নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলায় গত চারদিনের টানা বৃষ্টিতে অন্তত ৩০টি এলাকার প্রায় ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। অপরিকল্পিতভাবে সেচ প্রকল্প নির্মাণ এবং পানি নিষ্কাশনের খাল দখল ও ভরাট হয়ে যাওয়ায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন এলাকাবাসী।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার তারাবো, বরপা, ভুলতা, গোলাকান্দাইল, মধ্যপাড়া, দক্ষিণপাড়া, নাগেরবাগ, বৌবাজার, বাক্মোর্চা, খালপাড়, ইসলামবাগ, আমলাবো, কালী, আমলাব মুসলিম পাড়া, ডুলুরদিয়া, গোলাকান্দাইল নতুন বাজার, কান্দাপাড়া, বলাইখা, বিজয়নগর, মদিনানগর, তারাবো পৌরসভার তেঁতলাবো, শান্তিনগর, বাগানবাড়ি, পশ্চিম কান্দাপাড়া, উত্তর মাসাবো, যাত্রামুড়া, রূপসী এবং ভুলতা ইউনিয়নের মাঝিপাড়া, সোনাব, পাচাইখা ও ইসলামপুরসহ বিস্তীর্ণ এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে।
এইসব এলাকায় বাড়ির উঠোন থেকে শুরু করে বসতঘরে ৩-৪ ফুট পানি জমে রয়েছে। অনেক রাস্তা-ঘাট পানির নিচে। গবাদি পশু অন্যত্র সরিয়ে নিতে হচ্ছে। বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। কেউ কেউ আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন, আবার কেউ বাঁশের মাচা তৈরি করে তাতে বসবাস করছেন।
এছাড়া, বেশ কয়েকটি শিল্প কারখানাতেও জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। কোথাও কোথাও টিউবওয়েল তলিয়ে যাওয়ায় নিরাপদ পানির অভাব আরও প্রকট হয়ে উঠেছে। শিল্পকারখানার বর্জ্য, রাসায়নিক ও দুর্গন্ধযুক্ত কালো পানি মিশে পরিবেশ দূষণ করছে, যা বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। নারী ও শিশুরা সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে রয়েছেন।
নাগেরবাগ এলাকার বাসিন্দা পারভেজ আহমেদ বলেন, "একদিকে জীবিকা সংকট, অন্যদিকে এই জলাবদ্ধতা—নিম্ন আয়ের মানুষ এখন চরম বিপদে। শিল্প এলাকার বর্জ্যে পানি নিষ্কাশনের খালগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। গরম পানি ও রাসায়নিক মিশে পানির রং কালো হয়ে গেছে। এতে চর্মরোগসহ বিভিন্ন রোগ দেখা দিচ্ছে। মাছ ও জলজ প্রাণী মারা যাচ্ছে।"
ইসলামবাগ এলাকার গৃহবধূ নাজমা বেগম বলেন, "আমাদের ঘরে হাঁটু সমান পানি। রান্না করা যাচ্ছে না। বিশুদ্ধ পানির সংকট। অনেক ভাড়াটিয়া বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন।"
গোলাকান্দাইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বলেন, “রূপগঞ্জ এখন শিল্পাঞ্চল। বেশি দামের ভয়ে অনেকে নিচু জমিতে ঘর নির্মাণ করছেন। তাই জলাবদ্ধতা বাড়ছে। আমরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনা করে সমাধানের চেষ্টা করছি।”
আমলাব মুসলিম পাড়া এলাকার বাসিন্দা হানিফ বলেন, “গত ১৪-১৫ বছর ধরেই বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা হয়। সুইচগেট থাকলেও যাঁরা পাম্প চালানোর দায়িত্বে, তারা সময়মতো ব্যবস্থা নেয় না। যোগাযোগ করলেও তাদের পাওয়া যায় না।”
রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, “জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ চলমান আছে। আশা করছি, আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যেই পরিস্থিতির উন্নতি হবে।”
ইএইচ