গণেশ পাগলের মেলায় পুলিশকে মারধর করে ৩০ রাউন্ড গুলি ছিনতাই

জাহিদ হাসান, মাদারীপুর প্রকাশিত: মে ২৯, ২০২৫, ০৭:৩৯ পিএম

মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার কদমবাড়িতে চলমান ঐতিহ্যবাহী গণেশ পাগলের মেলায় (কুম্ভমেলা) এক পুলিশ কনস্টেবলের ওপর হামলা চালিয়ে তার কাছে থাকা সরকারি শর্টগানের ৩০ রাউন্ড গুলি ছিনিয়ে নিয়েছে জুয়ার আসরের লোকজন। 

বৃহস্পতিবার বিকেলে এ খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।

হামলার শিকার কনস্টেবলের নাম মেহেদী হাসান। তিনি মাদারীপুর পুলিশ লাইন্সে কর্মরত। ঘটনার পর গণেশ পাগল সেবাশ্রমের সভাপতি মিরন বিশ্বাস, কনস্টেবল মেহেদী হাসানসহ তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বুধবার (২৮ মে) রাত ১০টা পর্যন্ত কদমবাড়ির গণেশ পাগল সেবাশ্রমের আয়োজিত কুম্ভমেলায় ডিউটিতে ছিলেন কনস্টেবল মেহেদী। পরদিন বৃহস্পতিবার ভোররাত ৪টার দিকে তিনি সিভিল পোশাকে মেলার মাঠে বসা জুয়ার আসরে গেলে জুয়াড়িদের সঙ্গে তার বাকবিতণ্ডা ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে তার কাছে থাকা শর্টগানের ৩০ রাউন্ড গুলি ছিনিয়ে নেয় জুয়ারিরা।

বৃহস্পতিবার রাতে সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, মেলার মূল মাঠেই বসেছে প্রায় ২০টি জুয়ার আসর। বড় আসরগুলো সাজানো হয়েছে বিভিন্ন মডেলদের ছবিতে, আর ছোট আসরগুলোতে চরকি ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রতিটি আসরে ৫–৬ জন করে লোক জুয়া পরিচালনা করছেন। টাকা জমছে জুয়ারিদের পকেটে, নিঃস্ব হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।

সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে কয়েকটি জুয়ার আসর থেকে জুয়াড়িরা পালিয়ে যায়। অন্যদিকে, কালী মন্দির এলাকায় প্রকাশ্যে চলছে গাঁজা সেবন ও বিক্রি। শত শত মাদকসেবী ও ব্যবসায়ী সেখানে একত্র হয়ে নির্বিঘ্নে গাঁজা সেবন করছেন।

মেলার এক জুয়াড়ি মাসুদ বলেন, "জুয়ার খোটের বিষয় কমিটির লোকজন জানে, আমি শুধু ২ হাজার টাকা বেতনে কাজ করি।"

আরেকজন, কালিপদ নামে এক জুয়াড়ি বলেন, "এই জুয়ার আসরটা প্রসাদ মেম্বার বসিয়েছেন। আমি শুধু দাঁড়িয়ে আছি, কিছু বলিনি।"

গণেশ পাগল সেবাশ্রমের সভাপতি মিরন বিশ্বাস দাবি করেন, "জুয়ার বিষয়ে কমিটি কিছু জানে না। যতবার জেনেছি, পুলিশ দিয়ে ভেঙে দিয়েছি।"

তবে গাঁজা সেবনের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "এটা বলা যাবে না। লালনের মাজারে যেমন চলে, এখানেও তেমনই চলে। প্রশাসন জানে। আমরা প্রতিরোধ করার চেষ্টা করছি, কিন্তু প্রশাসন পারেনি।"

মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) জাহাঙ্গীর আলম বলেন, "পুলিশ কনস্টেবলের ওপর হামলার ঘটনা তদন্ত করছি। জুয়া ও গাঁজার মতো বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণে রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি, যদিও প্রচুর মানুষের কারণে তা কিছুটা কঠিন। তারপরও আমাদের অবস্থান জিরো টলারেন্স।"

প্রায় দেড়শ বছরের পুরোনো ঐতিহ্যবাহী কুম্ভমেলা বা গণেশ পাগলের মেলা স্থানীয়ভাবে ‘কামনার মেলা’ নামেও পরিচিত। বুধবার (২৮ মে) থেকে শুরু হয়ে এটি চলবে শনিবার (৩১ মে) পর্যন্ত। মহামানব শ্রীশ্রী গণেশ পাগলের স্মরণে আয়োজিত এ ধর্মীয় উৎসবে দেশ-বিদেশ থেকে লাখো ভক্ত অংশ নেন। আয়োজক কমিটির মতে, প্রতি বছর প্রায় ১৫ লক্ষ লোকের সমাগম ঘটে এ মেলায়।

ইএইচ