মাগুরায় যমজ সন্তানের একজন ‘নিখোঁজ’: তদন্তে সেনা প্রতিনিধি দল

মাগুরা প্রতিনিধি প্রকাশিত: জুলাই ২, ২০২৫, ০৮:০১ পিএম

মাগুরার একটি বেসরকারি হাসপাতালে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে জন্ম নেওয়া যমজ সন্তানের একজন ‘নিখোঁজ’ হওয়ার অভিযোগে জেলাজুড়ে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে। 

বিষয়টি তদন্তে মঙ্গলবার দুপুরে পিয়ারলেস মেডিকেল সেন্টার পরিদর্শন করেন স্থানীয় সেনা ক্যাম্পের একটি প্রতিনিধি দল।

অভিযোগকারী পরিবারের দাবি, আরজিনা বেগম (২৫) নামের এক গর্ভবতী নারী গত ২৮ জুন পিয়ারলেস হাসপাতালে ভর্তি হন। পরে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে তিনি একটি পুত্রসন্তানের জন্ম দেন। তবে অপারেশনের আগে তিনটি পৃথক আল্ট্রাসনোগ্রাফি রিপোর্টে যমজ সন্তান রয়েছে বলে জানানো হয়।

আরজিনার ভাই ইমদাদুল মোল্যা বলেন, “১৮ এপ্রিল শান্তনু ডায়াগনস্টিকে, ২ জুন সাহিদা হাসপাতালে এবং সর্বশেষ ২৭ জুন পিয়ারলেসে আল্ট্রাসনোগ্রাফি করা হয়। প্রতিবারই যমজ সন্তানের বিষয়টি বলা হয়। কিন্তু অপারেশনের পর আমাদের একটি সন্তান দেওয়া হয়েছে। তাহলে অন্যটি কোথায় গেল? আল্ট্রাসনো রিপোর্ট অনুযায়ী দুই শিশুর ওজনও উল্লেখ ছিল।”

তিনি আরও জানান, “বিষয়টি জানতে চাইলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বারবার কথা ঘোরায়, কোনো সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা দেয় না। আমরা মাগুরা সদর থানা, সিভিল সার্জনের দপ্তর এবং সেনা ক্যাম্পে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। আমি আমাদের সন্তান ফেরত চাই এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।”

ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনায় সেনাবাহিনীর একটি দল হাসপাতালে সরেজমিন তদন্তে যায়। পাশাপাশি, মাগুরা সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকেও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

মাগুরার সিভিল সার্জন ডা. শামীম কবির বলেন, “ঘটনাটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। আমরা বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখছি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, চিকিৎসক ও পরিবারের বক্তব্য নেওয়া হচ্ছে। তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

ইমদাদুল মোল্যা ২৯ জুন মাগুরা সদর থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। সদর থানার ওসি মো. আইয়ুব আলী জানান, “অভিযোগ পাওয়ার পর আমরা প্রাথমিক তদন্ত শুরু করেছি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ব্যাখ্যা চাওয়া হবে। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে।”

পিয়ারলেস হাসপাতালের এক প্রশাসনিক কর্মকর্তা জানান, “রোগীর গর্ভে একটি সন্তানই ছিল। চিকিৎসা প্রক্রিয়ায় কোনো গাফিলতি হয়নি। তদন্তেই বিষয়টি পরিষ্কার হবে।” তবে অভিযুক্ত চিকিৎসক ডা. অরুন কান্তি ঘোষের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি এবং তার পক্ষ থেকেও এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য আসেনি।

একজন স্থানীয় অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক বলেন, “একটি শিশু যদি হাসপাতাল থেকে নিখোঁজ হয়, তাহলে সাধারণ মানুষের চিকিৎসাব্যবস্থার ওপর আস্থা থাকবে কীভাবে?”

একজন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বলেন, “এটি গুরুতর অভিযোগ। তদন্তের মাধ্যমে সত্য উদঘাটন করে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।”

এই ঘটনা শুধু একটি পরিবারের নয়, পুরো দেশের বেসরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার প্রশ্নে একটি বড়সড় ইঙ্গিত হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন সবার দৃষ্টি তদন্ত প্রতিবেদন ও পরবর্তী পদক্ষেপের দিকে।

ইএইচ