চালকদের বিশ্রামাগার ও নিরাপদ পার্কিংয়ের দাবি নিয়ে মাগুরায় মতবিনিময় সভা

মিরাজ আহমেদ, মাগুরা প্রকাশিত: জুলাই ৪, ২০২৫, ০৩:৩১ পিএম

বাংলাদেশের জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে প্রতিদিন হাজারো পণ্যবাহী ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান চলাচল করছে। কিন্তু এসব যানবাহনের চালকদের জন্য নেই নির্ধারিত পার্কিং ব্যবস্থা, নেই শারীরিক বিশ্রামের কোনো সুযোগ। ফলে দীর্ঘ যাত্রার পর ক্লান্ত চালকরা রাস্তার পাশে, হাটবাজারের কোণে কিংবা ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে ঘুমিয়ে নিচ্ছেন, যা সড়ক দুর্ঘটনার ঝুঁকি আশঙ্কাজনক হারে বাড়িয়ে দিচ্ছে।

এই বাস্তবতা মাথায় রেখে বৃহস্পতিবার মাগুরা জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয় এক গুরুত্বপূর্ণ মতবিনিময় সভা। 

সভার মূল আলোচ্য বিষয় ছিল—পণ্যবাহী গাড়িচালকদের জন্য পার্কিং সুবিধাসম্পন্ন আধুনিক বিশ্রামাগার নির্মাণ এবং সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে করণীয়।

সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সম্মানিত যুগ্মসচিব মুহাম্মদ কামরুল হাসান। সভাপতিত্ব করেন মাগুরা জেলা প্রশাসক মো. অহিদুল ইসলাম।

প্রধান অতিথি বলেন, “একজন চালক ক্লান্ত হয়ে স্টিয়ারিংয়ে ঘুমিয়ে পড়লে, তা শুধু তার নিজের জীবন নয়, অন্য অনেকের জীবনকেও ঝুঁকির মুখে ফেলে দেয়। তাই সরকার চালকদের জন্য বিশ্রামাগার নির্মাণকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে।”

সভায় অংশ নেন জেলা পুলিশের কর্মকর্তারা, সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের প্রকৌশলী, পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধি, পণ্য পরিবহন কোম্পানির প্রতিনিধি এবং সংশ্লিষ্ট সরকারি-বেসরকারি সংস্থার কর্মকর্তারা।

বিভিন্ন পক্ষের আলোচনায় উঠে আসে চালকদের ক্লান্তি, বিশ্রামের অভাব, নিরাপদ পার্কিং স্পটের অপ্রতুলতা, চালকদের স্বাস্থ্যঝুঁকি এবং দুর্ঘটনার বাস্তব চিত্র। অনেকেই অভিযোগ করেন, পণ্যবাহী যান চলাচলের নির্ধারিত রুট নেই এবং পর্যাপ্ত ট্রাক স্ট্যান্ড না থাকায় চালকদের আবাসিক এলাকাগুলোর ধারে-ধারে গাড়ি থামাতে হয়। এতে জনদুর্ভোগ বাড়ার পাশাপাশি বাড়ছে চুরি, ছিনতাই এবং দুর্ঘটনার ঝুঁকিও।

মাগুরা ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের এক নেতা বলেন, “আমরা দিনের পর দিন সড়কে থাকি, কিন্তু শুয়ে বিশ্রাম নেওয়ার মতো একটি ঘরও পাই না। যেখানে ঘুমাই, সেখানেই হয়তো মৃত্যু অপেক্ষা করে থাকে।”

সভাপতি জেলা প্রশাসক মো. অহিদুল ইসলাম বলেন, “সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে চালকদের মানবিক দৃষ্টিতে দেখতে হবে। বিশ্রামাগার, পার্কিং ব্যবস্থা এবং সচেতনতামূলক কার্যক্রম এখন সময়ের দাবি। আমরা চাই, সংশ্লিষ্ট সব দপ্তর একসাথে কাজ করুক, শুধু সুপারিশ নয়, বাস্তবায়নও হোক।” তিনি সংশ্লিষ্ট দপ্তরসমূহকে দ্রুত বাস্তবধর্মী প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নের নির্দেশনা দেন।

সভায় চালকদের জন্য বিভিন্ন স্থানে পার্কিং সুবিধাসম্পন্ন বিশ্রামাগার নির্মাণ, রুটভিত্তিক ট্রাক স্ট্যান্ড স্থাপন, চালকদের জন্য স্বাস্থ্যসেবা ও মানসিক প্রশিক্ষণ অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব উঠে আসে। এছাড়া ট্রাক চালকদের মাঝে নিরাপদ চালনা বিষয়ক সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালুর সুপারিশও দেওয়া হয়।

একজন ক্লান্ত চালকের চোখের ঘুম পুরো জাতির জন্য হতে পারে ভয়াবহ দুর্ঘটনার কারণ। আর সেই ঘুম যদি হয় রাস্তার পাশে ঝুঁকিপূর্ণ জায়গায়, তবে তা হয়ে ওঠে নিছক অবহেলা। মাগুরার এই মতবিনিময় সভা কেবল আলোচনা না হয়ে যদি বাস্তবমুখী উদ্যোগে রূপ নেয়, তবে তা হতে পারে দেশের পরিবহন ব্যবস্থায় এক নতুন দৃষ্টান্ত।

এখন সময়, চালকদের জন্য বিশ্রামের ঘর নিশ্চিত করার, আর দেশের জন্য গড়ে তোলার একটি নিরাপদ সড়ক ব্যবস্থা।

ইএইচ