিপুর (কুড়িগ্রাম) প্রকাশিত: মে ১৬, ২০২৫, ০৮:১১ পিএম

কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলা ও পৌর বিএনপির সদ্য ঘোষিত আহ্বায়ক কমিটির বিরুদ্ধে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের সাথে আতাত এবং অযোগ্যদের কমিটিতে অন্তর্ভুক্তির অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলনে পদত্যাগ করেছেন ৪ জন নেতা।

শুক্রবার দুপুরে উলিপুর পৌর শহরের হাজী সুপার মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তারা পদত্যাগের ঘোষণা দেন। 

পদত্যাগকারী নেতারা হলেন—উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আমিনুল ইসলাম ফুলু, পৌর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক নুরে চ্ছাবা স্টার, যুগ্ম আহ্বায়ক মতলেবুর রহমান মঞ্জু এবং সদস্য আমিনুল ইসলাম।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন আমিনুল ইসলাম ফুলু, যিনি ধরনীবাড়ি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান এবং উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তিনি অভিযোগ করেন, নবঘোষিত উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক তারিক আবু আলা চৌধুরী বিগত ১৭ বছরে দলীয় কোনো কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেননি। বরং তিনি আওয়ামী লীগপন্থী কাউন্সিলর আনিছুর রহমানকে প্যানেল মেয়র করে এবং জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে ভোট দিয়ে দলের আদর্শ ও স্বার্থের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। এমন ব্যক্তিকে আহ্বায়ক মনোনয়ন দেওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, সদ্য ঘোষিত কমিটিতে জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্টদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যার মধ্যে ফ্যাসিস্ট মামলার ৬৩ নম্বর আসামি সহিদুর রহমান, উপজেলা কমিটির ১৬ নম্বর সদস্য সাইফুল ইসলাম বাদল এবং পৌর কমিটির ১৭ নম্বর সদস্য রফিকুল ইসলাম রয়েছেন—যারা অতীতে নৌকার পক্ষে প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন।

তাদের অভিযোগ, ত্যাগী নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন না করে অর্থের বিনিময়ে পদ-পদবী বণ্টন করা হয়েছে। এ ধরনের কমিটি প্রত্যাখ্যান করে তা বাতিলের দাবি জানান তারা। সেই সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন—কুড়িগ্রাম জেলা কৃষকদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আবু জাফর সোহেল রানা, রংপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সাবেক জিএস ফিরোজ কবির কাজল, উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক শামীম আহমেদ, নাজমুল হুদা, মঈন আহমেদ, পৌর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক পারভেজ সরদার, সাবেক ছাত্রনেতা স্বপন কুমার সাহা, উপজেলা কৃষকদলের আহ্বায়ক আব্দুর রহমান রাজু, সদস্য সচিব ফাজকুরুনী আহমেদ প্রমুখ।

এ বিষয়ে সদ্য ঘোষিত উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক তারিক আবু আলা চৌধুরী বলেন, "আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ ভিত্তিহীন। আমি দীর্ঘদিন পৌর বিএনপির সভাপতি, পৌরসভার মেয়র এবং জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। উলিপুরবাসী জানেন আমি কতটা সক্রিয় ছিলাম।"

কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপির সদস্য সচিব সোহেল হোসনাইন কায়কোবাদ বলেন, "বিএনপির দুঃসময়ে যারা রাজপথে ছিলেন, তাদেরকেই মূল্যায়ন করা হয়েছে। যে নেতাকে জাতীয় পার্টির লোক বলা হচ্ছে, তিনি বর্তমানে বুড়াবুড়ি ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন।"

জেলা আহ্বায়ক মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, "পদত্যাগের কোনো লিখিত পত্র এখনো পাইনি। যোগ্যদেরকেই কমিটিতে স্থান দেওয়া হয়েছে। অর্থের বিনিময়ে পদ দেওয়ার অভিযোগের সত্যতা প্রমাণ করতে হবে অভিযোগকারীদের।"

তিনি আরও বলেন, "উলিপুরে বিএনপির মধ্যে দুইটি গ্রুপ আছে। মান-অভিমান থাকতেই পারে, তবে দলীয় ঐক্য বজায় রাখতে সবাইকে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হবে।"

ইএইচ