পবিত্র ঈদুল আজহার আগে রাজধানী ছাড়ার মহাস্রোত নেমেছে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে।
বৃহস্পতিবার রাত বাড়লেও শেষ হয়নি যাত্রীদের দুর্ভোগ। উত্তরাঞ্চলের প্রধান প্রবেশপথে দীর্ঘ যানজট, বাস সংকট ও অতিরিক্ত ভাড়ার কবলে পড়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন শত শত মানুষ। কেউ কেউ বাসে উঠেও দীর্ঘ সময় আটকে থেকেছেন রাস্তায়, আবার অনেকে বাসের নাগালই পাননি।
রাত সাড়ে নয়টার দিকে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, উত্তরা, আব্দুল্লাহপুর, টঙ্গী, স্টেশন রোড, চেরাগ আলী, কলেজ গেট ও গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত এলাকাজুড়ে দীর্ঘ যানজট। দূরপাল্লার বাস না পেয়ে যাত্রীরা হন্যে হয়ে ছুটছেন সিটিবাস, মিনিবাস এমনকি মালবাহী পিকআপের দিকেও। অনেকেই পরিবার-পরিজন নিয়ে রাস্তার পাশে বসে আছেন— অপেক্ষায় কখনও একটা যান আসবে বাড়ি ফেরার আশায়।
রাস্তায় বসেই অপেক্ষা, কেউ হাঁটছে, কেউ বসে আছে স্যুটকেসে প্রচণ্ড ভিড় আর যানজটে বাস চললেও এগোচ্ছে না। হতাশায় অনেকে হেঁটে রওনা দিয়েছেন গন্তব্যের দিকে। রাস্তার ধারে স্যুটকেসে বসে থাকা শিশু, কোলে সন্তান নিয়ে উদ্বিগ্ন মা, কিংবা ক্লান্ত-বিরক্ত যাত্রীদের চোখে ছিল শুধুই যন্ত্রণার ছাপ।
বাড়ি ফিরতে ব্যর্থ হয়ে অনেকেই পিকআপ, ট্রাক, কাভার্ডভ্যানের মতো ঝুঁকিপূর্ণ বাহনে চেপে রওনা দিচ্ছেন গন্তব্যে। অতিরিক্ত ভাড়া দিয়েই কেউ কেউ এসব বাহনে উঠছেন সন্তান, স্ত্রী আর লাগেজসহ।
নাঈমুল ইসলাম নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, “এই যানজট, ভোগান্তি পুরোপুরি পুলিশের অদক্ষতা আর পরিকল্পনার অভাবের প্রমাণ। মানুষ পিকআপে করে বাড়ি ফেরে, ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় বসে থাকে— এটা কি কোনো উৎসবের প্রস্তুতির নমুনা?”
রবিউল ইসলাম নামের আরেকজন বলেন, “ঈদে বাড়ি ফেরা আনন্দের, কিন্তু এখন মনে হচ্ছে যুদ্ধ। অতিরিক্ত ভাড়া, বাস না পাওয়া আর কয়েক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকার পরও সামনে কোনো ভরসা নেই।”
যাত্রীদের অভিযোগ, টঙ্গী, গাজীপুর ও উত্তরা এলাকায় স্বল্প দূরত্বের যাত্রাতেও দ্বিগুণ ভাড়া নিচ্ছেন চালকরা। ময়মনসিংহগামী পিকআপে উঠতে অনেককে গুনতে হচ্ছে ৫০০ থেকে ১,০০০ টাকা।
আব্দুল হালিম নামে এক যাত্রী বলেন, “যেখানে বাসে ২০০ টাকায় যাওয়া যেত, এখন পিকআপে ৫০০-১০০০ টাকা নিচ্ছে। কিন্তু উপায় নেই, বাড়ি তো ফিরতেই হবে।”
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের এক ট্রাফিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, “সড়কে স্বাভাবিক সময়ের দ্বিগুণ যানবাহন চলছে। সবাই আজকেই ঢাকা ছাড়তে চাচ্ছে। এজন্য চাপও বেশি পড়েছে।”
যানজট, বাস সংকট, অতিরিক্ত ভাড়া ও প্রশাসনিক সমন্বয়হীনতা মিলে এবারের ঈদযাত্রা পরিণত হয়েছে দুর্ভোগে। যাত্রীদের দাবি, ঈদের মতো বড় উৎসব ঘিরে বারবার যেন এমন পরিস্থিতি না হয়— সে জন্য সরকার ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর আগেভাগেই পরিকল্পনা নেওয়া উচিত।
ইএইচ