মাদারীপুরে পণ্ড হতে বসেছে ডাল গবেষণার ১৬৮ কোটি টাকার প্রকল্প

জাহিদ হাসান, মাদারীপুর প্রকাশিত: মে ২৪, ২০২৫, ০৬:৫০ পিএম

জেলা প্রশাসনের অসহযোগিতার কারণে পণ্ড হতে চলেছে মাদারীপুরের ডাল গবেষণা প্রকল্প। ১৬৮ কোটি টাকার এই ‘মাদারীপুর ডাল উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্প’-এর অধীনে ভূমি অধিগ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসককে প্রায় ৯৬ কোটি টাকা পরিশোধ করা হলেও দুই বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও জমি বুঝে পায়নি প্রকল্প কর্তৃপক্ষ। এতে প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।

সূত্র জানায়, ২০০৫ সালে ২০.৫০ একর জমির উপর আঞ্চলিক ডাল গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হয়। শুরু থেকেই মসুর, খেসারি, মটর, মুগ ও মাশকলাই ডাল নিয়ে গবেষণা পরিচালনা করা হয়। গবেষণার মাধ্যমে ইতোমধ্যে মসুরের ৮টি, খেসারির ৬টি এবং বাড়ি মটরের ৩টি জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। এসব জাত উচ্চ ফলনশীল, রোগ প্রতিরোধী এবং জলবায়ু সহনশীল হওয়ায় কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।

আরও উন্নত গবেষণার জন্য ২০২১ সালে ‘মাদারীপুর ডাল উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্প’ গ্রহণ করে সরকার। এ প্রকল্পের আওতায় আধুনিক গবেষণা ল্যাব, ডাল পরীক্ষাকেন্দ্র এবং বিভিন্ন যন্ত্রপাতি স্থাপনের জন্য অতিরিক্ত ৩০ একর জমি অধিগ্রহণের উদ্যোগ নেয়া হয়। জেলা প্রশাসন ও প্রকল্প কর্তৃপক্ষ যৌথভাবে জমির মূল্য, গাছপালা, স্থাপনা ও ফসলের ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ করে। সব প্রক্রিয়া শেষে ২০২৩ সালে ৯৬ কোটি টাকা জেলা প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করা হয়। কিন্তু দুই বছর পার হলেও জেলা প্রশাসন অধিগ্রহণকৃত জমি বুঝিয়ে দেয়নি।

এ নিয়ে প্রকল্প পরিচালক ও মাদারীপুর ডাল গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. সেলিম আহম্মেদ বলেন, "প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৬ সালে শেষ হবে। অথচ এখনও জমি বুঝে পাইনি। আমি বারবার জেলা প্রশাসকের কাছে চিঠি দিয়েছি, সরাসরি অনুরোধ করেছি, কিন্তু কোনো অগ্রগতি হয়নি।"

অন্যদিকে জেলা প্রশাসক মোছা. ইয়াসমিন আখতার জানান, "জমি অধিগ্রহণ নিয়ে কিছু জটিলতা তৈরি হয়েছে। ২০২৫ সালে জমির কিছু মালিক মূল্য কম নির্ধারণ হয়েছে দাবি করে আপত্তি জানিয়েছেন। আমরা মন্ত্রণালয়ে সেই আবেদন পাঠিয়েছি এবং নির্দেশনার অপেক্ষায় আছি। নির্দেশনা এলেই পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"

স্থানীয়দের অভিযোগ, শুধু ডাল গবেষণা কেন্দ্র নয়, শিবচরের হাইটেক পার্কসহ আরও কিছু প্রকল্প জমির ক্ষতিপূরণ না পাওয়ায় আটকে গেছে। এতে সরকারের বরাদ্দকৃত অর্থ সময়মতো কাজে লাগানো যাচ্ছে না এবং উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে।

সূত্র জানিয়েছে, প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্ব হওয়ায় সরকার বাজেট হ্রাসের কথাও ভাবছে। তবে এখনই জমি হস্তান্তর করা গেলে প্রকল্পটি অনেকখানি এগিয়ে নেয়া সম্ভব হবে।

ইএইচ